ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

শেষদিনে জোরালো প্রচারণা, ভোট উৎসবের অপেক্ষা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
শেষদিনে জোরালো প্রচারণা, ভোট উৎসবের অপেক্ষা

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের দশ পৌরসভায় ভোটগ্রহণের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।   নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে গেছে ভোটগ্রহণের সরঞ্জাম।

  বিজিবি-পুলিশ ও র‌্যাবের সমন্বয়ে নিরাপত্তার প্রস্তুতিও সম্পন্ন হয়েছে।   এখন শুধু ভোট উৎসবের অপেক্ষায় আছেন পৌরসভার মানুষ।


এদিকে সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) মধ্যরাত থেকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা।   এজন্য শেষদিনের জোরালো প্রচারণায় সরগরম ছিল পৌর এলাকাগুলো।   ভোটারদের মনজয়ের প্রাণান্তকর চেষ্টায় দুয়ারে দুয়ারে গেছেন প্রার্থীরা।   বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া মোটামুটি এখনও পর্যন্ত মোটামুটি শান্তিপূর্ণই দেখা গেছে নির্বাচনী পরিবেশ।   তবে ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হবে কিনা তা নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে।

চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো.আব্দুল বাতেন বাংলানিউজকে বলেন, ভোটগ্রহণের জন্য আমরা প্রস্তুত বলতে পারেন।   পৌর এলাকায় নির্বাচনী সরঞ্জাম পৌঁছানো হয়েছে।   মঙ্গলবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে যাবে।   ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবেই হবে।

বিচ্ছিন্ন হামলা, সহিংসতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিটার্নিং অফিসার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যদি কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ করে তারাই ব্যবস্থা নেবে।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) কাজী আব্দুল আউয়াল বাংলানিউজকে বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি পৌর এলাকাগুলোতে টহল শুরু করেছে।   ভোটগ্রহণ যাতে সুষ্ঠু হয় সেজন্য পূর্ণ প্রস্তুতি আমাদের আছে।   র‌্যাবও আমাদের সঙ্গে থাকবে।

চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় মেয়র পদে ৩৪ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩৮ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।   মেয়র পদে সবচেয়ে বেশি ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সীতাকুণ্ডে।   এছাড়া মিরসরাইয়ে মেয়র পদে চারজন, বারইয়ারহাটে ৩ জন, সন্দ্বীপে ২ জন, রাউজানে ২ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৪ জন, পটিয়ায় ৪ জন, চন্দনাইশে ৪ জন, সাতকানিয়ায় ৩ জন ও বাঁশখালীতে ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

১০ পৌরসভা হচ্ছে, মিরসরাই, বারইয়ারহাট, সন্দ্বীপ, সীতাকুণ্ড, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া এবং বাঁশখালী।

শেষদিনের প্রচার-প্রচারণায় সাতকানিয়া ছাড়া চট্টগ্রামের আর কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।  

সাতকানিয়ায় বিএনপি দলীয় প্রার্থী হাজী রফিকুল আলম রোববার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।   তবে সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) আবারও নির্বাচনে ফেরার ঘোষণা দেন।   এরপর সাতকানিয়ায় প্রচারণা চালাতে গেলে রফিকুলের গাড়িতে হামলা হয়।   সাতকানিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ জোবায়ের এবং জাতীয় পার্টির মো.ইউছুপ গণসংযোগে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

সীতাকুণ্ডে প্রভাবশালী প্রার্থী অবসরপ্রাপ্ত নায়েক শফিউল আলম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর পর প্রচার-প্রচারণা সীমিত হয়ে গেছে।   তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদিউল আলম ও বিএনপির প্রার্থী আবুল মনসুর জোরালো প্রচারণা চালিয়েছেন।

পটিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী অধ্যাপক হারুনুর রশিদ, বিএনপির তৌহিদুল আলম চৌধুরী এবং জাতীয় পার্টির সামশুল আলম ‍মাষ্টার ভোটারদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।  

রাউজানে আওয়ামী লীগের দেবাশীষ পালিত এবং বিএনপির কাজী আবদুল্লাহ আল হাসানও শেষদিনে ভোটারদের দুয়ারে ‍দুয়ারে যাচ্ছেন।

একইভাবে বাকি পৌরসভাগুলোও শেষদিনের প্রচারণায় মুখরিত হয়ে আছে।  

এদিকে পৌরসভাগুলোতে রোববার রাত ১২টা থেকে মোটর সাইকেল চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।   জেলার ১০ পৌর এলাকায় ২৯ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) মধ্যরাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর (বুধবার) মধ্যরাত পর্যন্ত বেবি টেক্সি, অটোরিক্সা, ইজিবাইক, টেক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ সকল ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে।   এছাড়া ২৭ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা থেকে ৩১ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটর সাইকেল চলাচলের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

পৌর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ১৩ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় মাঠে নেমেছিলেন ১০ ম্যাজিস্ট্রেট।   তাদের সাথে রোববার থেকে নেমেছেন আরও ৩২ ম্যাজিস্ট্রেট। এ হিসেবে ভোটের সময় প্রতিটি পৌরসভায় দায়িত্ব পালন করবেন ৪ জনেরও বেশী ম্যাজিস্ট্রেট।   সবমিলিয়ে ১০ পৌরসভায় দায়িত্ব পালন করবেন ৪২ জন ম্যাজিস্ট্রেট।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৫ পৌরসভায় ২০৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ১ হাজার ২৪৩ জন সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও ২ হাজার ৪৬৮ জন পোলিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।   চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ৭ হাজার ২১৫ জন।   ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২০৯ টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ১২৩৪টি, অস্থায়ী ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ২টি, অস্থায়ী ভোটকক্ষের সংখ্যা ৫০টি।

এদিকে চট্টগ্রামের ১০ পৌরসভায় সোমবার থেকে কাজ করছে ১৩ প্লাটুন বিজিবি সদস্য।   এর মধ্যে সাতটি পৌরসভায় এক প্লাটুন করে এবং তিনটি পৌরসভায় দুই প্লাটুন করে বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।  

২৮ ব্যাটেলিয়ন বিজিবি’র কমাণ্ডিং অফিসার লে.কর্ণেল এমারত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মিরসরাই, সীতাকুণ্ড এবং বাঁশখালীতে আমাদের বাড়তি নিরাপত্তা থাকবে।   বাকি পৌরসভাগুলোতে আমরা টহলে থাকব।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) কাজী আব্দুল আউয়াল বাংলানিউজকে জানান, প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে ১০ জন পুলিশ ও ১০ জন আনসার সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মোট ২০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।   তিনটি কেন্দ্র মিলে থাকবে টহল টিম।   পাঁচটি কেন্দ্র মিলে থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্স।   থানায় স্ট্যান্ডবাই ফোর্সও রাখা হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৩ ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
আরডিজি/আইএসএ/টিসি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।