সেই কালেভদ্রে সুযোগ পাওয়াদের মধ্যে একজন ছিলেন জুবায়ের হোসেন লিখন। বাংলাদেশে যে কয়জন হাতেগোনা লেগ স্পিনার আছেন তিনি তাদের একজন।
জাতীয় দলের জার্সিতে খেলা 'সৌভাগ্যবান' লেগ স্পিনার লিখনের সঙ্গে কথা হলো বাংলানিউজের। দলের বাইরে ছিটকে যাওয়ার পর যাকে এখনও ফেরার লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। সেই লড়াইয়ের জন্য নিজের পরিকল্পনার কথা জানালেন, জানালেন কঠিন চ্যালেঞ্জের কথাও। ছোট আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৬টি টেস্ট, ৩টি ওয়ানডে ও ১টি টে-টায়েন্টি ম্যাচ। তবুও জাতীয় দলের খেলার স্বপ্ন এখনো দেখেন বলে জানালেন ২৪ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনার।
লিখনের সঙ্গে শুরুতেই কথা হলো বয়সভিত্তক ক্রিকেটে তার উত্থানের গল্প দিয়ে। সেসব স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘আমি বয়সভিত্তিক সব ক্রিকেট খেলে আসছি। অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয়, অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয়, অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে। অনূর্ধ্ব-১৯ এ যখন খেলেছি তখন আল্লাহর রহমতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলাম। অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭ খেলেছি সেখানেও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকার মধ্যেই ছিলাম। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। আমি যাদের সঙ্গে খেলেছি প্রায় সবাই এখন জাতীয় দলে খেলছে, শুধু আমি দলের বাইরে। যখন বয়সভিত্তিক ক্রিকেট খেলেছি তখন দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবসময় প্রথম সারিতেই থাকতাম, ডমিনেট করে খেলছি। তাই আমার কাছে তেমন একটা বাধা আসেনি। ’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও লিখনের শুরুটা বেশ ভালোই ছিল। দলের প্রয়োজনে ঠিকই কিন্তু উইকেট এনে দিয়েছেন, যেটা একজন লেগ স্পিনারের প্রধান কাজ। সেজন্য মুশফিকুর রহিমের প্রসংশাও পেয়েছেন। কিন্তু একসময় জাতীয় দলে অনিয়মিত হয়ে পড়েন তিনি। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও লিখনের খেলা হয় না নিয়মিত, যেটা প্রধান সমস্যা বলে মনে করেন তিনি।
লিখন বলেন, ‘জাতীয় দলে যখন পারফর্ম করেছি, তখন ঘরোয়া লিগে আমি নিয়মিত ছিলাম না। ঘরোয়া লিগটা আমার একদমই খেলা হয়নি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে যেমন সব জায়গায় খেলেছি, বিসিবি কিন্তু আমাকে রেখেছে। ঘরোয়া লিগটা যদি আমি ধরতে পারতাম, ভালো হতো। বাংলাদেশের যে কয়জন ট্যালেন্টেড লেগ স্পিনার রয়েছে তারাও ভালো করতো। আমরা কেউই কিন্তু ঘরোয়া লিগে নিয়মিত না। জাতীয় দলের আপনি ঠিকই খেলছেন কিন্তু ঘরোয়া লিগে খেলতে পারছেন না। জাতীয় দল কিন্তু শেখার জায়গা না। আপনার শেখার জায়গা হলো ঘরোয়া লিগ, জাতীয় দল হচ্ছে যা শিখেছি সেটা প্রয়োগ করার জায়গা। আমরা যদি ঘরোয়া লিগে সুযোগ পেতাম সেটা আমাদের জন্য আরো ভালো কাজে দিত, শুধু আমার জন্য না সবার জন্যই। ’
এই লেগ স্পিনারে কথায় কিন্তু যুক্তিও রয়েছে। শেন ওয়ার্ন কিংবা অনিল কুম্বলের ঘরোয়া ক্রিকেটের ক্যারিয়ারের দিকে তাকালে কিন্তু সেটাই দেখা যায়। তারা প্রচুর ম্যাচ খেলেছেন। ওয়ার্ন কিন্তু ৩০১টি প্রথম শ্রেনির ম্যাচ খেলেছেন। কুম্বলে খেলেছেন ২৪৪টি ম্যাচ। সেই দিক থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটে লিখন ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ২৪টি। সুযোগ না পেলে তো ভালো করার কোনো প্রশ্নই আসে না। তাই বেশি বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ চান তিনি।
২৪ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনার বলেন, ‘বিসিবি কিন্তু ভালো নিয়ম করেছে ন্যাশনাল লিগ হোক বিসিএল হোক, সব দলের একজন করে লেগ স্পিনার খেলাতে হবে। বিপিএলের নিয়ম করেছিলে, বিপিএলে দলে রেখেছিল কিন্তু খেলা হয়নি। এই নিয়মগুলো যদি সব জায়গাতে থাকে তবে শুধু আমি না, আপকামিং যারা লেগ স্পিনার রয়েছে তাদের জন্য ভালো। ঘরোয়া লিগে লেগ স্পিনার খেলানো যেতে পারে, কারণ এই জায়গাগুলো কিন্তু বিসিবি নিয়ন্ত্রণ করে। প্রিমিয়ার লিগে কিন্তু এটা সম্ভব না। কারণ প্রিমিয়ার লিগের দলগুলোর কিন্তু মালিকানা থাকে। আমি যদি ভালো করি তো খেলাবে, না হলে বাদ দেবে, টাকা দিয়ে কিন্তু টিম করে, তাই এটাই স্বাভাবিক। তবে বিসিবি কিন্তু উদ্যোগটা নিয়েছে যে জাতীয় লিগে লেগ স্পিনার খেলাতে হবে। এটা যদি সব সময় থাকে আমাদের জন্য খুবই ভালো হবে। না হলে কিন্তু লেগ স্পিনার বের হয়ে আসা অনেক কঠিন। ’
বাংলাদশ দলের স্পিন বোলিং কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরির সঙ্গে কাজ করতে চান লিখন। জানালেন, জাতীয় দলে না নিলেও অন্তত ক্যাম্পের সময় ডেকে ভেট্টোরির কাছ থেকে বোলিং টিপস যাতে পাওয়া যায় সেই ব্যবস্থা চাইলেই বিসিবি করে দিতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমিতো অনেকদিন ধরে জাতীয় দলের ক্যাম্পে নেই, তাই জাতীয় দলের স্পিন কোচের সঙ্গে কাজ করা হয়নি। এখন তো ভেট্টোরির মতো বড় মাপের স্পিন বোলিং কোচ রয়েছ, বোর্ড যদি কাজ করার সুযোগ দেয় তবে ভালো হতো। যেহেতু লেগ স্পিনার দরকার বাংলাদেশ দলে। আমি বলছি না যে এখনই আমাকে জাতীয় দলে খেলাতে হবে। যদি তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দেয় তা আমাদের জন্যই ভালো হবে। জাতীয় দলে না খেলাক, অন্তত যারা চার-পাঁচজন লেগ স্পিনার রয়েছে তাদের যদি ক্যাম্পের সময়ে ডাক দিয়ে ভেট্টোরির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিলে ভালো হতো। ’
তবে জাতীয় দলের খেলা আশা এখনও ছাড়েননি লিখন। মানসিকভাবে নিজেকে শক্ত রেখে এখানও জাতীয় দলে খেলার জন্য অনুশীলন করে যাচ্ছেন তিনি। রয়েছেন সুযোগের অপেক্ষায়।
লিখন বলেন, ‘আমি যদি মানসিকভাবে শক্ত না হতাম তাহলে আমার যে অবস্থা তাতে খেলাই ছেড়ে দিতাম। কোনো জায়গায় খেলতে পারছি না, জাতীয় দলে খেলার পরে আর কোনো ম্যাচে খেলতে পারছি না। এটা কিন্তু বড় একটা ধাক্কা। আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে কিন্তু অনেক আগেই খেলার আশায় ছেড়ে দিতো। আমি কিন্তু সেই আশা ছাড়িনি। এখনও স্বপ্ন দেখি যে জাতীয় দলে খেলব, সেভাবে কাজ করছি। ইনশাল্লাহ, পরিশ্রম করছি, যদি ন্যাশনাল টিমের খেলার সুযোগ আসে তো খেলব। যতদিন ক্রিকেটের সঙ্গে আছি হাল ছেড়ে দেব না, লেগে থাকব। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০২০
আরএআর/এমএইচএম