চট্টগ্রাম: মাকে অনৈতিক কাজে জড়াতে বাধ্য করতে না পেরে তার ২১ মাস বয়সী অবুঝ ছেলেকে চুরি করে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছে সাজেদা বেগম সাজু নামে এক নারী। ঘটনার দুই মাস আটদিন পর ওই শিশুকে উদ্ধার করে মায়ের হাতে তুলে দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে বর্তমানে ২৩ মাস বয়সী কাউছার হোসেনকে বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যম শাকপুরা গ্রাম থেকে উদ্ধার করেন পিবিআই কর্মকর্তারা। তবে সাজেদা বেগম সাজুকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।
সন্ধ্যায় নগরীর খুলশীতে পিবিআই কার্যালয়ে শিশুটির মা জেসমিন আক্তার (১৯) বাংলানিউজের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন।
জেসমিন আক্তারের চার বছর আগে বিয়ে হয়। তার বাবার বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায়। শ্বশুর বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বিজবাগ গ্রামে। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলী কর্ণেলহাট এলাকায় থাকেন।
বিয়ের আগে জেসমিন বোয়ালখালীর শাকপুরা মিলিটারি পুল এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকুরি করতেন। সেসময় জেসমিন বোয়ালখালী পৌরসভার গোমদণ্ডীতে সাজেদা বেগম সাজুর বাসায় ভাড়া থাকতেন। বিয়ের পর অবশ্য চাকুরি ছেড়ে দেন।
গত অক্টোবরে সাজু নিজের অসুস্থতার কথা বলে জেসমিনকে তার বাসায় নিয়ে যায়। ১৫ অক্টোবর বিকেলে জেসমিন ওই বাসায় ঘুমাচ্ছিলেন। এসময় তার ছেলেকে সাজু চুরি করে নিয়ে যায়।
জেসমিন আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, ঘুম থেকে উঠে আমি ছেলের কথা জিজ্ঞেস করেছি। তখন সাজেদা বেগমসহ কয়েকজন মিলে আমাকে মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখে। সাজেদা বেগম আমাকে দিয়ে দেহ ব্যবসা করাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি রাজি না হওয়ায় আমার ছেলেকে সে চুরি করে বাইরে বিক্রি করে দেয়।
এ ঘটনার প্রায় এক মাস পর জেসমিন আক্তার তাদের জিম্মি থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ২৩ নভেম্বর জেসমিন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ একটি মামলা দায়ের করেন। ট্রাইব্যুনাল পিবিআইকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন।
পিবিআই’র চট্টগ্রামের পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরুর পর প্রথমেই আমরা শিশুটিকে উদ্ধারের পদক্ষেপ নিই। কারণ শিশুটি অবুঝ, কথা বলতে পারেনা। পরে সে আর মা-বাবাকে চিনতে পারবেনা। আমরা সাজেদা বেগমের পেছনে গুপ্তচর নিয়োগ করি এবং মোবাইল ট্র্যাকিং শুরু করি। এক পর্যায়ে শাকপুরা গ্রামে একটি বাড়িতে শিশুটির সন্ধান পাই।
‘সাজেদা বেগম শাকপুরায় এক নি:সন্তান দম্পতির কাছে শিশুটিকে দিয়েছিল। শিশুটির বাবা মারা গেছে বলে মিথ্যা কথা বলে তাদের দিয়েছিল। আমরা অভিযান চালাতে গেলে এক ছেলে শিশুটিকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল। এসময় জেসমিন ছেলেটিকে ঝাপটে ধরে ফেলে। পরে ছেলেটি শিশু কাউছারকে ফেলে পালিয়ে যায়। ’ বলেন পিবিআই পরিদর্শক।
ফারুক জানান, পিবিআই তদন্ত শুরুর পর সাজেদা বেগম আত্মগোপনে চলে গেছে। তাকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে বলে তিনি জানান।
দুই মাস আটদিন পর শিশু কাউছার মায়ের কোলে ফিরে গেছে। শিশুটিকে কোলে নিয়ে অনেকক্ষন কান্না করেন জেসমিন। পরম মমতায় শিশুটিকে বুকে চেপে ধরেন।
জেসমিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আল্লাহ আমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। আমি আজ অনেক খুশি। আমি পিবিআই কর্মকর্তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
আরডিজি/টিসি