ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ছেলে ৩ লাখ, মেয়ে লাখ টাকা!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৫ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৪
ছেলে ৩ লাখ, মেয়ে লাখ টাকা! উদ্ধার হওয়া ২ শিশু

চট্টগ্রাম: গর্ভাবস্থায় স্বামী-স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নেন অনাগত সন্তানকে বিক্রি করবেন। গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাম করে জানতে পারেন যমজ সন্তান।

সেই অনুযায়ী সন্তানদের বিক্রি করার জন্য লোকও পেয়ে যান। নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে যমজ সন্তান জন্মদানের পরপরই ছেলে সন্তানকে ৩ লাখ আর কন্যা সন্তানকে এক লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন ওই দম্পতি।
হাসপাতালে ঝামেলা ছাড়াই সন্তানদের বিক্রি করলেও বিপত্তি বাধে টাকার ভাগাভাগি নিয়ে। সন্তান বিক্রির টাকায় স্বামীর ভাগ বসতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন স্ত্রী। পরে সন্তানদের চুরির অভিযোগ এনে চট্টগ্রামের মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন স্ত্রী। আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চট্টগ্রাম মেট্টো ইউনিটকে নির্দেশ দেয়। আর পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে এই দম্পত্তির সন্তান বিক্রির তথ্য।  

শনিবার (৮ জুন) চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার রাজানগর এলাকা ও নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিক্রি করা ওই দুই শিশুকে উদ্ধার করে পিবিআই।

চট্টগ্রাম মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ৩ জানুয়ারি নগরের পাঁচলাশের পলি হাসপাতালে বিলকিসের (ছদ্মনাম) যমজ সন্তান হয়। হাসপাতালের ডাক্তার ও বিলকিসের স্বামী মিলে তাঁর সন্তানদের (১ ছেলে ও ১ মেয়ে) অজ্ঞাতানামা মহিলাদের হাতে তুলে দেয়। আর বিলকিসের বড় মেয়ে ও ছেলে এসবের প্রতিবাদ করলে তাদের বাথরুমে আটকে রাখা হয়। পরে এসব বিষয়ে হাসপাতালের চিকিৎসককে জানালে নবজাতক দুইটি অসুস্থ থাকায় অন্য হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। পরে যমজ সন্তানদের না পেয়ে চট্টগ্রাম মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়।  

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা জানান, গর্ভে সন্তান রেখেই স্বামী-স্ত্রী মিলে অনাগত সন্তানকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। গর্ভাবস্থায় আলট্রাসনোগ্রাম করে জানতে পারেন যমজ সন্তান। জন্মদানের পরপরই ছেলে সন্তানকে ৩ লাখ আর কন্যা সন্তানকে ১ লাখে বিক্রি করেন স্বামী-স্ত্রী মিলেই।  

তিনি আরও জানান, মামলার বাদী বাবুর্চির সহকারী এবং বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর অনাগত যমজ সন্তানকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের সঙ্গে ঘটনাক্রমে সীতাকুণ্ডের রাশেদা বেগমের পরিচয় হয়। রাশেদা বেগম তাদের আশ্বস্ত করে, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলে পছন্দমত নবজাতক ছেলে-মেয়ে বিক্রি করে দিতে পারবে। পরে রাশেদা বেগম সন্তান নেওয়ার জন্য দুই নারীর সঙ্গে সন্তানসম্ভবা বিলকিসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। নবজাতক ছেলের বিনিময়ে শিরু আকতার ৩ লাখ টাকা এবং রুনা আকতার নবজাতক মেয়ের বিনিময়ে ১ লাখ টাকা রাশেদা বেগমকে দিতে রাজি হন। এছাড়াও প্রসবকালীন চিকিৎসা বাবদ অর্থ দিতেও রাজি হন তারা। রাশেদা বেগম মধ্যস্থতাকারী হিসেবে পান ১ লাখ টাকা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহেদুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, স্বামী-স্ত্রী মিলে স্ট্যাম্প করে যমজ সন্তানদের বিক্রি করেন। কিছুদিন পর বিক্রির টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা দাবি করেন স্বামী। কিন্তু ৫ হাজার টাকা না দিলে বাসা গিয়ে মারধর করে স্ত্রীর থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় স্বামী। এ ঘটনায় স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়ে মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন।  

তিনি আরও বলেন, শনিবার চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার রাজানগর এলাকা ও নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার অক্সিজেন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিক্রি করা যমজ দুই শিশুকে উদ্ধার করা হয়। তাদের রোববার (আজ) চট্টগ্রাম মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে চট্টগ্রামের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে দুই শিশুকে রাখার নির্দেশ দেন। আগামীকাল (সোমবার) ট্রাইব্যুনালে দুই শিশুর উপস্থিতি মামলাটির শুনানি হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২৪
এমআই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।