ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চবির সিন্ডিকেট নির্বাচন: বিভক্ত হলুদ দলে ধাক্কা

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১০ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৩
চবির সিন্ডিকেট নির্বাচন: বিভক্ত হলুদ দলে ধাক্কা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পর্ষদ সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের অধ্যাপক পদে তিন প্রার্থীর পাওয়া সর্বমোট ভোটের সংখ্যা ১৪৭টি। অপরদিকে বিএনপি জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন ৯১ ভোট পেয়ে।

অর্থাৎ হলুদ হলের চেয়ে ৫৬ ভোট পিছিয়ে থেকেও নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন সাদা দলের একমাত্র প্রার্থী। এ পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট হয়, বিভক্ত হলুদ দল যে ধাক্কাটি খেয়েছে, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ছক্কা মেরেছে সাদা দল।

দীর্ঘ পাঁচ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট নির্বাচনে চার শিক্ষক প্রতিনিধির মধ্যে সর্বোচ্চ অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে জয় লাভ করে এভাবেই চমকে দিয়েছে সাদা দল। নিজেদের বিভক্ত হওয়ার ফল এখন ভালোভাবেই অনুভব করছে দলটি।

সোমবার (০৬ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চবির সমাজবিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় সিন্ডিকেট নির্বাচন। ভোট গণনা শেষে বেলা ৩টার দিকে ফলাফল ঘোষণা করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার কেএম নুর আহমদ।  

অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছেন সাদা দলের একমাত্র প্রার্থী ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে নির্বাচিত হয়েছেন হলুদ দলের প্রার্থী  অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নঈম উদ্দিন হাছান আওরঙ্গজেব চৌধুরী। সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে হলুদ দলের প্রার্থী বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী এবং প্রভাষক ক্যাটাগরিতে হলুদ দলের প্রার্থী ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের প্রভাষক মো. মোয়াজ্জেম হোসাইন নির্বাচিত হয়েছেন।  

এদিকে সিন্ডিকেটের চারটি পদের বিপরীতে নির্বাচন করেছেন মোট ১৫ জন প্রার্থী। এর মধ্যে অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে পাঁচজন, সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে তিনজন, সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে পাঁচজন এবং প্রভাষক ক্যাটাগরিতে দু'জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ১৫ জনের মধ্যে ১২ জনই আওয়ামীপন্থি হলুদ দলের। যার ফলে দলের বিভাজনটাও স্পষ্ট।  

অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে কে কত ভোট পেলেন:
অধ্যাপক ক্যাটাগরিতে সর্বমোট ভোট কাস্ট হয়েছে ২৭৮টি। সাদা দলের প্রার্থী ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান পেয়েছেন ৯১ ভোট। জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের প্রার্থী ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক এসএম নসরুল কদির পেয়েছেন ৪০ ভোট।

হলুদ দলের তিন প্রার্থী ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ মামুন পেয়েছেন ৬৯ ভোট। লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী পেয়েছেন ৬৭ ভোট। রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন পেয়েছেন ১১ভোট।  

সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটাগরি:
এ ক্যাটাগরিতে ভোট কাস্ট হয়েছে ১৭৭টি। হলুদ দলের প্রার্থী- অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নঈম উদ্দিন হাছান আওরঙ্গজেব চৌধুরী পেয়েছেন ১০০ ভোট। ফিশারিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শহিদুল আলম পেয়েছেন ৬৬ ভোট।  

এছাড়া জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের প্রার্থী রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এজিএম নিয়াজ উদ্দিন পেয়েছেন ১১ ভোট।  

সহকারী অধ্যাপক ক্যাটাগরি:
এ ক্যাটাগরিতে ভোট কাস্ট হয়েছে ১৯৬টি। পাঁচ প্রার্থীর সবাই হলুদ দলের অনুসারী। বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী পেয়েছেন ৮৬ ভোট। লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইয়াকুব পেয়েছেন ৭৮ ভোট। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সরোয়ার আলম পেয়েছেন ১৯ ভোট। অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আফম ফজলে রাব্বি চৌধুরী পেয়েছেন ৮ ভোট। নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোক্তার আহমেদ চৌধুরী পেয়েছেন ৫ ভোট।  

প্রভাষক ক্যাটাগরি:
এ ক্যাটাগরিতে ভোট কাস্ট হয়েছে ৮৩টি। দুইজন প্রার্থীই হলুদ দলের অনুসারী। ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের প্রভাষক মো. মোয়াজ্জেম হোসাইন পেয়েছেন ৫৫ ভোট। অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ফাতেমা আক্তার হিরামনি পেয়েছেন ২৮ ভোট।

দীর্ঘদিন হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচন না হওয়ায় ফাটল সৃষ্টি হয়েছে দলের অভ্যন্তরে। বর্তমানে হলুদ দলের একটি পক্ষ প্রশাসনপন্থি এবং আরেকটি পক্ষ হলুদ দলের হয়ে নিজের অবস্থা পাকাপোক্ত করছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া শিক্ষক সমিতির নির্বাচনেও এ ফাটল দৃশ্যমান হয়।

গত ১ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে হলুদ দলের বর্তমান স্ট্যান্ডিং কমিটিকে অবৈধ ও স্বেচ্ছাচারী বলে ঘোষণা দিয়েছেন হলুদ দল সমর্থিত শিক্ষকদের একাংশ।  

এসময় তারা দীর্ঘদিন হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচন না দেয়া, সহকারী-সহযোগী অধ্যাপক ও প্রভাষক ক্যাটাগরিতে প্রতিনিধি না থাকা, ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসায় প্রশাসন ও বিজ্ঞান অনুষদের প্রতিনিধি না থাকাসহ আটটি অভিযোগ তুলেন। তাদের দাবি হলুদ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বর্তমান কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় এবং কতিপয় সদস্যের দলের গঠনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন না করে দীর্ঘদিন এ কমিটির দায়িত্বকে ধরে রেখে ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করা এবং ব্যক্তি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য দল পরিচালনা করে আসছে।  

তারা বলেন, স্ট্যান্ডিং কমিটির কিছু সদস্য দলের গঠনতন্ত্রের কোনো তোয়াক্কা না করে ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল থেকে দলকে জবরদখল করে কাজ করছে। স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সংখ্যা ১৫ জন হওয়ার কথা থাকলেও অবসর ও ছুটির কারণে বর্তমানে ৫ জন সদস্য নেই। এছাড়া সম্প্রতি আরও দুইজন শিক্ষক হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। এমনকি কমিটিতে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপক ক্যাটেগরীতে কোন প্রতিনিধি নেই। ইঞ্জিনিয়ারিং, ব্যবসায় প্রশাসন ও বিজ্ঞান অনুষদের কোনও প্রতিনিধি নেই। কিন্তু তথাকথিত স্ট্যান্ডিং কমিটির ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২৩
এমএ/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।