ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সাড়ে ৩ লাখ কাঁচা চামড়া কেনার প্রস্তুতি 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৪
সাড়ে ৩ লাখ কাঁচা চামড়া কেনার প্রস্তুতি  ফাইল ছবি।

চট্টগ্রাম: কোরবানির ঈদে সাড়ে ৩ লাখ কাঁচা চামড়া কেনার প্রস্তুতি নিয়েছেন চট্টগ্রামের কাঁচা চামড়া আড়তদাররা। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অনুরোধে স্থানীয়ভাবে এক থেকে দুই সপ্তাহ সংরক্ষণ করারও প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা।

কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ কেনা, চামড়াজাত করার জন্য গুদাম ভাড়া এবং শ্রমিক ঠিক করে সকল ধরনের প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতি।

সোমবার (১৭ জুন) বাংলাদেশে পবিত্র কোরবানির ঈদ হবে।

রেওয়াজ অনুযায়ী পরের দুইদিনও কিছু পশু কোরবানি চলবে। ওই সময় পাড়া-মহল্লা থেকে কাঁচা চামড়া কিনে বা সংগ্রহ করে মৌসুমী ক্রেতারা তা বিক্রি করবেন আড়তে। আড়ত সেই চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে ট্যানারিগুলোর কাছে বিক্রি করবে।

ঈদ সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম গতবারের চেয়ে ৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৩ টাকা বেড়েছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া কিনতে হবে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়; গত বছর এই দাম ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। ঢাকার বাইরে (চট্টগ্রামে) লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম হবে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গতবছর যা ৪৭ থেকে ৫২ টাকা ছিল।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম বাংলানিউজকে বলেন, গতবছর চট্টগ্রামে কোরবানির ঈদে প্রায় ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম আমরা। এর মধ্যে আড়াই লাখের বেশি ছিল গরুর চামড়া। এবার গরু–ছাগল–মহিষ মিলে সাড়ে ৩ লাখ চামড়া সংগ্রহের টার্গেট আছে আমাদের। এখন আমাদের লবণ ক্রয়, লোকবল ঠিক করা-গুদাম ঠিক করাসহ সার্বিক প্রস্তুতি চলছে।

তিনি বলেন, এবছর গরমের তীব্রতা আগের বছরগুলোর চেয়ে বেশি, যেটা চামড়া সংগ্রহের জন্য অনূকূলে নয়। চামড়া রেখে দিলে খুব তাড়াতাড়ি সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। তাই মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ থাকবে, চামড়া সংগ্রহ করার পর যাতে দ্রুত আড়তে নিয়ে আসে অথবা লবণ দিয়ে স্থানীয়ভাবে মজুদ করে রাখা হয়।

তিনি মৌসুমী ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলেন, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামটা সংরক্ষণের পরের দাম, যা অনেক কোরবানিদাতা কিংবা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বোঝেন না। তারা মনে করেন সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে আড়তদাররা চামড়া কিনবেন মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তাই তাদেরকে বেশি দামে চামড়া ক্রয় না করার অনুরোধ জানান তিনি।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর সাড়ে তিন থেকে চার লাখ চামড়া সংগ্রহ করলেও এক লাখ চামড়া নেয় চট্টগ্রামের রিফ লেদার ট্যানারি। বাকি চামড়া বিক্রি করতে ঢাকার ট্যানারির উপর নির্ভর করতে হয়। এবারও রিফ লেদার গত বছরের মত চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে এক লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশে পশুর চামড়ার যে চাহিদা, তার ৮০-৯০ শতাংশই পূরণ হয় কোরবানির ঈদে। ফলে এটাই চামড়া সংগ্রহের মৌসুম।

এর আগে গত ১২ জুন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ঈদুল আযহা উপলক্ষে জাতীয় সম্পদ কাঁচা চামড়া সংরক্ষণসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে কাঁচা চামড়া সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান।  

এসময় তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের অনেক সমস্যা আছে সেগুলো আমরা আস্তে আস্তে সমাধান করবো। আপনারা যদি চামড়া এক সপ্তাহ সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন তাহলে যথাযথ মূল্য পাবেন। রাতারাতি ঢাকায় পাঠিয়ে দিলে যথাযথ মূল্য পাবেন না। লবণ নিয়ে কোন টেনশন নেই। কম দামে লবন পাবেন আপনারা।

তিনি আরও বলেন, আমাদের জাতীয় সম্পদ চামড়া। এ সম্পদ যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।  জেলা ও মহানগরে চামড়া সংরক্ষণের জন্য ইমাম সমিতি, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে চামড়া সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা সভা করছেন। চামড়া অবশ্যই শেডের মধ্যে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রত্যেক উপজেলায় দুই থেকে তিনটা জায়গায় চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে। সে বিষয়ে আপনাদের গুরুত্ব দিতে হবে। খোলা জায়গায় কোনভাবে চামড়া সংরক্ষণ করা যাবে না। অবশ্যই শেডওয়ালা স্থানে চামড়া সংরক্ষণ করতে হবে।

বিসিক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-মহাপরিদর্শক নিজাম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ৬৩ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লবণ উৎপাদন হয়েছে। এবার ৭ সাড়ে হাজার মেট্রিক টন লবণ প্রয়োজন। সাড়ে ২১ হাজার লবণ মজুদ রয়েছে আমাদের। লবণের কোন সংকট নেই। চামড়া সংরক্ষণের জন্য আমরা গত বছর ২০ টন লবণ বিনামূল্যে সরবরাহ দিয়েছি। এ বছর ২৫ টন লবণ বিনামূল্যে দেবো।

লবণ মালিক সমিতির নেতারা বলেন, লবণের সংকট হবে না। তবে, সংরক্ষণের জায়গা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শহরের চামড়া সংরক্ষণ করতে হলে অবশ্যই আড়তদারদের এগিয়ে আসতে হবে। তারাই চামড়া সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত মানুষ। আড়তদার সমিতির একটাই অভিযোগ- সেটা হলো লবণের দাম বেশি। কিন্তু কোন বছরই লবণের দাম বেশি ছিল না। আপনারা ১২ টাকা করে লবণ পাবেন। এর বেশি হবে না। লবণ লাগবে বললেই আপনাদের দুয়ারে পৌঁছে যাবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৪ 
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।