ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া, দ্বন্দ্ব থেকে খুন কাভার্ডভ্যান চালক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩২ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২৩
প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া, দ্বন্দ্ব থেকে খুন কাভার্ডভ্যান চালক ...

চট্টগ্রাম: নগরের ইপিজেড থানার নিউমুরিং এলাকার একটি ভবনের তালাবদ্ধ বাসা থেকে গত শনিবার (১ জুলাই) রাতে কাভার্ডভ্যান চালক আকরাম উল্লাহ (৪৩) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল। তিনি রোজিনা বেগম রোজী (২৩) নামে এক নারীর সঙ্গে ওই বাসায় থাকতেন।

রোজীর স্বামী সৌদি আরব প্রবাসী।

 এ ঘটনায় রোজিনাকে গত সোমবার (৩ জুলাই) খুলনা জেলার ফুলবাড়ি এলাকার বোনের বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্টো।

ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।  

এরপর জিজ্ঞাসাবাদে জট খুলে খুনের রহস্যের। পরকীয়ার জেরে এ ঘটনা ঘটে বলে স্বীকার করেছেন রোজিনা।  

রোজিনাকে আদালতে মাধ্যমে রিমান্ডে এনে দুদিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা কাভার্ডভ্যান চালক আকরাম উল্লাহ খুনের আদ্যোপান্ত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।

রোজিনা বেগম প্রকাশ রোজী, বাগেরহাট জেলার শরনখোলা থানার মালিয়া রাজাপুর এলাকার মোল্লা বাড়ীর কবীর মোল্লার স্ত্রী। আকরামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগে। সেখানে তার স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে। আকরাম খুনের ঘটনায় তার ছেলে একটি হত্যা মামলা করেছেন। সেই মামলায় রোজীকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে মাধ্যমে তিনদিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতার রোজিনা ও মৃত আকরাম দুজনেরই আলাদা সংসার আছে। রোজীনার স্বামী সৌদি আরবে থাকায় আকরামের সঙ্গে পরকীয়া জড়িয়ে পড়ে। আকরাম ও রোজীর স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন। গত ৩০ জুন বাসাটি ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল আকরামের। তবে গত ১ জুলাই নতুন ভাড়াটিয়া আসার পরও বাসা বুঝিয়ে না দেওয়ায় বাড়ির কেয়ারটেকার প্রতিবেশীদের নিয়ে তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে মরদেহ দেখে পুলিশকে খবর দেয়। গত ৩০ জুন রাতে আকরামকে খুন করার পর রোজীনা সকালে খুলনার বাসের টিকেট কাটেন। তারপর ঘরে থাকা রক্তমাখা ওড়না, তোয়ালে, আকরামের ব্যবহৃত গেঞ্জি কাছের একটি নালায় ফেলে দেন। এরপর  রাতে নগরের অলংকার থেকে খুলনার বাসে উঠে পড়েন।

তিনি আর বলেন, রোজীর মোবাইলে তার কিছু ব্যক্তিগত ছবি ছিল, যেগুলো সে তার সৌদি প্রবাসী স্বামীকে পাঠানোর জন্য তুলেছিল। গত ৩০ জুন রাতে আকরাম ছবিগুলো দেখে, জোর করে রোজীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় আকরাম তাদের সম্পর্কের কথা রোজীর স্বামীকে জানিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। এনিয়ে দুই জনের কথা কাটাকাটিতে আকরামের অণ্ডকোষ চেপে ধরে রোজিনা। এ সময় আকরামের নাক দিয়ে রক্ত চলে আসে। শরীর নিস্তেজ হয়ে যাওয়ায় আকরামকে গলায় রশি বেঁধে বাসার ছোট্ট ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে রোজিনা। না পেরে মরদেহটি খাটের নিচে রেখে দেয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই মেট্রোর  পরিদর্শক মাসুদ পারভেজ বাংলানিউজকে বলেন, রোজিনার সঙ্গে কবির মোল্লার ২০১৫ সালে বিয়ে হয়। তাদের ৫ বছরের একটি কন্যা সন্তান আছে। রোজিনা নগরে গার্মেন্টসে চাকুরি করতেন। তার স্বামী নগরের ইপিজেড থানার লেবার কলোনীতে চায়ের দোকান ছিল। দোকানে আকরামের সঙ্গে রোজিনার পরিচয়। করোনাকালীন সময়ে রোজিনার চাকরি চলে গেলে স্বামী ও সন্তানসহ গ্রামে চলে যায়। স্বামী গ্রামে কোন কাজের ব্যবস্থা করতে না পেরে সৌদি আরব চলে যায়। সে তার মেয়েকে বড় বোনের কাছে রেখে ২০২২ সালের রমজান মাসের আগে নগরের কলসীদিঘীর পাড় এলাকায় তার ভাই মিজানের বাসায় উঠে। পুনরায় গার্মেন্টসে চাকুরি নেয়। দেড় মাস পরে রোজিনা নিজে বাসা ভাড়া নেয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর নিচে চায়ের দোকানে আকরামের সঙ্গে তার দেখা ও কথাবার্তা হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী হয়৷ ২০২৩ সালের নগরের বন্দরটিলার টিইসি ভবনের পিছনে একটি পাঁচতলা ভবনের নিচ তলায় রুম ভাড়া নেয়। রোজিনা স্বামীর সঙ্গে  মাঝে মধ্যে বিদেশ থেকে ইমোতে কথা হতো।  

তিনি আরও বলেন, কাভার্ডভ্যান চালক আকরাম উল্লাহ হত্যা মামলার জড়িত রোজিনা বেগমকে গত ৩ জুলাই খুলনা নগরে বোনের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গত ৪ জুলাই রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে হাজির করা হলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আকরামকে হত্যার কথা স্বীকার করে বৃহস্পতিবার (আজ) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০২৩ 
এমআই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।