ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

‘ম্যাজিশিয়ান’ মোস্তাফিজ, মূল কৃতিত্ব রিয়াদ-কায়েসের

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮
‘ম্যাজিশিয়ান’ মোস্তাফিজ, মূল কৃতিত্ব রিয়াদ-কায়েসের মোস্তাফিজকে ঘিরে সতীর্থদের উদযাপন-ছবি: সংগৃহীত

ম্যাচের শেষ ওভারে পুঁজি মাত্র ৮ রান, অধিনায়ক মাশরাফি বল হাতে তুলে দিলেন স্লগ ওভারে বিগত কয়েক ম্যাচ ধরেই ভুগতে থাকা মোস্তাফিজের হাতে, ৪০-৫০ ওভারে বল করে যার রান খরচের হার ৬.২ করে। পেশিতে টান লাগায় স্বাভাবিক ইয়র্কারও ছুঁড়তে পারছিলেন না। তাছাড়া ক্রিজে থাকা দুই আফগান ব্যাটসম্যান তখন ম্যাচ প্রায় বেরই করে নিয়েছিলেন। এমতাবস্থায় এশিয়া কাপ থেকে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা দলকে কি দারুণ এক ওভার উপহার দিলেন মোস্তাফিজ! এটাকে ম্যাজিক না বলে উপায় কি। মাশরাফিও তাই বললেন, তবে ম্যাচের মূল নায়ক যে দুই ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ আর ইমরুল তাও মনে করিয়ে দিতে ভুললেন না অধিনায়ক।

আফগানিস্তানের ইনিংসের শেষ ওভারে মাত্র ৩ রান খরচ করে শ্বাসরুদ্ধকর এক জয় এনে দেওয়া মোস্তাফিজের প্রশংসা করতে গেলে স্তুতিবাক্যের শেষ হবে না। তবে জুতসই উপমাটা দিলেন ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি।

শেষ ওভারে অমন চাপের মুখে অসাধারণ বোলিং করে জয়ভাগ্য ছিনিয়ে আনা মোস্তাফিজকে ‘ম্যাজিশিয়ান’ উপাধি দিলেন বিপদের মুহূর্তে নিজেও গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেওয়া মাশরাফি।

ম্যাচ শেষের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে আগের দুই ম্যাচে বিধস্ত চেহারা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন মাশরাফি। তবে রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) তার মুখে চিন্তার ছাপ উধাও। তার স্থলে এক প্রত্যয়ী মুখশ্রী নিয়ে ম্যাশ বললেন, 'ম্যাচ শেষে, মোস্তাফিজ ছিল “ম্যাজিশিয়ান”। '

শেষ তিন ওভারে জয়ের জন্য আফগানদের দরকার ছিল ৩১ রান। দুই ওভারে ২৩ রান তুলে জয়ের পথে এক পা দিয়েই রেখেছিলেন আফগান ব্যাটসম্যানরা। তবে ৪৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ছক্কা হজম করেও ক্রমেই ম্যাচ বের করে নেওয়া ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নবীকে তুলে নিয়ে ম্যাচের গতিপথে পরিবর্তনটা আনেন সাকিব আল হাসান। এরপর শেষ তিন বলে ৪ রান খরচ করে মোস্তাফিজের হাতে ৭ রান সামলানোর দায়িত্ব তুলে দেন মাশরাফি।

শেষের নায়ক মোস্তাফিজশেষ ওভারে ক্রিজে ছিলেন আগের দেখায় বাংলাদেশকে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে বিধস্ত করা রশিদ খান ও ম্যাচের রশি নিজের হাতে তুলে নেওয়া শেনওয়ারি।  প্রথম দলেই রশিদ খান ২ রান নিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটভক্তদের হৃদয়ে মৃদু কম্পন ধরিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরের বলেই সুইংয়ে বিভ্রান্ত হয়ে বোলার মোস্তাফিজের হাতেই ক্যাচ তুলে দিয়ে মাশরাফিদের কিছুটা স্বস্তির কারণ হন রশিদ। বাকিটা পথ খুবই কৌশলী বোলিং করে পার করে দেন মোস্তাফিজ। অধিনায়ক মাশরাফির কণ্ঠেও শেষ দুই ওভারের দুই বোলার সাকিব-মোস্তাফিজের প্রশংসা।

'এর আগে অনেক ম্যাচে আমরা ৮—৯ দরকার ছিল, এমন অনেক ম্যাচ হেরেছি। তবে আজ আমরা পেরেছি। আমরা আশা ছাড়িনি। সাকিব শেষ তিনটা বল দুর্দান্ত করেছে। এরপর আমরা মোস্তাফিজকে বলেছি সে যেন উইকেট তুলে নেওয়ার দিকেই মনোযোগ দেয়। তাহলে ওদের মিস করার সম্ভাবনা থাকে। '

'মোস্তাফিজের পেশিতে হালকা টান পড়ছিল, আমরা ওকে দিয়ে ১০ ওভার বল করাতে চাইছিলাম, কিন্তু পারিনি। ও এমনকি ঊরুতে টান লাগায় ইয়র্কারও দিতে পারছিল না। '

তবে ম্যাচের আসল নায়ক তো মাহমুদউল্লাহ আর ইমরুল কায়েস। টপাটপ উইকেট ফেলে দিয়ে আবারও আফগান রূপকথার মঞ্চায়নের পথ তৈরি করে নিয়েছিলেন আফগান বোলাররা। তবে এতে তাদের বোলিংয়ের চেয়ে সাকিব-মুশফিকের রানআউটের ভূমিকাই ছিল বেশি।  

অমন এক পরিস্থিতিতে তীব্র গরমে ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়েও নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু নির্যাস ঢেলে দিয়ে এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান যেভাবে ম্যাচের গতিপথ পাল্টে দিলেন তা এক কথায় রূপকথা হয়ে থাকার মতো। তায় আবার গরম সহিষ্ণু জাতি আফগানদের স্পিনাররা বিশ্বসেরার তকমা পেয়ে গেছে এরইমধ্যে। রশিদ-মুজিবের স্পিন যেভাবে সামলেছেন এই দুজন তাতে বিশ্বাসই হতে চায়নি আগের দুই ম্যাচে এদের কাছেই বিধ্বস্ত হয়েছিল বাংলাদেশ।  

মাহমুদউল্লাহ-কায়েসের জুটিই জয়ের ভিত গড়ে দেয়৮৭ রানেই ৫ উইকেট হারানো দলকে কিভাবে টেনে তুলতে হয় তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। তার ৮১ বলে ৭৪ রানের ইনিংসটি মনে গেঁথে রাখার মতো এক ব্যাটিং প্রদর্শনী। আর দলে প্রায়ই ব্রাত্য হয়ে থাকা ইমরুল কায়েসের ব্যাটিং, সত্যি ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। একদিন আগে দলে ঢুকেছেন। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে সোজা বিদেশের মাটিতে জাতীয় দলে! আমিরাতের তীব্র গরমে কি খেলটাই না দেখালেন! ৮৯ বলে ৭২ রানের ইনিংসটি বাংলাদেশকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছে। কারণ ২১৫ রানে মাহমুদউল্লাহ বিদায় নেওয়ার পর বাকি পথটুকু তিনি একা হাতেই সামাল দিয়েছেন।  মাশরাফিও তাই ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব এই দুজনকেই ভাগ করে দিলেন।

'কিন্তু সবার আগে মূল কৃতিত্ব মাহমুদউল্লাহ আর ইমরুল কায়েসকে দিতে হবে। '

এবার সুপার ফোরের শেষ লড়াইয়ের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। এই ম্যাচে জয় পেলেই ফাইনাল। আর হারলে সেখান থেকেই বিদায়। তবে প্রত্যয়ী মাশরাফির উত্তর, 'আশা আছে, আমরা সেমিফাইনাল হয়ে ওঠা ম্যাচে মটকে দেব। '

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।