বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) শ্রীলঙ্কার ‘সিরাসা টিভি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই বিস্ফোরক দাবি করেন সাবেক লঙ্কান ক্রীড়ামন্ত্রী মাহিন্দানান্দা আলুথগামাগে। ২০১১ বিশ্বকাপ চলাকালীন তিনি ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
আলুথগামাগে বলেন, ‘আমি আজ বলছি যে, ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনাল আমরা বেচে দিয়েছিলাম। এমনকি যখন আমি ক্রীড়ামন্ত্রী ছিলাম তখনও আমি এটা বিশ্বাস করতাম। ’
২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা আলুথগামাগে বর্তমানে দেশটির নবায়নযোগ্য শক্তি ও বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। ফলে তার কথা মোটেই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। তবে ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার সময় ফিক্সিংয়ের গোপন তথ্য ফাঁস করতে চাননি বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে, আমরা জিততে যাচ্ছিলাম, কিন্তু আমরা ম্যাচটি বেচে দিলাম। আমার মনে হয় এখন এটা নিয়ে কথা বলতে পারি। আমি খেলোয়াড়দের জড়াচ্ছি না, তবে কিন্তু অংশ অবশ্যই জড়িত ছিল। ’
সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রীর অভিযোগের ব্যাপারে মুখ খুলেছেন সাবেক অধিনায়ক মাহেলা জয়াবর্ধনে। ফাইনালে ৮৮ বলে ১০৩ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলা জয়াবর্ধনে বলেন, ‘দেশে কি নির্বাচন এসে গেছে নাকি? মনে হচ্ছে সার্কাস শুরু হয়ে গেছে। নাম এবং প্রমাণ?’
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ওই ফাইনালে ৬ উইকেটে হেরে যায় শ্রীলঙ্কা। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পায় ভারত। যদিও ম্যাচে কোনো প্রকার অবৈধ পথ অনুসরণের কথা অস্বীকার করে ভারতীয় দল।
মুম্বাইয়ের ওই ফাইনাল ম্যাচে ধারাভাষ্যকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রানাতুঙ্গা। তিনি নিজেই ওই হারের পেছনে ফিক্সিংয়ের হাত আছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা যখন হেরে গেলাম, এটা খুব পীড়াদায়ক ছিল এবং আমার কোনো সন্দেহ ছিল না। ২০১১ বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা দলের কী হয়েছিল তা জানতে অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। ’
রানাতুঙ্গা আরও বলেছিলেন, ‘আমি এখনই সব প্রকাশ করতে পারছি না, কিন্তু একদিন আমি অবশ্যই করব। অবশ্যই তদন্ত হওয়া উচিত। ’ তিনি আরও দাবি করেছিলেন, খেলোয়াড়রা কিছুতেই ‘গ্লানি’ লুকিয়ে রাখতে পারবে না।
ওই ফাইনালে শুরুতে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৭৪ রান তুলেছিল শ্রীলঙ্কা। ভারতীয় কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকার যখন মাত্র ১৮ রানেই বিদায় নিলেন তখন বেশ ভালো অবস্থানে ছিল লঙ্কানরা। কিন্তু নাটকীয়ভাবে ম্যাচ ঘুরিয়ে ফেলে ভারত। বাজে বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের ফায়দা তুলে কুমার সাঙ্গাকারার নেতৃত্বাধীন দলকে হারিয়ে দেয় ধোনিবাহিনী।
শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে দুর্নীতি আর ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ বেশ পুরনো। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও লঙ্কানদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি গত মাসেই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড জানিয়েছে, দেশটির সাবেক তিন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে আইসিসি।
ম্যাচ পাতানোর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে ক্রিকেট জুয়াও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই লজ্জাজনক অবস্থান থেকে মুক্তি পাচ্ছে না দেশটি। সম্প্রতি দেশটির আরেক সাবেক ক্রীড়ামন্ত্রী হারিন ফার্নান্দো শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট উপর থেলে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতিতে নিমজ্জিত বলে দাবি করেছিলেন। আর শ্রীলঙ্কাকে ক্রিকেটীয় দিক বিবেচনায় সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ হিসেবে অভিহিত করেছে খোদ আইসিসি।
২০১৮ সালে ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়েছেন লঙ্কান ফাস্ট বোলার দিলহারা লকুহেত্তগে। এর আগে আইসিসি’র দুর্নীতিবিরোধী আইন অমান্য করায় শাস্তি পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক প্রধান নির্বাচক সনাথ জয়াসুরিয়া এবং সাবেক পেসার নুয়ান জয়সা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০২০
এমএইচএম