ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দুর্নীতি দমন দুদকের একার কাজ নয়: ড. মোজাম্মেল 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৫ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২৩
দুর্নীতি দমন দুদকের একার কাজ নয়: ড. মোজাম্মেল  ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান বলেছেন, দুর্নীতি দমন দুদকের একার কাজ নয়। আমাদের জনবল আছে ১২শ।

আরও ১২শ নেওয়ার সুযোগ আছে। আড়াই হাজার কর্মী দিয়ে ১৭ কোটি মানুষের দুর্নীতি রোধ সম্ভব নয়।
তাই সবার সহযোগিতা দরকার।

সোমবার (২২ মে) সকালে বন্দরের শহীদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটোরিয়াম চত্বরে দুদক আয়োজিত সততা সংঘের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দুদক কমিশনার বলেন, দুর্নীতি দমন না করলে স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার সুযোগ নেই। বঙ্গবন্ধু কুমিল্লায় ক্যাডেটদের বলেছিলেন- দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে। তিনি জীবিত থাকলে বহু আগেই মধ্যম আয়ের দেশ হতাম আমরা। বঙ্গবন্ধু ফিরোজপুরে বলেছিলেন, কেউ দুর্নীতি করলে পোস্ট কার্ডে জানাবে আমি বিচার করবো।  

তিনি বলেন, সততা সংঘের এ কাজটি দুদক কেন করছে? শিশুমনে চিন্তার খোরাক দিতে চাই। সততা কঠিন কাজ হলে সেই কঠিনকে ভালোবাসতে হবে। কথায় আছে ত্রিশে বিদ্যা, চল্লিশে ধন। সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে হবে। বাচ্চারা জাগতে হবে। ছোট বয়সে ভালো কাজে অভ্যস্ত করাতে হবে। বাচ্চা ঘুষ খায় না, অন্যায় করে না। সন্তানেরা বাবা-মাকে সৎ আদর্শবান দেখতে চায়।  

‘উন্নত দেশে ঘর ভাড়া নিতে গেলে বেতন কত জানতে চাওয়া হয়। আমাদের দেশে বেতন পায় বিশ হাজার, ঘর ভাড়া পঁচিশ হাজার। সততার সংস্কৃতি চালু করতে হবে। আমরা শুধু কথাসর্বস্ব জাতি। আমাদের সুবক্তা প্রয়োজন। বক্তব্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা যেন না করি। প্রতিজ্ঞার দাম দিতে হবে। মিথ্যাবাদীকে চেনা যায়’।

বিশেষ অতিথি চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম সফিউল্লাহ বলেন, আমরা যারা পৃথিবীতে আছি সবাই সুন্দরভাবে বাঁচতে চাই। শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় রীতি-নীতি পালন করতে হবে, মা বাবাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে এবং মানবসেবা করতে হবে। সাফল্যের জন্য ছোটবেলা থেকে ধর্ম, সুস্বাস্থ্য, প্রকৃত শিক্ষা ও সততার চর্চা করতে হবে। বিবেককে প্রশ্ন করতে হবে- কোনটা ভালো? আমাদের বড় কাজ দেশকে ভালোবাসা।

অতিরিক্ত ডিআইজি প্রবীর কুমার রায় বলেন, সবাই মিলে গড়বো দেশ। দুদকের সততা সংঘ, সততা স্টোর চমৎকার উদ্যোগ। ভবিষ্যতে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে এটা সহায়ক হবে। প্রশ্ন ফাঁস একটি বড় দুর্নীতি। দুর্নীতির বাধা ভেঙে দিতে হবে।  

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ) মো. শহীদুল আলম বলেন, সততা সংঘের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সচেতন হবে এবং গণসচেতনতা তৈরি করবে। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে দুর্নীতি। বাবার আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে সন্তান প্রশ্ন করবে। মা-বাবার প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাদের বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানো যাবে না।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ফয়সাল মাহমুদ বলেন, শিক্ষার্থীরা জাতির ভবিষ্যৎ, কর্ণধার। অভ্যাস পরিবর্তন কঠিন কাজ। এ কাজ যারা করতে পারে তারা সফল হয়। সক্রেটিস বলেছিলেন-নিজেকে জানো। প্লেটো বলেছিলেন-নিজেকে জয় করো।  জীবননান্দ দাশের মা বলেছিলেন, আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে। আমি বলবো, রাত ১২টা পর্যন্ত পড়তে হবে। রাস্তায় ডান পাশে হাঁটতে হবে। তাহলে পেছনের গাড়ি ধাক্কা দেবে না। সামনের গাড়ি দেখতে পাবে।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ দুইটি কাজ করে দুদক। আমরা মনে করি, তরুণ প্রজন্মের হাত ধরেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে। আইন প্রয়োগ করে দুর্নীতি সহনীয় পর্যায়ে আনা সম্ভব নয়। সামাজিক আন্দোলন দরকার। তাই আমরা ২৭ হাজার ৬২৯টি সততা সংঘ করেছি। করোনার কারণে অনেক কাজ করতে পারিনি। অনেক সততা স্টোর চালু করা যায়নি। সততা স্টোর পূর্ণোদ্যমে চালু করা হচ্ছে।  

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, যেকোনো মূল্যে জয়ী হওয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। পরাজিত হওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। জীবনে শর্টকাট পথে সাফল্য আসে না। সৎ থাকতে পারা অত্যন্ত কঠিন বিষয়। সৎপথে চলা কঠিন। সেই কঠিনকে ভালোবাসতে হবে।

মহানগর দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তোমরা সৎ নাগরিক হয়ে দেশ পরিচালনা করবে। তোমরা আমাদের ভবিষ্যৎ। ছোটবেলায় মা আমাদের বাল্যশিক্ষা পড়াতেন। মা আমাদের সৎ থাকার শিক্ষা দিতেন। তোমরা পারবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন দিয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছিলেন। তোমরা বঙ্গবন্ধুর মতো স্বপ্ন দেখতে হবে। সুনাগরিক হয়ে এ দেশটার পরিচর্যা করবে। সততা সংঘের কার্যক্রম, সততা স্টোর পরিচালনার জন্য তোমাদের ধন্যবাদ জানাই।

সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ড. প্রকাশ কান্তি চৌধুরী। তিনি বলেন, সততা সংঘের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের সচেতন ও জাগ্রত করা। যে পরিবার শুদ্ধাচারী সেই পরিবারের সন্তানরা সুনাগরিক হয়। সততা স্টোরের মাধ্যমে সততার চর্চা হয়। তোমরা সমাজের পরিবর্তন করতে পারো। স্মার্ট বাংলাদেশের চাই স্মার্ট সিটিজেন।  

বক্তব্য দেন সততা সংঘের পরামর্শক মোস্তফা হাসান মজুমদার। স্বাগত বক্তব্য দেন দুদকের পরিচালক মো. মাহমুদ হাসান।

প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১১ জন শিক্ষার্থী নিয়ে সততা সংঘের কমিটি এবং পাঁচ শিক্ষক নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করা হয়েছে। রয়েছেন একজন পরামর্শক। স্কুলে রয়েছে বিক্রেতাবিহীন সততা স্টোর। সেখানে নিজেরা পণ্য বাছাই করে কিনে থাকে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২৩ 
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।