ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ছেলে হারানোর 'ক্ষত' না শুকাতেই ভিটে হারানোর ভয়! 

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৪
ছেলে হারানোর 'ক্ষত' না শুকাতেই ভিটে হারানোর ভয়!  ...

চট্টগ্রাম: ১৮ জুলাই, বৃহস্পতিবার। চট্টগ্রাম নগরীর ব্যস্ততম এলাকা বহদ্দারহাট।

সেদিন আর সবার মতো কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেন তানভীর। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরকার দলীয় নেতাকর্মী আর পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
তখনই গুলি লাগে তার গায়ে। মুহূর্তেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। সঙ্গে অপমৃত্যু ঘটে একটি উজ্জ্বল স্বপ্নের।  

পুরো নাম তানভীর আহমেদ ছিদ্দিকী। ছিলেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। হতে চেয়েছিলেন একজন বিসিএস ক্যাডার। বাড়ি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নে।  

ছেলে হারানোর শোক এখনো কাটেনি বাবা-মায়ের। স্থির হতে পারছেন না কোনোভাবেই। এরমধ্যেই যোগ হয়েছে আরেক ভয়। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ এবং দেশত্যাগের পর স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী উৎফুল্ল ছাত্র-জনতার তাড়া খেয়ে গা-ঢাকা দেয়। এই অবস্থায় তানভীরের পরিবার ১৫ বছর পর পৈতৃক ভিটায় যান। সেখানে গেলে নানা ধরনের হুমকির শিকার হতে হয় তাদের। পরিবার ও স্বজনদের ঘরের নিরাপত্তা চেয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে আবেদন করেছেন তানভীরের বাবা বাদশা মিয়া।  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আরেফিন বাংলানিউজকে জানান, শহীদ তানভীর একটি নির্যাতিত পরিবারের সন্তান সেটি আমরা আগেই জেনেছি। তার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর স্বৈরাচার সরকার ১০ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিল বাবাকে। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমরা শহীদ তানভীরের পরিবারের পাশে আছি। তার পরিবারকে একটি ঘর করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। শিগগির আমরা তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবো।  

জানা যায়, ২০০৯ সালে স্থানীয় তারেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের নির্যাতন ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ফলে পৈতৃক ভিটা ছেড়ে আসতে বাধ্য হয় ‘খসরো গোষ্ঠী’র প্রায় ২০০ পরিবার। একই ঘটনায় বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয় কোটা সংস্কার আন্দোলনে মহেশখালীর একমাত্র শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর পরিবারকেও।  

তানভীরের বাবা বাদশা মিয়া বলেন, ১২ বছর আগে সন্ত্রাসীদের গডফাদার তারেক বিন উসমান শরীফ ও একটি রাজনৈতিক দলের স্থানীয় লোকজন প্রভাব খাটিয়ে ও লোভের বশবর্তী হয়ে আমাদের শতাধিক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে এলাকা ছাড়া করেছে। এ সময় তারা দখলে নেয় আমাদের বাপ-দাদা পুরো গোষ্ঠীর স্বজনদের কোটি কোটি টাকা মূল্যের কৃষি জমি, লবণ চাষের জমি, চিংড়ি প্রজেক্ট ও পুকুর। এতে আমরা দীর্ঘ দেড় যুগের কাছাকাছি অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবন-যাপন করছি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের তীব্রতা মহেশখালীতেও দৃশ্যমান ছিল। ফলশ্রুতিতে গত ৫ আগস্ট ২য় বিজয় দিবসের সূচনা হলে আমরা নিজ পৈতৃক ভূমিতে ঘর বাঁধতে গেলে দখলদার সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।

১৫ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার অনেকেই। এমতাবস্থায় পুনরায় এলাকা ছাড়া হওয়ার শঙ্কা নির্যাতিত এই গোষ্ঠীর হাজারো সদস্যের চোখেমুখে। তাই এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে তারা প্রশাসনের সু-নজর কামনা করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৪
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।