ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

কঠিন ধাঁধার সহজ উত্তর মোসাদ্দেক!

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৬ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৯
কঠিন ধাঁধার সহজ উত্তর মোসাদ্দেক! মোসাদ্দেক হোসেন-ছবি: সংগৃহীত

সদ্য সমাপ্ত ত্রিদেশীয় সিরিজের আগে ইংলিশ কন্ডিশনে বাংলাদেশের ব্যাটিং কেমন হবে তা নিয়ে অনেকেই সংশয় পোষণ করতেন। বিশেষ করে তরুণ ব্যাটসম্যানদের অনেকের দলে অন্তর্ভুক্তি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু যেই সিরিজ শুরু হলো সব যেন ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল। শেষ পর্যন্ত সেই তরুণদের হাত ধরেই এলো প্রথমবারের মতো কোনো বহুজাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা।

সিরিজে বাকি দুই প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড পাত্তাই পেল না টাইগারদের দাপটের সামনে। আর এতে মূল ভূমিকা রাখলেন কিন্তু ওই তরুণ ব্যাটসম্যানরাই।

সৌম্য সরকারের তিন ম্যাচে তিন ফিফটি, এক ম্যাচে সুযোগ পেয়ে লিটন দাসের বাজিমাত আর শেষ ম্যাচে মোসাদ্দেকের রেকর্ড।

সৌম্য কিংবা লিটনের সামর্থ্যের কথা অজানা নয়। কিন্তু মোসাদ্দেক যেন সত্যিকার অর্থেই কাঁপিয়ে দিলেন। বৃষ্টি বাগড়ায় ২৪ ওভারে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়িয়েছিল ২১০ রানের পাহাড়। এই বিশাল টার্গেট অনায়াসেই সাত বল হাতে রেখে টপকেছে মাশরাফির দল।  এমন এক ম্যাচে চাপের মুখে খেলেছেন ২৪ বলে অপরাজিত ৫২ রানের ঝকঝকে একটি ইনিংস খেলছেন মোসাদ্দেক।

মোসাদ্দেক অর্ধশতক পূর্ণ করেছেন মাত্র ২০ বলে। তাও আবার ক্যারিবীয় স্পিনার ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের করা ইনিংসের ২২তম ওভারে ২৫ রান নিয়ে। মোহাম্মদ আশরাফুলকে টপকে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম ফিফটির মালিক এখন এই অলরাউন্ডার। অ্যালেনের ওই ওভারটিকেই পাখির চোখ করেছিলেন তিনি। ৩ ছক্কা আর ১ চার মেরে ম্যাচের মোড়ই ঘুরিয়ে দিয়েছেন।

মোসাদ্দেক জানতেন বড় শট খেলার মতো ব্যাটসম্যান ড্রেসিং রুমে অপেক্ষায় আছেন। কিন্তু তাদের ওপর ভরসা করা কঠিন। কেননা তারা কেউই প্রকৃত ব্যাটসম্যান নন। ফলে সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ আর তাকেই কাজ সেরে রাখতে হবে।

‘শেষ ৩ ওভারে যখন ২৭ রান দরকার, আমরা অ্যালেনের ওভার টার্গেট করি। ওই ওভারকে ব্যবহার করেই আমরা নিজেদের এগিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম। আমার পরে সাইফউদ্দিন, মিরাজ এবং মাশরাফি ভাই ছিলেন। মাশরাফি ভাই বড় শট খেলতে সক্ষম। কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত ব্যাট করতে চেয়েছি। ওই ওভার শেষেই সবাই বুঝে যায় আমরা কাজ সমাধা করে ফেলেছি। এটা ছিল টার্নিং পয়েন্ট। ’-ম্যাচ শেষে বললেন মোসাদ্দেক।

ঠিকই বলেছেন মোসাদ্দেক। তবে এই ম্যাচের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট তো তিনি নিজেই। বিশ্বকাপে চলে এলো বলে এবং সব দলই তাদের প্রস্তুতিটা সেরে রাখছে। বিশেষ করে স্বাগতিক ইংলিশরা যেভাবে পাকিস্তানের বিপক্ষে রান উৎসব করে যাচ্ছে তাতে এই জায়গাটায় একটা ঘাটতি তো ছিলই, বাংলাদেশের রান উৎসব হবে কীভাবে?

শুধু ইংল্যান্ড কেন, তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানও কোনো অংশে কম নয়। তারাও রান উৎসব করছে পাল্লা দিয়েই। তাছাড়া ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ কেউই রান উৎসবে কম যায় না। অথচ ২০১৫ সাল থেকে অনেকটা নিয়মিত জয়ের দেখা পাওয়া বাংলাদেশ ঠিক এ জায়গায় এখনও কিছুটা পিছিয়ে। লোয়ার মিডল-অর্ডারে বিগ-হিটার না থাকায় প্রায়ই দলের রান দারুণ শুরুর পরও ৩০০ পার হতে পারে না।

এর আগের ২১ ওয়ানডেতে মাত্র ১ ফিফটির দেখা পাওয়া মোসাদ্দেক যেন ঘুম ভেঙে জেগে উঠলেন। দলের ৭ নম্বর পজিশনটা এখন তার হাতে স্থায়ী হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। আগামী ২ জুনে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচে ওই পজিশনেই তার খেলার সম্ভাবনা বেশি।

বাংলাদেশের জন্য বড় স্বস্তি সৌম্য সরকারের রানে ফেরা। এই সিরিজে তিন ফিফটির দেখা পাওয়া সৌম্য প্রতি ম্যাচেই দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন। আর এখন মোসাদ্দেক নিজেকে বিগ-হিটার হিসেবে প্রমাণ করলেন। অথচ তার ছক্কা মারার এমন অসাধারণ সামর্থ্য এতদিন অনেকটা গোপনেই ছিল। তাও ভালো, ঠিক সময়ে তূণের তীরটা বের করেছেন। এখন দেখার বিষয়, বাংলাদেশ কি তাহলে ধাঁধার উত্তর পেয়েই গেল?

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৯
এমএইচএম/এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।