মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বিকেলে ফেনী শহরের ডাক্তারপাড়ায় সাইফের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, আনন্দের আবহ। সবার দৃষ্টি টেলিভিশনের পর্দায় কখন সাইফের নামটি ঘোষণা হবে।
সাইফের মা বলেন, আমারে ছেলে সাইফ বিশ্বকাপ খেলছে, এটি আমাদের জন্য গর্বের, আমি ফেনীসহ সারাদেশের মানুষের কাছে দোয়া চাই। ছেলে যাতে দেশবাসীর মুখ সারাবিশ্বের কাছে উজ্জল করতে পারে।
সাইফের ছোটবেলার প্রশিক্ষক, বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড ফেনী জেলা ক্রিকেট কোচ রিয়াজ উদ্দিন রবিন বলেন, বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলে জায়গা করে নেওয়ায় শুভ কামনা রইলো সাইফের জন্য। আশা ছিল সাইফ বিশ্বকাপ দলে থাকবে, তারপরও যখন আনুষ্ঠানিকভাবে নাম জানলাম আনন্দ বেশি লেগেছিল। ফেনীর একমাত্র প্রতিনিধি জাতীয় দলে ও স্বপ্নের বিশ্বকাপ টিমেও, তাই আমাদের আনন্দ একটু বেশিই। ‘আমি সবসময় বলতাম তোকে বড় ফ্রেমে দেখতে চাই। আমার বিশ্বাস সাইফ তিন ফরমেটে ক্রিকেট খেলবে (ওয়ান ডে, টি-টুয়েন্টি, টেস্ট)। আমরা তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি, আমাদের স্বপ্নের বাস্তবায়ন করবে তুমি, তোমার কাছে আমাদের এটাই প্রত্যাশা। ’
‘ছোটবেলা থেকে আগ্রাসী ও পরিশ্রম দু’টোই তাকে এখানে নিয়ে গেছে। সাইফকে যেতে হবে অনেক দূর এবং জাতীয় দলে প্রতিনিধি করতে হবে অনেকদিন। দোয়া করি, সুস্থ থেকে বাংলাদেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে। সাইফ ফেনী ও বাংলাদেশের গর্ব। ’
সাইফ যে ক্লাবে খেলতো সেই ফ্রেন্ডশিপ ক্রিকেট ক্লাবের প্রেসিডিয়াম মেম্বার আরিফুল আমীন রিজভী বলেন, সাইফ বিশ্বকাপ খেলছে যেন ফেনীবাসী খেলছে। আমাদের আনন্দ বাঁধভাঙ্গা। একটি স্বপ্ন নিয়ে কাজ করেছে ফেনীর ক্রিকেট পরিবার, ফেনীর ক্রীড়াঙ্গন। খুব ছোট বয়সে ফ্রেন্ডশিপ ক্রিকেট ক্লাবে এসেছিল সাইফ। এখনো তার শৈশবের ছবি চোখে ভাসে। ভালো করুক, দেশের জন্য কিছু করুক। দেশ সেবার সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছে সে।
ক্রীড়া সংগঠক ও ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব ফেনীর সভাপতি ইমন উল হক বলেন, আমাদের ফেনীর গর্ব সাইফ বিশ্বকাপ ক্রিকেট দলে সুযোগ পেয়েছে, এটা ফেনী জেলার সব নাগরিকের জন্য অন্যরকম ভালো লাগা ও গর্বের বিষয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাইফের ক্রিকেটের হাতেখড়ি স্থানীয় ফেনী ফ্রেন্ডশিপ ক্রিকেট ক্লাবে। পরিবার থেকে মেলেনি সহযোগিতা, উল্টো সইতে হয়েছে বাধা। বাবা হারা বলে মা সাহস করেননি তার ছেলে খেলোয়াড় হোক। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক আর নেশায় সব বাধা জয় করে যখন ২০১০ সালে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার মঞ্চে উঠে যান, তখন আর আগলে রাখতে পারেননি মাও। বাংলানিউজের সঙ্গে ক্রিকেটে ঝুঁকে পড়ার গল্প বলছিলেন সাইফ। বলেন, ক্রিকেট শৈশব থেকেই খেলি। ২০০৫ সালে আশরাফুল ভাই যখন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শতক করেন তখন সেই আনন্দ-উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে যায়। সেই থেকে ক্রিকেটের পেছনে ছুটে চলা।
ফেনী শহরের শাহীন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক, জয়নাল হাজারী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ফেনী সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে অধ্যয়নরত সাইফ উদ্দিন।
ক্রিকেটে তার আনুষ্ঠানিক পথচলা ২০০৮ সালে ফেনী ফ্রেন্ডশিপ ক্রিকেট ক্লাবের মধ্য দিয়ে। এরপর ২০১০ সালে ফেনী জেলা দলের হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে (৫ ম্যাচে ২৭৮ রান) সর্বোচ্চ রান করে অনূর্ধ্ব-১৫ দলে স্থান করে নেন। একই বছর অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে একটি সিরিজে দুর্দান্ত খেলে (৪৫০ রান, ২৪ উইকেট) জেতেন ম্যান অব দ্য সিরিজ পুরস্কার। ২০১১ সালে সুযোগ পান অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলার। তার দু’বছরের মাথায় ২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে খেলার পর ডাক পড়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে।
তারপর থেকে সাইফ তরুণ টাইগারদের নিয়মিত ও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে জায়গা পোক্ত করে নেন। এই দলের হয়ে ২০১৪ সালে সফর করেন ইংল্যান্ড। তার পরের বছর সফর করেন শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে হোম সিরিজে ভালো করার পর সুযোগ হয় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে। মূলত ক্রিকেটপ্রেমীদের নজর কাড়েন বিশ্বকাপ খেলেই। এই আসরে বল হাতে ১৩ উইকেটের পাশাপাশি তুলে নেন ৭৫ রান। বিশেষত স্লগ ওভারে তার বোলিং নজর কাড়ে সবার। নজর কাড়ে ৭ নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নেমে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংও। সাইফ পরিচিত হয়ে ওঠেন সম্ভাবনাময় অলরাউন্ডার হিসেবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
এসএইচডি/আরবি/