ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পক্ষ নিয়ে বিচার করলে মানুষের আস্থা থাকে না: ডিসি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১
পক্ষ নিয়ে বিচার করলে মানুষের আস্থা থাকে না: ডিসি

চট্টগ্রাম: গ্রাম আদালতে বিচার কাজ পরিচালনার সময় সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। তিনি বলেছেন, বিচার ব্যবস্থা যখন কোনো একটি পক্ষের হয়ে কাজ করে, তখন সেই বিচার ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা থাকে না।

বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের সহযোগিতায় গ্রাম আদালত সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশগ্রহণে সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, ৪০, ৫০ বা ৬০ বছর আগে গ্রামের পঞ্চায়েত, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা মেম্বাররা বিচার করলে সবাই মাথা পেতে নিতেন।

এখন সেটা হচ্ছে না। এর দায় কিন্তু আমাদের। কারণ আমরা আমাদের গ্রহণযোগ্যতা এতো নিচে নামিয়ে ফেলেছি- বিচার করতে গেলে আমরা যে কোনো একটি পক্ষের হয়ে যাই।  

জেলা প্রশাসক বলেন, গ্রাম আদালতের বিচারকরা সরকারি কর্মকর্তা নন। স্থানীয় পর্যায়ের সর্বোচ্চ জনপ্রতিনিধি যিনি আছেন- সেই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং একটি প্যানেল এই আদালতের দায়িত্বে থাকেন। যারা জনপ্রতিনিধি তাদের জবাবদিহিতা কিন্তু বেশি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় জনগণের প্রতি তাদের দায়বদ্ধতাও অনেক বেশি।

তিনি বলেন, গ্রামগুলোতে ছোট ছোট বিরোধ নিষ্পত্তিতে এমনিই বিচার বসে। এটা প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয়। সরকার এই প্রতিষ্ঠিত বিষয়কে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। কারণ আগের অপরাধের ধরণ আর এখনকার অপরাধের ধরণ এক নয়। এখন আমাদের জেলা পর্যায়ের আদালতে বিচারপ্রত্যাশীদের যে ভিড়, এটা কিন্তু আগে কখনও ছিলো না।

মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, আপনারা যারা গ্রাম আদালতের এই সিস্টেমের মধ্যে আছেন- আপনাদের সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে বাস্তব পরিস্থিতি ও পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে বিচার কাজ করতে হবে। কারণ একটি ঘটনা যখন উচ্চ আদালতে উপস্থাপন হয়, তখন সেটা আইনজীবী বা স্বাক্ষীর জবানবন্দিতে অনেক সময় সম্পূর্ণরূপে উঠে আসে না। কিন্তু গ্রাম আদালতে সেই সুযোগ আছে।

জেলা প্রশাসক বলেন, গ্রাম আদালতকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আস্থার জায়গায় পরিণত করতে হবে। গ্রামের সহজ সরল মানুষ বিচার চাইতে এসে যেন হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে গ্রাম আদালতকে আরও বেশি ভূমিকা রাখতে হবে। গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে।  

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড.  বদিউল আলম। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গ্রাম আদালত হচ্ছে সরকারের বড় একটি ইনোভেশন। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নয়ন ও বিচারিক সেবা প্রাপ্তির অন্যতম মাধ্যম। উচ্চ আদালতের মামলার জট কমাতেও গ্রাম আদালত ভূমিকা রাখছে।

তিনি বলেন, গ্রাম আদালত আমাদের বিচার ব্যবস্থার একটি অংশ। এখানে বিচারপ্রার্থী এবং যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি মিলে বিচারক ঠিক করতে পারেন। কোনো আইনজীবীর দরকার হয় না। উভয় পক্ষ নিজেরাই তাদের বক্তব্য আদালতে তুলে ধরতে পারেন। এই কারণে গ্রাম আদালতের উপর মানুষের ভরসা বাড়ছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম জাকারিয়া বলেন, পৃথিবীর নানান দেশে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বা এডিআর একটি জনপ্রিয় ধারনা। বাংলাদেশে ছোট ছোট বিরোধ নিষ্পত্তিতে গ্রাম আদালত ভালো ভূমিকা রাখছে।

সভায় বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (২য় পর্যায়) প্রকল্পের অগ্রগতি ও বাস্থবায়নের তথ্যচিত্র পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট ফেসিলিটেটর উজ্জ্বল কুমার দাস চৌধুরী।  

তিনি জানান, দেশের ৮ বিভাগের ২৭টি জেলার ১২৮ উপজেলার ১ হাজার ৮০টি ইউনিয়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এসব ইউনিয়নে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির হার ৯৭ শতাংশ। চট্টগ্রাম জেলার ৫টি উপজেলায় ৪৬টি ইউনিয়নে এ প্রকল্পের আওতায় সাধারণ জনগণ সেবা পাচ্ছেন।

জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (স্থানীয় সরকার শা্খা) নূরজাহান আক্তার সাথীর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাধবী বড়ুয়া, জেলা তথ্য অফিসের উপ-পরিচালক সাঈদ হাসান, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক মোরশেদ আলম, জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম, জেলা শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হায়দার হেনরি, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহিদুল ইসলামসহ বিভিন্ন এনজিও সংস্থার প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২১
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।