ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আদালতে মিতুর বাবা

বাবুলের অফিসে মিতু হত্যার সব পরিকল্পনা 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৪ ঘণ্টা, মে ২, ২০২৩
বাবুলের অফিসে মিতু হত্যার সব পরিকল্পনা  মিতু।

চট্টগ্রাম: সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার স্ত্রী মাহমুদা খানমকে হত্যার জন্য নিজের অফিসে সোর্স (তথ্যদাতা) কামরুল শিকদার প্রকাশ মুসাকে ডেকে মিতু হত্যার সব পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেন।

মঙ্গলবার ( ২ মে) বিকেলে তৃতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ জসীম উদ্দিনের আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় বাবুলের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন।

সাক্ষ্য শেষ হওয়ার পর আসামিপক্ষের আইনজীবী আংশিক জেরা করেন। আদালত জেরা মুলতবি রেখে আগামী ৮ মে পরবর্তী দিন ধার্য করেন।
গত ৯ এপ্রিল এই মামলায় মোশাররফ হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুর রশিদ বলেন, আজকের সাক্ষীতে কেন মিতু খুনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়, কীভাবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয় এবং হত্যা পরবর্তী সময়ে বাবুল আক্তারের চালচলন যাবতীয় বিষয় উঠে এসেছে। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বিকেলে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। সবমিলিয়ে দুই দফায় তার সাক্ষ্য শেষ হয়েছে। তাঁকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা শুরু করেছেন।  

আদালত সূত্র জানায়, সাক্ষ্যদানকালে মোশাররফ হোসেন আদালতকে বলেন, বাবুল আক্তার দুনিয়া থেকে মিতুকে বিদায় দেবেন ও হত্যা করবেন এই পরিকল্পনা কর‍তে থাকেন। বাবুল আক্তারের বাসায় সাদ্দাম নামে এক কনস্টেবল থাকতেন। সে মাহিরকে স্কুলের বাসে নিয়ে যেতেন ও নিয়ে আসতেন। বাসায় জঙ্গি হামলা হতে পারে, এরকম পৃথক রেজিস্ট্রার তার বাসার জন্য করতে বলা হয়েছে বাসার দারোয়ানকে। বাসার বিপরীতে একটি চায়ের দোকানে ছিল। মিতুকে হত্যার করার জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে চাকরি করার সময় বাবুল আক্তারের অফিসে সোর্স (তথ্যদাতা) মুসাকে ডেকে মিতুকে হত্যার সব পরিকল্পনা ও নির্দেশনা দেন। এছাড়াও নগরের মেট্রোপলিটন হাসপাতালের গলিতে মিতুকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। মুসা বাবুল আক্তারের সঙ্গে যৌথ অস্ত্র ক্রয় করার জন্য টাকা দাবি করে। তখন বাবুল আক্তার মুসাকে নগদ ৭০ হাজার টাকা দেয়।  

বাকি তিন লাখ টাকা তার বন্ধু সাইফুল ইসলাম তাকে দেবে বলে জানায়। মিশনে সুদান যাওয়ার আগে মুসাকে মিতুর ব্যাপারে সবকিছু নির্দেশনা ও বাসার আশপাশে রেকি করার নির্দেশ দিয়ে যান। মুসাকে তাকে হত্যার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়ে বলে যে, সে এই হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত এটা যাতে কেউ জানতে না পারে। বাবুল আক্তার ওইখানে থাকাবস্থায় দুই তিনবার বাসায় আসে। এ সময় সে বাসায় থাকেনি। যাওয়ার মুহূর্তে শেষ দুই তিন দিন বাসায় থেকেছে। আমরা জানতে পেরেছি ওই সময় আসামি মুসাকে মিতুকে হত্যার বিষয়ে কয়েকবার নির্দেশনা দিয়েছেন। বাবুল আক্তার ২০১৫ সালের অক্টোবরে দেশে চলে আসে। আসার পর পুনরায় আসামি মুসার সঙ্গে কথা হয়। ২০১৭ সালের মে মাসে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়েছে। ২০১৭ সালের ২৩ মে  ঢাকা পুলিশ সদর দপ্তরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। যাওয়ার পূর্বমুহূর্তে মুসাকে বলে যায়, আমি ঢাকা থাকাকালীন তুমি মিতুকে হত্যা করবে যাতে সন্দেহ করতে না পারে কেউ। এই সময় মিতুকে হত্যা করলে জঙ্গিদের দোষী করতে আমি এই হত্যা মামলার তদন্ত তদারকি করবো। বাবুল আক্তার চট্টগ্রামের বাসায় থাকাকালীন সুদানে চলে যাওয়ার সময় গায়ত্রী অমরসিং তার মোবাইলে ২৯টি মেসেজ দেয়। যা মিতু দেখে নিজ হাতে লিখে ফেলে। চার পাতায় লিখে রাখে। ২০১৫ সালে আমি পবিত্র মক্কা মদিনায় হজে ছিলাম। ওই সময় বাদ আসর আমি কাবাঘরের পাশে ছিলাম৷ ওই সময় বাবুল আক্তার মিশনে ছিল এবং গায়ত্রী মিতুকে কল দিয়ে হুমকি দেয় তাকে মে তে সরিয়ে দেওয়া হবে। কারণ মিতু তাদের নামে লোকজনের কাছে অপপ্রচার করেছে। বাবুল আক্তার  ২০১৬ সালের ৪ জুন পুলিশ সদর দপ্তরে যোগদান করেন। যোগদানের পরের দিন বাবুলের ষড়যন্ত্রে মুসা অন্য আসামিদের নিয়ে চট্টগ্রামেরে জিইসি মোড়ে সকালে সন্তানকে স্কুলের বাসে তুলে দেওয়ার সময় মিতুকে হত্যা করে।  

বাবুলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রেস মালিক সাইফুল তার স্টাফকে দিয়ে বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তিন লাখ টাকা মুসার সহযোগী মামুনের হাতে পৌঁছায় । মিতু ওই প্রেসের আংশিক মালিক। ওই টাকা মিতুর ব্যবসার লভ্যাংশ।  

সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হওয়ার পর বাবুলের আইনজীবীরা মোশাররফকে জেরা করেন। বাবুলের আইনজীবী মো. তৌহিদুল এহেছান বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে বাবুলকে এই মামলায় ফাঁসানোর জন্য সাক্ষ্যে অনেক কাহিনি সাজিয়েছেন তাঁর শ্বশুর। জেরায় এসব কাহিনি খণ্ডন করা হচ্ছে।

এদিকে শ্বশুরের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হওয়ার পর আদালতে আসামির কাঠগড়ায় থাকা বাবুল আদালতের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন, তাঁর মামলার ধার্য দিনে সাদা পোশাকধারী পিবিআই কর্মকর্তারা এখানে ঘোরাফেরা করেন। তাঁরা মামলার তথ্য নিতে এখানে আসেন। ওই সময় আদালত বলেন, মামলার সাক্ষী ছাড়া যে কেউ আদালতে আসতে পারেন। উন্মুক্ত এজলাসেও আসেন অনেকে নানা দাপ্তরিক কাজে।

আজ দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বাবুলকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই সময় তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তানও আসে। তারা বাবুলের সঙ্গে কথাও বলে।

গত ১৩ মার্চ  চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জসিম উদ্দিনের আদালত চার্জ গঠন করে বিচার শুরু আদেশ দেন।  মামলার নথি থেকে জানা যায়, গত ২০ ফেব্রুয়ারি আসামিদের আদালতে হাজির না করায় অভিযোগ গঠন পিছিয়েছিল। এর আগে ৩১ জানুয়ারি মিতু হত্যায় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. জেবুন্নেছা বেগমের আদালত বিচার শুরুর নির্দেশনা দিয়ে তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে নথি পাঠানোর নির্দেশ দেন। গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে মিতু হত্যা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারসহ ৭ জনকে আসামি করে আদালতে ২ হাজার ৮৪ পৃষ্ঠার চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই অভিযোগপত্র গত ১০ অক্টোবর গ্রহণ করেন আদালত। ২০১৬ সালের ৫ জুন নগরের জিইসি মোড় এলাকায় খুন হন মাহমুদা খানম মিতু।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৯০ ঘণ্টা, মে ০২, ২০২২ 
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।