ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হাসপাতালে মরদেহ রেখে পলায়ন: স্বামীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২৪
হাসপাতালে মরদেহ রেখে পলায়ন: স্বামীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা ...

চট্টগ্রাম: অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ শাহনাজ কামরুন নাহারের (২৫) মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যাওয়া স্বামীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে নগরের পাঁচলাইশ থানায় বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন গৃহবধূর বড় ভাই শাহনেওয়াজ।

নিহত গৃহবধূর স্বামী মো. আল ফায়াদ চৌধুরীর (২৭) বাড়ি পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট এলাকায়।

নগরের কসমোপলিটন আবাসিক এলাকার ৫ নম্বর সড়কে কাইয়ুম রেসিডেন্সের চতুর্থ তলায় তারা থাকেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন— নিহত শাহনাজের শাশুড়ি চেমন আরা রফিক (৬৪), শাহনাজের স্বামীর বড় বোন তাসলিমা আফরোজ (৪৪) ও তার স্বামী মো. লোকমান (৪২), শাহনাজের স্বামীর মেজো বোন খাদিজা আফরোজ (৩৭), স্বামীর সেজো বোন তাহমিনা আফরোজ (৩২) এবং স্বামীর ছোট বোন নাজিফা সালসাবেন (৩০)।

নিহত গৃহবধূর বড় ভাই শাহনেওয়াজ এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার বোনের সঙ্গে আল ফায়াদ চৌধুরীর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এরপর থেকেই বিভিন্ন সময় তার স্বামী যৌতুক দাবি করতেন। ভুক্তভোগী শাহনাজ ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকায় অনাগত সন্তান ও নিজ ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তিনি সব নির্যাতন সহ্য করে সংসার করছিলেন। ধীরে ধীরে তার ওপর নির্যাতনের চাপ আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। গত ১৬ অক্টোবর রাত দেড়টার দিকে শাহনাজের শাশুড়ি ফোন করে বাদীর স্ত্রীকে জানান, তার বোন অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। বাদীর বিষয়টি জানতে পেরে ঢাকা থেকে বিবাদীদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কেউ রিসিভ করেননি।

বাদী তার স্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পারেন তার বোনকে চট্টগ্রামের বেসরকারি ন্যাশনাল হসপিটালে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই হাসপাতালে তাকে ভর্তি না করায় পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বাদীর বোনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন ‘লিগ্যাচার মার্ক অ্যারাউন্ড নেক’। এরপর তার বোনের মরদেহ সেখানে ফেলে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান বিবাদীরা। বাদীর ধারণা বিবাদীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং প্ররোচনার কারণে তার বোন সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

জানতে চাইলে মামলার বাদী শাহনেওয়াজ বলেন, বিয়ের পর থেকে ফ্রিজ, টিভি, আসবাবপত্রসহ নানা কিছু যৌতুক হিসেবে দিয়েছি। কিন্তু আমরা যেটাই দিই না কেন, তাদের তা পছন্দ হয় না। এগুলো নিয়ে সবসময় আমার বোনকে খোঁটা দেওয়া হতো। বিভিন্নরকম মানসিক নির্যাতন করা হতো। পান থেকে চুন খসলেই তার গায়ে হাত তুলতো। ঘরের ছোটখাটো কাজেও ভুল ধরে অত্যাচার করতো। আমার বোনের সঙ্গে ওইদিন রাত ১টা পর্যন্ত আমি নিজেই কথা বলেছি। এর আগে তার স্বামী আমাকে কল দিয়ে বিচার দিয়েছে। আমি বোনের সঙ্গে কথা বলার পর দেড়টার দিকে তার শাশুড়ি আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানিয়েছেন, সে অজ্ঞান হয়ে গেছে। এটা নিশ্চিত হত্যা!

মামলার বিষয়টি তদারকি করছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পাঁচলাইশ জোনের সহকারী কমিশনার মো. আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, মেয়েটা ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। তাকে তার স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজন নানাভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো বলে শুনেছি। যার দরুণ সে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। মূলত আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগেই মামলাটি করেছেন তার ভাই। আমরা ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তদন্ত চলমান রয়েছে।

আরও পড়ুন: হাসপাতালে গৃহবধূর মরদেহ রেখে স্বজনদের পলায়ন

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২৪
এমআই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।