ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘সন্তানের কাঙ্ক্ষিত সফলতা দেখেছেন বাবা-মা’

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
‘সন্তানের কাঙ্ক্ষিত সফলতা দেখেছেন বাবা-মা’ ...

চট্টগ্রাম: ‘আমি যে গ্রাম থেকে উঠে এসেছি, সেখানে সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করার স্বপ্ন খুব কম পরিবারই দেখতো। কলেজ জীবন পর্যন্ত বিসিএস নামক শব্দের সাথে পরিচয়ই ছিল না।

অধ্যবসায়, কঠোর পরিশ্রমই ধারাবাহিকভাবে আমাকে আজকের এই জায়গায় নিয়ে এসেছে। পথচলায় পাশে ছিল বাবা-মা’র অকুন্ঠ সমর্থন, শিক্ষকদের সহযোগিতা’।

৪১তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে মেধা তালিকায় ৬০তম স্থান অর্জনকারী এস এম আমিরুল মোস্তফা (নয়ন) বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপচারিতায় এভাবেই শুরু করেন জীবনের গল্প।  

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার পূর্ব মেহেরনামা গ্রামে কেটেছে আমিরুলের শৈশব। কৈশোরে নানার বাড়িতে থেকেই চকরিয়া উপজেলার বহদ্দারকাটা উচ্চবিদ্যালয় হতে ২০১১ সালে এসএসসি পাস করে চট্টগ্রামের হাজেরা তজু কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে ২০১৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৩-১৪ সেশনে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং বিভাগে। নিয়ম অনুযায়ী, ২০১৭ সালে স্নাতক সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও সেশন জটের কারণে যথাসময়ে শেষ করতে পারেননি। তাই ৪১তম বিসিএসে অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করতে হয়। নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০২০ সালের মার্চ মাসে স্নাতক উত্তীর্ণ হন এবং কোভিড-১৯ লকডাউনের ধাক্কা সামলে ২০২২ সালের জুন মাসে স্নাতকোত্তর হন আমিরুল।  

তার ভাষ্যমতে, ‘সেশনজটের কারণে ৪১তম বিসিএসে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে অ্যাপিয়ার্ড হিসেবে আবেদন করতে হয়েছে। ২০২০ সালের করোনা মহামারি যেন বিভীষিকা রূপে হানা দিয়েছিল। বেকারত্বের কারণে অর্থনৈতিক চাপ যেমন ছিল, মানসিক আর সামাজিক চাপ মোকাবিলা যেন রীতিমতো দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে। চাকরির বিজ্ঞপ্তি আসছিলো না তখন, পরিচিতজনেরা জিজ্ঞেস করতো চাকরি করি না কেন? অনেকটা কোণঠাসা অবস্থা। তবে ক্লান্তি, অবসাদ, বিষন্নতা পাশ কাটিয়ে পড়াশোনার গতি আরও বাড়িয়ে দেই’।  

বিসিএস যাত্রার গল্প জানতে চাইলে আমিরুল বলেন, বিসিএস অনেকটা ম্যারাথন দৌড়ের মতো। প্রচণ্ড ধৈর্যশক্তি, ইতিবাচক মানসিকতা আর পরিশ্রমে সাফল্য অনিবার্য। আমি মূলত ৪০তম বিসিএসের প্রিলির জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, একাডেমিক কারণে তা পাইনি। ফলে ৪১তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতিতে আমি অনেক বেশি সময় পেয়েছি। বিসিএস রিটেনের জন্য গণিত, বিজ্ঞান এবং নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়াবলী পড়তাম। নিয়মিতভাবে ৫-৬ ঘন্টা করে পড়তাম। রিটেনের জন্য বিগত বছরের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে সিলেবাসের গুরুত্বপূর্ণ টপিক বাছাই করে পড়েছি। প্রিলির ফলাফল প্রকাশের পর পাওয়া ৫ থেকে ৬ মাস সময়ে নিয়ম করে পড়েছি। ভাইভা’র পড়াশোনার জন্য নিজেকে তৈরি করেছিলাম। এই দীর্ঘ ৪ বছরের যাত্রায় একাগ্রতার সাথে পড়াশোনার সাথে ছিলাম।  

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে নানারকম সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও দক্ষতা উন্নয়ন ক্লাবগুলোতে সংযুক্ত থাকা যেতে পারে। এই অভিজ্ঞতা বিসিএস ভাইভাতে খুব কনফিডেন্স দিবে।  

আমিরুল মোস্তফা বলেন, ফলাফল প্রকাশের সময় উদ্বেগ কাজ করছিলো। সকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফল প্রকাশের একটি গুঞ্জন উঠেছিলো। সে গুঞ্জন উত্তেজনাকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। ফলাফল হাতে পাওয়ার পর সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে রেজিস্ট্রেশন নাম্বার খুঁজতে শুরু করলাম। দেখলাম, আমার রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার শুরুর দিকেই আছে, তাও ৬০তম অবস্থানে। তখনও বিশ্বাস হচ্ছিলো না, মনে হচ্ছিলো মানসিক উৎকণ্ঠা-উদ্দীপনার কারণে আমার দৃষ্টিভ্রম হচ্ছে। কয়েকবার নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হলাম। মনে হচ্ছিলো, মাথা থেকে সব বোঝা নেমে গেলো, হালকা হয়ে গেলাম, কারণ আর বিসিএস পরীক্ষায় বসতে হবে না।

বাবা মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, বাবা-মা সারাজীবন আমাদের জন্য শ্রম দিয়েছেন। নিজেদের জন্য কিছুই করেননি। আমাদের সফলতা দেখতে চেয়েছেন। এর চাইতে বেশি সফলতা হয়তো জীবনে আসবে। কিন্তু সন্তানের জন্য ভেবে রাখা কাঙ্ক্ষিত সফলতা তাঁরা দেখেছেন, এটাই আমার আনন্দ।  

তিনি বলেন, আমার বাবা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। আমিও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকেই আদর্শ একজনই, আমার বাবা। বাবার সততা, সরলতা, নিষ্ঠা, মেধা-প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সাদাসিধে জীবন-দর্শন আমাকে বরাবরই মুগ্ধ করে। আগামি দিনে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের একজন কর্মকর্তা হিসেবে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত সরকারি সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নে নিজের সর্বোচ্চটা ঢেলে দিতে চাই।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
এমআর/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।