ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সরকারি আদেশ না মেনে কামিল মাদ্রাসায় চলছে ক্লাস

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১
সরকারি আদেশ না মেনে কামিল মাদ্রাসায় চলছে ক্লাস

চট্টগ্রাম: সরকারি আদেশ অমান্য করে করোনা মহামারিতে ক্লাস চালু করেছে নগরের চান্দগাঁও এলাকার আল আমিন বারীয়া কামিল মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মাদ্রাসাটিতে ক্লাস শুরু হয়।

সরকারি আদেশ অমান্য করে মহামারি করোনা ভাইরাসের মধ্যে ক্লাস চালু করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইসমাইলের একক সিদ্ধান্তে ক্লাস শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

 

গত ৩০ জানুয়ারি অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইসমাইল স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে ক্লাস শুরুর কথা জানানো হয়।  

নোটিশে জানানো হয়- এতদ্বারা আল আমিন বারীয়া কামিল মাদ্রাসার সম্মানিত শিক্ষক, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদেরকে জানানো যাচ্ছে যে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সোমবার পূর্ব রুটিন অনুযায়ী সকাল ৯টা থেকে ইবতেদায়ী শিশু থেকে দাখিল দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পাঠ প্রস্তুতিমূলক ক্লাস শুরু হবে। পরিচালকদের কাছ থেকে রুটিন যথাসময়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ক্লাসে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান করা হলো।

নগরের চান্দগাঁও এলাকায় অবস্থিত আল আমিন বারীয়া কামিল মাদ্রাসায় প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে বলে জানা গেছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে তাদের সবাইকে একসঙ্গে মাদ্রাসায় এনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।

মাদ্রাসাটিতে অধ্যয়নরত সপ্তম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, করোনার কারণে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও আমাদের মাদ্রাসায় ক্লাস হচ্ছে। গাদাগাদি করে প্রতিদিন ক্লাস করতে হচ্ছে।

দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বাবা বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু সবগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার তারমধ্যে এভাবে একগুয়েমি সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার ছিল না মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের। আমাদেরও দ্বিধা হচ্ছে সন্তানকে নিয়ে।  

তিনি বলেন, সে ঠিকমতো ক্লাস করতে যেতে চাচ্ছে না। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ক্লাস না করলে জরিমানা, রেজাল্ট খারাপ আসার কথা জানানোতে আমরা বাধ্য হয়ে সন্তানকে মাদ্রাসায় পাঠাচ্ছি। কিন্তু এটা ঝুঁকিপূর্ণ।

মাদ্রাসার একজন শিক্ষক বাংলানিউজকে বলেন, অধ্যক্ষ সরকারি নির্দেশ অমান্য করে ক্লাস শুরু করেছেন। তিনি কোনো শিক্ষকের পরামর্শ নেননি। আমরা কয়েকজন শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদ করলে অধ্যক্ষ সিদ্ধান্ত মোতাবেক দায়িত্ব পালন করতে বলেন। দায়িত্ব পালন না করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ইসমাইলের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় মাদ্রাসায় গিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে অনেক শিক্ষার্থীর মুখে মাস্ক ছিল না। পাশাপাশি মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে মাদ্রাসায় আসা অনেক অভিভাবককেও।  

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আ স ম জামশেদ খোন্দকার বাংলানিউজকে বলেন, মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কেউ এই নির্দেশনা অমান্য করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস চালু করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয় সরকার। এরপর থেকে কয়েক দফা বাড়িয়ে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২১
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।