স্বল্পভাষী মোস্তাফিজ যেন লজ্জায় সংকুচিত। চকিতেই সামলে নিয়ে বললেন, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জানতে চাইলাম, ঘটা করে পালন করছেন নাকি? সাদামাটা ভঙিমায় জানালেন, ‘না। বন্ধুরা একটি কেক নিয়ে এসেছে। সেটা কাটছি। কিছুক্ষণ পরেই ঘুমিয়ে পড়বো। কাল সকালে অনুশীলন আছে। ’ বুঝতে বাকি রইলো না এখনই বলবেন, ‘ভাই ফোন রাখি। ’
সেই সুযোগ না দিয়ে জানতে চাই, বিশেষ এই দিনে আপনার নিজের কী ইচ্ছে এবং ভক্তদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন? তিনি যে উত্তর দিলেন তা প্রত্যাশিতই ছিলো। বরাবরের মতো অনুচ্চাভিলাসী। ‘তেমন কোন ইচ্ছা নেই, কিছুই চাওয়ারও নেই। গত বছরটা যেমন গিয়েছে, সামনের বছরগুলোও তেমন গেলেই খুশি। আর ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলবো, আপনাদের ভালবাসা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। আপনারা দোয়া করবেন যেন সুস্থ থাকতে পারি এবং দেশের হয়ে আরো ভালো খেলা উপহার দিতে পারি। ’
পাঠকদের নিশ্চয়ই বুঝতে বাকি নেই, আজ (৬ সেপ্টেম্বর) মোস্তাফিজের জন্মদিন। ১৯৯৫ সালের এই দিনে সাতক্ষীরায় জন্মেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই বোলিং বিস্ময়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মোস্তাফিজের অভিষেক হয়েছিলো যুবরাজের মতো। এসেই বল হাতে কাটার ছুঁড়ে উইকেটের পসরা সাজিয়ে চমকে দিয়েছিলন ক্রিকেট বিশ্বকে। বিস্ময়কর বোলিংয়ে তিনিই হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘এক্স ফ্যাক্টর’।
তার অভিষেক টি টোয়েন্টি ম্যাচটি যেন আজও চোখে ভাসে। দিনটি ছিল ২০১৫ সালের ২৪ এপ্রিল। মিরপুরে সফরকারী পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের একমাত্র টি টোয়েন্টিতে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করেছিলেন ক্রিকেট বিশ্বের ত্রাস বুমবুম শহিদ আফ্রিদীকে। এখানেই থামেননি। ফিরিয়েছিলেন আরেক বিধ্বংসি ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিককেও। এবং তার অভাবনীয় এমন বোলিংয়ে দিন শেষে ম্যাচটি নিজেদের করে নিল লাল সবুজের দল।
ফিজের ওয়ানডে অভিষেক ছিলো আরও মহিমান্বিত। ওই বছরেরই ১৮ জুন, ভেন্যুও ওই মিরপুরের শের ই বাংলা। কাটার ভেলকিতে সফরকারী ভারতের ৫ ব্যাটসম্যানকে ক্রিজছাড়া করলেন। তাও যে সে কেউ নন; রোহিত শর্মা, আজিঙ্কা রাহানে ও সুরেশ রেইনার মতো টর্নেডো ব্যাটসম্যানদের। তাতে করে কাজও হলো বিস্তর। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে ৭৯ রানের জয়ের বর্নিল রঙে রাঙা হলো পুরো দেশ।
অভিষেকের পর পুরো সময়টা এমন উড়ন্তই কাটছিলো এই বাঁহাতি পেসারের। ক্রিকেট বিশ্বে এমন ব্যাটসম্যান খুব কমই খুঁজে পাওয়া যাবে যারা তার ভয়ে থরথর ছিলেন না। কিন্তু, হঠাৎই যেন সেই উড়ন্ত ছন্দের পতন। ক্যারিয়ারের এক বছর না পেরুতেই ইনজুরি পেয়ে বসলো তাকে।
যার শুরুটা হয়েছিলো ২০১৬ সালে আইপিএল খেলেতে গিয়ে। কিন্তু তখন মাথাচাড়া দিয়ে না উঠলেও উঠলো ওইবছরের জুলাইয়ে ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলতে গিয়ে। কাঁধে ব্যথা পেয়ে প্রথমবারের মতো বড় ধরনের ইনজুরিতে পড়েন এই কাটার স্পেশালিস্ট। অস্ত্রোপচার হওয়ায় চার মাসেরও বেশি সময় তাকে থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরে। ফলে ক্যারিয়ারের প্রথম বিপিএলে তার মাঠে নাম হয়নি। ডায়নামাইটসের ডাগ আউটেই তার সময় কেটেছে।
এরপর আরও তিনবার ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু দমে যাননি। বরং এখনও তার বোলিং তোপ অব্যাহত আছে এবং আগামিতেও থাকবে।
শুভ জন্মদিন মোস্তাফিজ!
বাংলাদেশ সময়: ০২০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৮
এইচএল/আরএ