ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ফিরে দেখা ২০১৫

আলোচনায় তেলের ড্রামে কোকেন, ভারতীয় রুপি

মো. মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
আলোচনায় তেলের ড্রামে কোকেন, ভারতীয় রুপি ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম/ফাইল ফটো

চট্টগ্রাম: দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় আনা বিভিন্ন ধরনের আমদানি পণ্য আটক করেছে কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দারা। তবে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল বলিভিয়া থেকে আসা সানফ্লাওয়ার তেলের সঙ্গে তরল কোকেন ও গৃহস্থালী পণ্যের সঙ্গে আসা ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধারের ঘটনা।

 

খান জাহাজ আলী লিমিটেড’র নামে আনা তেলের চালানটির রহস্য এখনো উদঘাটন হয়নি। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্ত করা হবে জানালেও এ বিষয়ে খুব বেশি অগ্রগতি নেই।
এছাড়া চালানটি আমদানির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় মূল আসামিকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিল পুলিশ। পরে আদালত সেটি গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তে র‌্যাবকে দায়িত্ব দেয়।

এদিকে চাঞ্চল্যকর কোকেন আমদানি মামলার অধিকতর তদন্ত নিয়ে সংকটে পড়েছে র‌্যাব। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোন কর্মকর্তা র‌্যাবের চট্টগ্রাম জোনে না থাকায় ২২ দিনেও মামলাটির তদন্ত শুরু হয়নি।

র‌্যাবের চূড়ান্ত রিপোর্ট না পাওয়ায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফরের গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ থমকে আছে বলে জানা গেছে। একই অবস্থা দুবাই থেকে আসা গৃহস্থালী পণ্যের সঙ্গে পাওয়া ২ কোটি ৭১ লাখ ভারতীয় জাল রুপি উদ্ধারের ঘটনার।

ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল আসামি পলাতক থাকার কারণে তদন্তে অগ্রগতি নেই বলে জানিয়েছেন গঠিত তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হোসেন আহমদ।   

তেলের ড্রামে তরল কোকেন:
উরুগুয়ের মন্টিভিডিও বন্দর থেকে সানফ্লাওয়ার তেলের চালানটি চলতি বছরের ৮মে চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌঁছায়। এ তেল উরুগুয়ের বন্দর থেকে জাহাজীকরণ হলেও তা এসেছে বলিভিয়া থেকে। একটি কনটেইনারে ১০৭ ড্রাম করে তেল আমদানি করা হয়। প্রতিটি ড্রামের ধারণক্ষমতা ১৮৫ কেজি।

গত ১২মে কনটেইনারটি বন্দর চত্বরে নামানো হয়। এরপর ৮জুন বন্দর চত্বরে তেলের নমুনা পরীক্ষা করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তখন মাদক শনাক্ত না হলেও উন্নত পরীক্ষার জন্য বিসিএসআইআর ও ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠানো হয়। ২৭ জুন শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর জানায়, কেমিক্যাল পরীক্ষায় একটি ড্রামে তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

২৮ জুন নগরীর বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওসমান গনি বাদি হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ এর ১(খ) ধারায় জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও সোহেলকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে পরবর্তীতে চোরাচালানের ধারায় আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছে। সেটি তদন্তাধীন আছে।

গত ১৯ নভেম্বর কোকেন আমদানি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারি কমিশনার (উত্তর) মো. কামরুজ্জামান চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে গ্রেফতার ছয়জনের সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত দু’জনসহ মোট ৮ জনকে আসামি করা হয়। তবে এজাহারে নাম থাকলেও কোকেনের চালানটি যে প্রতিষ্ঠানের নামে বন্দরে আনা হয়েছিল খান জাহান আলী লিমিটেড নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক নূর মোহাম্মদকে অভিযোপত্রে অব্যাহতি দেয়া হয়।

৭ ডিসেম্বর অভিযোগপত্রের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি হয়। এজাহারভুক্ত প্রধান আসামির নাম না থাকায় অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেননি আদালত। পরে আদালত অধিকতর তদন্তে র‌্যাবকে দায়িত্ব দেয়।

অভিযোগপত্রে যাদের আসামি করা হয় তারা হলেন, লন্ডনে অবস্থানরত বকুল মিয়া ও ফজলু মিয়া, আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেডের মালিকানাধীন প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা সোহেল, কসকো শিপিং লাইনের ম্যানেজার এ কে আজাদ, গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, সিকিউরিটিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মেহেদি আলম, সিএন্ডএফ কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এবং আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তফা কামাল। এদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম ১৮ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বাকি আসামিরা কারাগারে আছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বলিভিয়া থেকে আসা কোকেনসহ সানফ্লাওয়ার তেলবাহী কনটেইনারটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ইউরোপ বা উত্তর আমেরিকায় পাচারের চেষ্টা করা হয়েছিল। এর সঙ্গে কারা জড়িত তার প্রমাণও পেয়েছেন শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিকসহ কয়েকজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরকে ট্রানজিট রুট হিসেবে মাদক চোরাচালানিরা ব্যবহার করেছে বলে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।   

চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হোসাইন আহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, সানফ্লাওয়ার তেলের সঙ্গে কোকেন নিয়ে আসার সঙ্গে কারা জড়িত এবং কিভাবে সেটি বন্দরে এলো তা তদন্ত করে বের করা হবে।  

এছাড়া এ চালানটির শেষ গন্তব্য বাংলাদেশ, নাকি চট্টগ্রাম বন্দরকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে তৃতীয় কোন দেশে চালানটি পাঠানোর চেষ্টা হয়েছিল তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।

গৃহস্থালী পণ্যের চালানে রুপি: 
চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে দুবাই থেকে আসা একটি কনটেইনারে গৃহস্থালী পণ্যের সঙ্গে চারটি কার্টনে ২ কোটি ৭১ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ ভারতীয় জাল রুপি পাওয়া যায়।

হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা শাহেদুজ্জামান নামে এক দুবাই প্রবাসী চালানটি চট্টগ্রাম পাঠান। সেটি খালাসের দায়িত্বে ছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কালো তালিকাভুক্ত সিএন্ডএফ এজেন্ট ফ্ল্যাশ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।

এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ফ্ল্যাশ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানের এমডি আসাদউল্লাহ যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাজাকার মোবারক আলীর ছেলে।

কনটেইনার আটকের পরদিন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বিধান কুমার বড়ুয়া বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। এতে ছয়জনকে আসামি করা হয়। তারা হলেন- দুবাই থেকে আসা চালান খালাসের দায়িত্বে থাকা সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠান ফ্ল্যাশ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান শামীমুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসাদউল্লাহ, ব্যবসায়িক অংশীদার আহমদ উল্লাহ, কাস্টমস গোয়েন্দা বিভাগের টি বয় মোহাম্মদ ছাবের, চালানটির মালিক শাহেদুজ্জামান ও তার ছোট ভাই তৌহিদুল আলম।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এমইউ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।