ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ধুলার মধ্যে বসবাস!

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১
ধুলার মধ্যে বসবাস! ছবি: উজ্জ্বল ধর

চট্টগ্রাম: সবুজ গাছগাছালিতে ভরপুর ছিল বন্দরনগর চট্টগ্রাম। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে কাটতে হয়েছে সেই সবুজ গাছগুলো।

জনগণের প্রয়োজনে তৈরি হয়েছে রাস্তা। রাস্তাগুলোয় বারবার পড়ছে উন্নয়নের কোপ।
বৃষ্টি হলে কাদামাটি আর রোদে ধুলায় অতিষ্ঠ নগরবাসী। এ যেন ধুলার মধ্যে বসবাস।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বিষাক্ত হয়ে উঠছে চট্টগ্রামের বাতাস। বাড়ছে অসহনীয় যন্ত্রণা, ভোগান্তি। সঙ্গে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। নগরে ধুলার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে চর্মরোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। অধিক ধুলাবালির কারণে যেমন মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে, তেমনি শ্বাসকষ্টেও ভুগছে।  

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. সুযত পাল বলেন, ধুলাবালি ফুসফুস থেকে হার্টের মাধ্যমে শরীরের সব জায়গায় চলে যাচ্ছে। এর কারণে অ্যাজমা হতে পারে, লাং-এর জটিলতা হতে পারে। দীর্ঘদিন এমন হতে থাকলে শেষ পর্যন্ত এটা ক্যান্সারের দিকে চলে যেতে পারে।

নগরজুড়ে ধুলায় আটকা পড়ে পথচারীর চোখ। সূর্যের আলো ঢাকা পড়ে যায় ধুলাবালিতে। বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে, জীবন-জীবিকার তাগিদে এই নগরে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বসবাস করতে হয়, কিন্তু এখানে নগরবাসীকে দিনরাত নাকাল হতে হচ্ছে সড়কের ধুলা, খানা-খন্দকের কারণে। রাস্তাঘাটে খোঁড়াখুঁড়ি, ড্রেন পরিষ্কার, পাইপ বসানো, বৈদ্যুতিক লাইন টানাটানির কাজ চলে বছরজুড়ে।

কারখানার ধোঁয়াও প্রতিনিয়ত দূষিত করছে চট্টগ্রামের বাতাস। ঘর থেকে বের হওয়া মাত্র চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। বাতাসে বেড়েছে দূষণের পরিমাণ। আর তাই শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে মানুষের।

শীত আসার আগেই নগরের বেশিরভাগ সড়কে এখন ধুলার রাজত্ব। একদিকে শুষ্ক আবহাওয়া অন্যদিকে বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়নকাজ চলতে থাকায় জনজীবনে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। অসহনীয় ধুলার কারণে নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বড়পোল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজের জন্য ধুলাময় আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, দুই নাম্বার গেইট থেকে নতুন ব্রিজ এলাকা, মুরাদপুর থেকে অক্সিজেন, টাইগারপাস থেকে আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকা।  

নগরের বিমানবন্দর থেকে কাটগড় হয়ে সিমেন্ট ক্রসিং, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বোট ক্লাব হয়ে বিমানবন্দর, পোর্ট কানেকটিং রোড, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, বহদ্দারহাট থেকে সিঅ্যান্ডবি হয়ে কালুরঘাট সড়কসহ কয়েকটি এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ির ফলে সড়কজুড়ে ধুলাবালির স্তুপ জমেছে।  

বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার কাজের মধ্যে সমন্বয় না থাকা ও নাগরিক স্বাস্থ্যের প্রতি উদাসীন থাকার কারণে নগরজুড়ে মাত্রাতিরিক্ত ধুলাবালি সৃষ্টি হচ্ছে বলে মনে করেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। তারা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গেই ধুলোবালি নিয়ন্ত্রণের একটা পরিকল্পনা থাকে, বাস্তবে এটার কোনও কার্যকারিতা নাই। যার ফলে ধুলোবালির মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ধুলাবালির এই যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীকে রক্ষায় পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছিল দুটি সুইপিং গাড়ি। বর্তমানে দুই কোটি টাকা দামের গাড়ি দুটি অকার্যকর। নগরে কিছুদিন সেই গাড়িগুলো পানি ছিটালেও পরে আর দেখা মিলেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২১
বিই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।