চট্টগ্রাম : বাবার জন্য যেকোন কিছু ত্যাগ করতে পারেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দৈনিক পত্রিকা আজাদীর সম্পাদক এম এ মালেক। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক’কে, আমি সবসময় অনুসরণ করি।
নগরীর চেরাগী মোড় এলাকায় আধুনিক সুবিধা সম্বলিত সুপ্রভাত স্টুডিও হলের উদ্বোধন উপলক্ষে শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় ‘কাল সমকাল’ শিরোনামে আয়োজিত কথোপকথনে এম এ মালেক বলেন, আমার বাবা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের প্রতিষ্ঠিত দৈনিক আজাদী পত্রিকা ৪০ থেকে ৪৫ বছর আমি লোকসান দিয়ে চালিয়েছি। শুধুমাত্র বাবার প্রতিষ্ঠিত পত্রিকাটি বাঁচিয়ে রাখতে ব্যাংকে জমি দিয়ে টাকা নিয়েছি।
অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, লোকসান দিয়ে কেন পত্রিকা চালিয়েছেন? শুধুমাত্র বাবার প্রতিষ্ঠিত পত্রিকা যাতে বন্ধ না হয় এবং কেউ যাতে না বলে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম দৈনিকের প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক নেই, তাই বলে পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। এই কথাটি যাতে কেউ বলতে না পারে, সেজন্য লোকসান দিয়ে পত্রিকা চালিয়েছি। আমার কাছে পত্রিকার দায়িত্ব আসার পর থেকে মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন দিয়েছি।
১৯৮০-৯০ সালে শিল্পের যে পরিবর্তন হয়েছে তার সাথে আজাদী তাল মিলিয়ে চলেছে। সময় ও যুগের সাথে থেকে আজাদী এখন পাঠকপ্রিয়তার শীর্ষে। আমরাও পাঠকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমি মনে করি, যেটা আশা করবেন, সেটির পিছনে লেগে থাকলে সফলতা আসবেই। আমি লেগে ছিলাম বলেই আজাদীকে এ পর্যন্ত নিয়ে আসতে পেরেছি। এক্ষেত্রে পাঠকদের ভূমিকা রয়েছে।
আজাদী পত্রিকাটি ইতিহাসের একটি অংশ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হয়। সেই খবরটি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকা হিসেবে ছড়িয়ে দিয়েছে ‘আজাদী’। ওই সময়ে লাল কালিতে আজাদী ছাপা হয়েছিল।
কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন’র এক প্রশ্নের জবাবে এম এ মালেক বলেন, বস্তুনিষ্ঠ নয়, সত্যনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করতে আজাদী সবসময় সচেতন। কোন রাজনৈতিক চাপ আমার কাছে আসেনি। তবে বিজ্ঞাপনের বিষয়ে কিছু যে ছাড় দেইনি তা বলবো না। ছাপানোর উপযুক্ত, যেকোন সংবাদ ছাপিয়ে থাকি। হেডিং পরিবর্তন করে অথবা যেটি প্রথম ও শেষ পাতায় যাওয়ার সংবাদ, তা ভিতরের পাতায় হলেও ছাপিয়ে দেই। এক্ষেত্রে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে ছাপিয়েছি। ভাল রিপোর্টার হতে হলে অবশ্যই স্পটে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করা বাঞ্ছনীয়। নাহলে ভাল রিপোর্টার হওয়া সম্ভব নয়।
দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক রুশো মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন এবং সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুল হক।
কবি ও সাংবাদিক কামরুল হাসান বাদলের সঞ্চালনায় এ ব্যতিক্রমধর্মী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কবি ও সাংবাদিক অরুণ দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক হোসাইন কবির, কবি ও সাংবাদিক রাশেদ রউফ, সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, আজাদীর প্রধান প্রতিবেদক হাসান আকবর, কবি অভিক ওসমান প্রমুখ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
এসবি/টিসি