বিধ্বংসী ব্যাটিং, স্টাইলিশ লেগ স্পিন আর নায়কোচিত উদযাপন মিলিয়ে ক্রিকেটের এক কমপ্লিট প্যাকেজ বলা হয় আফ্রিদিকে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ওয়ানডেতে মাত্র ৩৭ বলে বিশ্ব কাঁপানো সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিজের আগমন বার্তা জানিয়ে দিয়েছিলেন।
অবিশ্বাস্য ক্যারিয়ারে বিশাল বিশাল ছক্কা হাঁকানোর জন্য আফ্রিদি সবার কাছে ‘বুমবুম’ নামে পরিচিত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রেকর্ড ৪৭৬টি ছক্কা হাঁকানোর কীর্তিও আছে তার ঝুলিতে। এছাড়া বল হাতে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট (৯৭) তুলে নেওয়ার রেকর্ডও তার।
দুর্দান্ত ক্যারিয়ারে ৩৯৮টি ওয়ানডে ম্যাচে ৮০৬৪ রান আর ৩৯৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন আফ্রিদি। পাকিস্তানের হয়ে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ৫২৩টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ডও আছে তার নামে।
ব্যাটসম্যান আফ্রিদির ভয়ডরহীন ব্যাটিং দৃষ্টিনন্দন হলেও এজন্য তাকে প্রায়ই ভুগতে হয়েছে। অতি আগ্রাসী ব্যাটিং করার কারণেই ৮০৬৪ রান নিয়েও তার ওয়ানডে ব্যাটিং গড় মাত্র ২৩.৫৭। ৬ সেঞ্চুরি আর ৩৮ ফিফটির ওয়ানডে ক্যারিয়ারকে তাই সাদামাটাই মনে হতে পারে।
আর টেস্ট ক্রিকেটে তার থিতু না হতে পারার কারণও এটাই। মাত্র ২৭ টেস্টের ক্যারিয়ারে মাত্র ৫ সেঞ্চুরি আর ৮ ফিফটি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাকে। আবার টি-টোয়েন্টিতে তার কার্যকারিতা অনেক বেশি। সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড ছাড়াও ব্যাট হাতে ৪টি ফিফটি আছে তার নামের পাশে। গড় যদিও মাত্র ১৮.০১। এছাড়া আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে ১০০০ রান ও ৫০-এর বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও তার দখলে।
কিন্তু আফ্রিদিকে শুধু ব্যাটিং দিয়ে মাপলে চলবে না। তার বোলিং হচ্ছে আসল শক্তির জায়গা। বোলার হিসেবে যেকোনো মুহূর্তে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য আছে তার। ৩৯৮ ওয়ানডেতে হাত ঘুরিয়ে ৩৯৫ উইকেট (৯ ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়ার কীর্তিও আছে) তার বোলিং সামর্থ্যকে ঠিক তুলে ধরতে সক্ষম নয়। স্পিন বোলার হলেও তার বলের গতি প্রায়ই ব্যাটসম্যানদের বিভ্রান্ত করে দেয়।
আফ্রিদির সবচেয়ে বড় কীর্তি পাকিস্তানের হয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতা। এছাড়া ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অভিষেক আসরে সিরিজ সেরা আর পরের আসরের ফাইনালে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন আফ্রিদি। দ্বিতীয় আসরে (২০০৯) তার দেশ পাকিস্তান প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পায়। সেবার সেমিফাইনাল আর ফাইনালে ফিফটি করেছিলেন তিনি।
২০১১ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আফ্রিদি। কিন্তু সেবার স্পট-ফিক্সিং কাণ্ডে দলের সেরা দুই বোলার মোহাম্মদ আসিফ ও মোহাম্মদ আমির এবং ওপেনার সালমান বাট নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ায় আসর মাঠে গড়ানোর আগেই দুর্বল হয়ে পড়ে পাকিস্তান। তারপরও সেবার সেমিফাইনাল পর্যন্ত যায় তারা, যেখানে ভারতের কাছে হেরে বিদায় নিতে হয়। তবে ২১ উইকেট নিয়ে ঠিকই নজর কাড়েন বোলার আফ্রিদি।
২০১৪ সালের এশিয়া কাপেও দুর্দান্ত খেলেন আফ্রিদি। সেবার বিধ্বংসী ব্যাটিং করে ৩৪ রান তুলে শেষ ওভারের রোমাঞ্চে ভারতকে বিদায় করে দেন তিনি। এরপর সাকিব-মুশফিকদের চোখে জল এনে দেওয়া সেই ম্যাচ। দ্বিতীয় দ্রুততম ফিফটি হাঁকিয়ে বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙেন, কান্নায় ভেঙে পড়েন সাকিব-মুশফিকরা। যা আজও এদেশের সমর্থকদের কাঁদায়। যদিও সেবার শিরোপা জেতে শ্রীলঙ্কা, তবু ওই ম্যাচে আফ্রিদির পারফরম্যান্স অনেকের চোখে লেগে আছে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েও ক্রিকেট ছাড়তে পারেননি আফ্রিদি। খেলে যাচ্ছেন ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট লিগ পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল), ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগ, বিগ ব্যাশ ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল)। বিপিএলের সদ্য সমাপ্ত আসরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে শিরোপা জেতার স্বাদও পেয়েছেন তিনি।
সবার প্রিয় ‘বুমবুম’ আফ্রিদির জন্মদিনে আইসিসি, পিসিবি থেকে শুরু করে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেক সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেট তারকারা।
আরও কিছুদিন তার ক্রিকেটীয় ঝলক দেখার অপেক্ষায়, শুভ জন্মদিন ‘বুমবুম’।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৯
এমএইচএম