ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ফিরে দেখা ২০১৫

২২৩ দিনই ক্লাস হয়নি চবিতে

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
২২৩ দিনই ক্লাস হয়নি চবিতে ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধের কারণে ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পযর্ন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বিভাগ-ইনস্টিটিউটে ক্লাস বন্ধ ছিল। এই ৭৯দিন কার্যত অচল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়।



এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০টি বিভাগ-ইনস্টিটিউটের ৩০টি বর্ষের পরীক্ষার পূর্বনির্ধারিত তারিখ স্থগিত হয়ে যায়। ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষার শুরুতেই পড়েন আড়াইমাসের শিক্ষাজটে।

 
এ তো গেল অঘোষিত ছুটির হিসাব। এবার আসা যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ও সরকার ঘোষিত ছুটির হিসাবে।
 
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, রোজা, ঈদুল ফিতর ও বর্ষাকালীন ছুটি উপলক্ষে ১৬ জুন থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৪৬দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ ছিল। ঈদুল আজহার ছুটি উপলক্ষে ক্লাস বন্ধ ছিল ১৬ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ১৭ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত দূর্গাপুজার ছুটিতে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়।

১ নভেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। ফলে ১ থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়।

এসব ছুটির সঙ্গে পুরো বছরে ৫২দিন সাপ্তাহিক ছুটিতো (শুক্রবার) ছিলই। পাশাপাশি বছরজুড়ে ২৩ দিন সরকারি ছুটিও ছিল। এছাড়া বার্ষিক ক্রীড়া, দুই শিক্ষকের মৃত্যুসহ বেশ কয়েকটি কারণে আরও অন্তত চারদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ ছিল।   ফলে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছর ঘোষিত ছুটির কারণে ক্লাস হয়নি ১৬৪ দিন।   এর সঙ্গে অঘোষিত ছুটির ৭৯দিন যোগ করলে দেখা যায় এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির ফাঁদে পড়েছে ২৪৩দিন।
 
এই ঘোষিত ও অঘোষিত ছুটির মধ্যে প্রায় ২০দিনের মতো সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটিতেও পড়েছে। এই ২০দিন বাদ দিলে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি বছর ক্লাস হয়নি ২২৩দিনই। এটি গত এক যুগের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বনিম্ন কম ক্লাস হওয়ার রেকর্ড। তাই ২০১৫ সাল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দুঃসহের বছর, শিক্ষাজট বাড়ার বছর।

এদিকে বাড়তি ঘোষিত বন্ধের সঙ্গে অঘোষিত বন্ধ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ-ইনস্টিটিউটে নতুন করে শিক্ষাজটে পড়ছে, তেমনি আগে থেকে শিক্ষাজটের কবলে থাকা বিভাগ ও ইনস্টটিউিটগুলোতে শিক্ষাজট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বছরের শুরুর দিকে বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধের কারণে ৭৯ দিন ক্লাস না হওয়ায় ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। বছর শেষ হতে চললেও এখনও ওই বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়নি। আর স্বাভাবিক হিসেবে প্রথম বর্ষের পরীক্ষা কয়েকমাস দেরিতে শুরু হলে পরের বর্ষগুলোতেও সেই ধারাবাহিকতায় দেরিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।   ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার শুরুতেই আড়াইমাসের শিক্ষাজটে পড়ায় পুরো স্নাতক জীবন তাদের এই ক্ষতি বয়ে বেড়াতে হবে।

এ বিষয়ে বাংলানিউজের কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের। তারা বলেন, ‘এমনতিইে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে চলতি বছর প্রায় আড়াইমাস বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। এর সঙ্গে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ঘোষিত ছুটিতো ছিলই। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষাজট কমছে না বরং বাড়ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতাতো আমাদের দেশের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে।   তাই সেটি মাথায় রেখে ঘোষিত ছুটি কমাতে হবে। ’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. কামরুল হুদা বলেন, ‘রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যে ক্ষতিটা হয়েছে তা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষাজট নির্মুল করার বিষয়ে বৈঠক হয়েছে। আগামী বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘোষিত ছুটিও কমানো হচ্ছে।   আশা করছি ২০১৬ সালেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষাজট দূর হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৫
টিএইচ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।