ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

১৯টি ঔষধি উদ্ভিদের ডিএনএ বারকোডিং করলেন চবি’র গবেষকরা

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২১
১৯টি ঔষধি উদ্ভিদের ডিএনএ বারকোডিং করলেন চবি’র গবেষকরা ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক সম্প্রতি ১৯টি ভেষজ উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করে প্রতিটি নমুনার তিনটি জিনের জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করে ডিএনএ বারকোডিং সম্পন্ন করেছেন।  

বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ গবেষণা কর্মের বিষয়টি জানানো হয়।

গবেষণাকর্মটি চবি’র উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ইথনোবোটানি ও ফার্মাকোগনসি ল্যাব এবং চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকুলার বায়োলজি ল্যাবে সম্পন্ন হয়েছে।

গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন চবি উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ বখতিয়ার উদ্দীন, সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ মুশ্বান ও মো. শহিদুল হাসান শাকিল।

এ ছাড়া চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এএম জুনায়েদ সিদ্দিকী এ গবেষণাকর্মে সহযোগিতা করেন।  

ডিএনএ বারকোডিং হলো একটি নির্দিষ্ট  জিন থেকে ডিএনএ'র একটি ক্ষুদ্র অংশ ব্যবহার করে প্রজাতি শনাক্তকরণ পদ্ধতি। চবির গবেষণা ও প্রকাশনা দপ্তরের আর্থিক সহযোগিতায় ১৯টি উদ্ভিদের অধিকাংশেরই প্রথমবারের মতো বারকোডিং করা হয়েছে।

এ গবেষণার মূল লক্ষ্য বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের ডিএনএ বারকোডিং করে একটি ডাটাবেইজ তৈরি করা। যা উদ্ভিদের শনাক্তকরণ, পৃথককরণ এবং শ্রেণিবিন্যাস করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়াও বিপন্ন উদ্ভিদের তথ্য সংগ্রহ করার মাধ্যমে তাদের আধিক্য বাড়ানো ও সংরক্ষণে সাহায্য করবে।

বর্তমান বিশ্বে চিকিৎসাক্ষেত্রে ভেষজ উদ্ভিদের গুরুত্ব ও চাহিদা বেড়ে চলেছে। ভেষজ উপাদানের ভেজালীকরণ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা। গতানুগতিক পদ্ধতিতে ভেষজ উদ্ভিদ তথা যেকোনো উদ্ভিদের শনাক্তকরণ বেশ সময়সাপেক্ষ ও জটিল। এক্ষেত্রে একটি উদ্ভিদ শনাক্তকরণে গবেষকের দক্ষতা, প্রশিক্ষিত জনবল, উদ্ভিদের ফুল/ফল ধারণের সময় অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়। অন্যদিকে ভেষজ উদ্ভিদ সাধারণত প্রক্রিয়াজাত (শুকানো, গুঁড়া করা, ভাঙানো, পেস্ট তৈরি ইত্যাদি) করে সরবরাহ করা হয়। যেখানে শ্রেণিবিন্যাসতত্ত্ব অনুসরণ করে উদ্ভিদের শনাক্তকরণ অসম্ভব। আণুবীক্ষণিক, রাসায়নিক ও অন্যান্য পদ্ধতিতে ভেষজ  উদ্ভিদের শনাক্তকরণ বেশ জটিল ও ব্যয়বহুল। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মীর দক্ষতা ছাড়া ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।  

এ সমস্যার সমাধানকল্পে ডিএনএ বারকোডিং এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে যেকোনো স্থানে সহজে, খুব দ্রুত ও নির্ভুলভাবে ভেষজ উদ্ভিদ শনাক্তকরণ সম্ভব। এ পদ্ধতিতে উদ্ভিদের যেকোনো অংশ ব্যবহার করে শনাক্তকরণের মাধ্যমে সঠিক ভেষজ উদ্ভিদ চিহ্নিত করে ভেষজ উদ্ভিদের ভেজালীকরণ রোধ, মান নিশ্চিত করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উন্নত বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। ডিএনএ বারকোডিং ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভেষজ উদ্ভিদের প্রমাণীকরণ ও সম্পত্তি অধিকার নিশ্চিত করা যাবে।

এ গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্ভিদ নমুনা চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হাজারীখিল অভয়ারণ্য, চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এবং বান্দরবান সদর উপজেলার বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ১৯টি উদ্ভিদের অধিকাংশই এন্ডেমিক প্রজাতির এবং ইতোপূর্বে বাংলাদেশ থেকে এদের কোনো বারকোডিং করা হয়নি, যা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ডাটাবেজ থেকে ক্রসচেকের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে।

বারকোডকৃত ১৯টি উদ্ভিদ প্রজাতি হলো:  Mussaenda roxburghii (শিলছড়ি), Maesa indica (মরিচ্যা), Pouzolzia hirta (জলজি), Dalbergia volubilis (অংকিলতা), Homalomena aromatic (গন্ধবিকচু), Xylia dolabriformis (লৌহা কাঠ), Ludwigia adscendens (কেশরদাম), Tetrastigma leucostaphylum (হরিনা লতা), Byttneria pilosa (হাড়জোড়া লতা), Floscopa scandens (খাড়া গাইত), Firmiana colorata (হুর উদাল), Macaranga peltata (নাইন্ন্যা বিচি), Eranthemum pulchellum (সুখ মুরালী), Gardenia latifolia (পাপরা), Swintonia floribunda (সিভিট), Artocarpus lakoocha (ঢেওয়া), Premna esculenta (ললনা), Pilea melastomoides (মেলা মরিচ্যা) এবং Jasminum sp.( বন বেলী)। এদের প্রতিটির ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে।  

১৯টি উদ্ভিদ প্রজাতির ৩টি জিনের ৪১টি সিকোয়েন্স ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের ডাটাবেজের জিনব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। জমা দেওয়া অধিকাংশ সিকোয়েন্স ইতোমধ্যে সংরক্ষণের জন্য গৃহীত হয়েছে।

দ্য ইন্টারন্যাশনাল বারকোড অব লাইফ অ্যাসোসিয়েশনের মতে বিশ্বে ১০-১০০ মিলিয়ন প্রজাতি আছে কিন্তু শুধু বাহ্যিক ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে ২ মিলিয়নেরও কম প্রজাতি শনাক্ত ও এদের সম্পর্কে জানা গেছে। এত বিশাল প্রজাতি শনাক্ত করার জন্য দক্ষ জীববিজ্ঞানীর যেমন অভাব রয়েছে তেমনি সমগোত্রীয় উদ্ভিদগুলোর শুধু বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে সঠিক শনাক্তকরণ নিশ্চিত করা কঠিন। বাংলাদেশে ৫ হাজারের বেশি ভাস্কুলার উদ্ভিদ প্রজাতি রয়েছে এবং এদের মধ্যে প্রায় ১৫০০ ঔষধি উদ্ভিদ আছে। যা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ইথনোবোটানি ও ফার্মাকোগনসি ল্যাব থেকে প্রকাশিত দু’টি ডাটাবেইসে সংরক্ষিত আছে।  

প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯টি ঔষধি উদ্ভিদ দিয়ে এ গবেষণার সূচনা হলেও প্রয়োজনীয় আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা নিশ্চিত করা হলে পর্যায়ক্রমে ১৫০০ উদ্ভিদের ডিএনএ বারকোডিং করতে গবেষকরা প্রস্তুত।

গবেষকদের উন্মোচন করা ১৯টি ঔষধি গাছের ডিএনএ বারকোড ভবিষ্যতে এ খাতের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে এবং সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি গবেষণায় অনুপ্রাণিত করবে, যা ভবিষ্যতে বারকোড ডাটাবেজ এবং ঔষধি উদ্ভিদ শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ বারকোড স্ক্যানার নামে মোবাইল অ্যাপস তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে গবেষকরা আশাবাদী।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২১।
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।