ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ফল বিক্রেতা বাশার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ফল বিক্রেতা বাশার

চট্টগ্রাম: ভ্রাম্যমাণ ফল বিক্রেতা আবুল বাশার। নগরের বহদ্দারহাট মোড়ে আম বিক্রি করেন তিনি।

গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে বাশার দুই পক্ষের মাঝখানে পড়ে যান। এক পর্যায়ে দৌড়ে পালানোর সময় বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেই থেকে গুলিবিদ্ধ পায়ের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। দ্ররিদ্রতার অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না মা সৈয়দা বেগম।

তিনি বলেন, আমি আসরের নামাজ পড়ছিলাম। ওই সময় আমার মোবাইল বেজে ওঠে। এভাবে একটানা বেজে যাচ্ছিল। নামাজ শেষ করে ফোন ধরি। মোবাইল কানে দিতেই ছেলে বলে ওঠে- 'মা আমি মারা যাচ্ছি। আমি জিজ্ঞেস করি, তোর কি হইছে? বলে- আমি গুলি খেয়েছি তখন আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।

সোমবার (২৯ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে শয্যাশায়ী ছেলে আবুল বাশারের পাশে বসে এভাবেই সেদিনের লোমহর্ষক বর্ণনা দেন পঞ্চাশোর্ধ মা সৈয়দা বেগম। বাশারের পাশে তাঁর ১১ মাস বয়সী মেয়ে আনিশা ঘুমাচ্ছিল।

গুলিবিদ্ধ আবুল বাশারের দুই মেয়ে। তার সঙ্গে একই বাসায় থাকেন দুই অবিবাহিত বোনও। এক প্রকার পঙ্গু হয়ে যাওয়া আবুল বাশারের এখন সব দুশ্চিন্তা এখন পরিবারকে নিয়ে।

কথা বলতে গিয়ে দু চোখ বেয়ে পানি ঝরতে থাকে সৈয়দা বেগমের। শাড়ির আঁচল দিয়ে বারবার মুছছেন সেই বেদনার অশ্রু। কান্না দেখে গুলিবিদ্ধ ছেলে বাশার মাকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন।  

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দুই নাম্বার ওয়ার্ডের ৪০ নম্বর বেডে শুয়ে আছেন আবুল বাশার। মা সৈয়দা বেগমের পাশে বসে থাকা স্ত্রী খুকি বেগমের চোখেও ঘুম নেই। একদিকে স্বামীর দুরবস্থা, অন্যদিকে সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটাবেন-সেই দুশ্চিন্তা।

তিনি বলেন, আমার স্বামীর যে অবস্থা। ছোট ছোট দুইটা মেয়ে নিয়ে আমি কীভাবে চলবো। এই চিকিৎসার খরচ আমি কীভাবে চালাবো। টাকা থাকলে তো বেসরকারি মেডিকেলে নিয়ে ভালো চিকিৎসা করাতাম। এখন উনি ভালো হয় নাকি সেটি নিয়েই চিন্তায় আছি।  

আবুল বাশার বলেন, আমি একজন ফল বিক্রেতা। যখন যে ফল পাই সেটিই বিক্রি করি। ঘটনার দিন বহদ্দারহাট মোড়ের ভোলা কাউন্টার এলাকায় ভ্যানে করে আম বিক্রি করছিলাম। আমও প্রায় শেষেরদিকে ছিল। ভেবেছিলাম অল্প যা আছে তা বিক্রি করেই ঘরে ফিরব। কিন্তু এর মধ্যেই মানুষের ছোটাছুটি শুরু হয়ে যায়। গোলাগুলিও চলছিল। ভয়ে আমিও ভ্যান নিয়ে দৌড়াতে থাকি। হঠাৎ দেখি আমার বাম পা আর এগোচ্ছে না। আমি মাটিতে পড়ে যাই, ব্যথায় জ্বলতেছিল। তখন আমি চিৎকার করে বলতে থাকি, আমারে কেউ ধরেন। এসময় আমাকে কয়েকজন কোলে নিয়ে দৌড় দেন। কিন্তু কিছু পথ গিয়ে তারা আমাকে ফেলে দৌড় দেন। এরপর আমার পকেটে থাকা মোবাইলটি নিয়ে প্রথমে আমার মাকে ফোন দিই। এরপর এখানে (চট্টগ্রাম) আমার একটা মামা ছিল তাকেও ফোন দিই। এক পর্যায়ে কয়েকজন পথচারী ভাই আমাকে একটি রিকশায় তুলে দেন। পরে আরেকটি অটোরিকশা করে আহত একজনের সঙ্গে আমাকেও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আমার বাম পায়ের এক পাশ দিয়ে গুলি ঢুকে হাঁড় ফেটে অন্যপাশ দিয়ে বেশ হয়ে গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান বলেন, বাশারের পায়ে গুলি লেগেছিল। বেশ ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলি বের করা হয়েছে। চিকিৎসা চলছে। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪ 
বিই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।