নাম তার সাকিব আল হাসান। বিশ্বজুড়ে মাতাচ্ছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো দেশের বাইরে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ে অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে পেলেন সিরিজ সেরার পুরস্কার। পুরো সিরিজে দুর্দান্ত ছিলেন সাকিব। শুধু ব্যাটে বা বলে নয়। অধিনায়ক হিসেবেও ছিলেন দায়িত্বশীল। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টি-২০ সিরিজের শিরোপা তুলে ধরা যেনো তারই ফল।
প্রথম ম্যাচে ব্যাট হাতে ১০ বলে চারটি চারের সাহায্যে করেন ১৯ রান। আর বল হাতে ২.১ ওভারে ২৭ রান দিয়ে ছিলেন উইকেট শূন্য। বৃষ্টি আইনে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে জ্বলে ওঠে সাকিবের ব্যাট। মাত্র ৩৮ বলে ৯টি চার আর একটি ছক্কায় করেন ৬০ রান। বল হাতেও দেখান দারুণ পারফরম্যান্স। ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান খরচায় তুলে নেন দুটি উইকেট। তবে সে ম্যাচে ৪৪ বলে ৭৪ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন তামিম ইকবাল। ১২ রানের জয়ে সে ম্যাচে সিরিজ সমতায় ফেরে বাংলাদেশ।
অঘোষিত ফাইনাল ম্যাচে সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ২২ বলে ২৪ রান। যেখানে ছিল দুইটি বাউন্ডারি। বল হাতে ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে একটি উইকেট নেন টাইগার অধিনায়ক। যদিও ম্যাচ সেরা হয়েছেন লিটন কুমার দাস। বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ১৯ রানে। ২-১ ব্যবধানে সিরিজও জিতে যায় টাইগাররা।
প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে একদিনের ক্রিকেটে ৪,০০০ রান করার গৌরব আছে সাকিবের। শুধু তাই নয়, টি-২০তে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০০০ রান আছে তার নামের পাশে। দ্বিতীয় অলরাউন্ডার হিসেবে টি-২০তে ১০০০ রান ও ৫০ উইকেট লাভ করেন৷ খেলে বেড়ান বিশ্বময়। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের নাম ছড়ায় বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে।
তার হাত ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বদলে গেছে একটু একটু করে অনেকটা। তিনিই যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পরিবর্তনের ধারক এমনটা স্বীকার করেন মাশরাফিও। তার ভাষায়, সাকিব বাংলাদেশের ক্রিকেটে নতুন একটা যুগ তৈরি করে দিয়েছে। ‘ও বাকিদের বিশ্বাস করতে শিখিয়েছে আমরাও পারি। ও একটা ধাক্কা দিয়ে ক্রিকেটারদের স্বপ্নের দৈর্ঘ্য অনেক বড় করে ফেলেছে।
২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি সাকিব প্রথমবারের মতো আইসিসি‘র ওডিআই অলরাউন্ডার তালিকার ১ নম্বরে উঠে আসেন। ক্যারিয়ারে আইসিসি ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার এবং আইসিসি টেস্ট প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ারের জন্য মনোনয়ন পান একই বছর। যদিও পুরস্কার ওঠেনি তার হাতে। তবে ঐ একই বছর শচীন টেন্ডুলকার, জ্যাক ক্যালিস, গৌতম গম্ভীরের মতো খেলোয়াড়কে পেছনে ফেলে জিতে নেন উইজডেন টেস্ট প্লেয়ার বর্ষসেরার পুরস্কার!
২০১১তে সাকিব সেরা টেস্ট অলরাউন্ডারের তালিকায়ও ১ নম্বরে উঠে আসেন। এছাড়া ২০০৯-২০১১ বিভিন্ন মেয়াদে সাকিব বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক হন। ২০১৭ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজা টি-২০ থেকে অবসর নিলে সাকিবের কাঁধে ওঠে এই ফরম্যাটের দায়িত্ব। বর্তমানে বাংলাদেশের টি-২০ এবং টেস্ট দলের অধিনায়কত্ব করছেন তিনি।
বিশ্বের অন্যতম অলরাউন্ডার হওয়ার ফলে বিশ্বময় তার চাহিদাও কম নয়। বিপিএল, আইপিএল, সিপিএল, পিএসএল, বিগব্যাশ, কাউন্টি খেলে বেড়ান তিনি। কলকাতা নাইট রাইডার্স, সানরাইজারস হায়দ্রাবাদ, ওর্চেস্টারশায়ার, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস, লিচেস্টারশায়ার, বার্বাডোজ ট্রাইডেন্ট, অ্যাডিলেড স্ট্রাইকার্স, জ্যামাইকা তালাওয়াস ও করাচি কিংসের মতো দলে খেলে বেড়ান তিনি।
একজন বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে ব্যাক্তিগত সর্বোচ্চ রান আছে সাকিবের (২১৭)। টি-২০ ফরম্যাটে একটি নির্দিষ্ট মাঠে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেয়ার রেকর্ড তার (মিরপুরের শেরে-ই-বাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ৭৬ টি)।
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকারি ৪র্থ বোলার তিনি। অন্য তিনজন হলেন ডেল স্টেইন, মুত্তিয়া মুরালিধরন এবং রঙ্গনা হেরাথ। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে তিনি ৩য় ক্রিকেটার যে একই ম্যাচে একটি সেঞ্চুরি এবং ১০টি উইকেট নিয়েছেন। এই লিস্টে অন্য দুজন হলেন কিংবদন্তি স্যার ইয়ান বোথাম এবং ইমরান খান।
টি-২০ ফরম্যাটে মাত্র দুজন খেলোয়াড়ের একজন সাকিব আল হাসান যার ঝুলিতে রয়েছে ৪০০০ রান এবং ৩০০ উইকেট। অন্যজন ডোয়েন ব্রাভো। ওডিআই ফরম্যাটে মাত্র ৫ জনের একজন যাদের রয়েছে ৫০০০ রান এবং ২৫০ উইকেট।
সাকিব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সব চেয়ে দ্রুততম অলরাউন্ডার হিসেবে ১০০০০ রান ও ৫০০ উইকেটের মালিক। সাকিব ছাড়া এই মাইলফলকটি অন্য যে দুজন ক্রিকেটার ছুঁয়েছেন তারা হলেন শহীদ আফ্রিদি ও জ্যাক ক্যালিস, যাদের প্রত্যেকেরই এই রেকর্ডটি করতে ৫০০’র বেশি ম্যাচ লেগেছিল, সেখানে সাকিবের লেগেছে মাত্র ৩০০ ম্যাচ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৮
এমকেএম/এমএমএস