চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের ১২ কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের বিভাগে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
যদিও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর, রেজিস্ট্রার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্যরা।
একাধিক বিভাগে যোগাযোগ করেও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও বক্তব্য দেননি বিভাগের সভাপতিরা।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের একটি চিঠি বাংলানিউজের হাতে আসে। একইভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের একাধিক বিভাগে এ চিঠি দেওয়া হয়। তবে কয়েকটি বিভাগ বিষয়টি জানাতে রাজি হয়নি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে যোগাযোগ করে জানা গেছে, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে পেয়েছে বিভাগগুলো।
চিঠিতে বলা হয়, ‘ক্ষমা চেয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে মানবিক দিক বিবেচনায় গত ১৭ অক্টোবর বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলো। এরপর থেকে স্বাভাবিক নিয়মে পরীক্ষা ও অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন। তবে ভবিষ্যতে বিভাগের অ্যাকাডেমিক বা পরীক্ষা কার্যক্রমে আপনি (বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী) বা আপনার পক্ষের কেউ বিঘ্ন ঘটালে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও প্রকার শৃংখলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে আপনার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে, কোনও প্রকার কারণ দর্শানো ছাড়াই আপনার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
১৭ ডিসেম্বর চবি প্রক্টর দেশের বাইরে ছুটিতে যাওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী প্রক্টর শহীদুল ইসলাম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে জানি না। আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। এর আগে কোনও আদেশ হয়েছিল কি-না আমার জানা নেই।
চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের আদেশ প্রক্টর অফিস থেকে দিলে দিতে পারে। এগুলো আমার হাতে নেই। তাই বিষয়টি আমার জানা নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ সিএফসি ও সিক্সটি নাইনের মোট ১২ জনকে ৬ মাস ও ১ বছর মেয়াদে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে গত ১০ অক্টোবর মারধরের বানোয়াট অভিযোগ, ১৪ অক্টোবর রাতে এক শিক্ষার্থীকে মারধর, ১৫ অক্টোবর সংঘর্ষ ও কুপিয়ে আহত করা এবং ১৭ অক্টোবর মারধরের ঘটনায় বহিষ্কার করা হয় তাদের।
বহিষ্কৃতদের মধ্যে যাদের ছাত্রত্ব আছে, তারা এ সময়ে আবাসিক হলে থাকতে পারবেন না এবং যাদের ছাত্রত্ব নেই, তারা হল ও ক্যাম্পাসে থাকতে পারবেন না- বলা হলেও বহিষ্কৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। বাকিরাও পেয়েছেন পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি।
ছয় মাস মেয়াদে বহিষ্কৃতরা হলেন: অর্থনীতি ২০১১-১২ সেশনের ফরহাদ, লোকপ্রশাসন ১৪-১৫ সেশনের অহিদুজ্জামান সরকার, সমাজতত্ত্ব ১৫-১৬ সেশনের আরিফুল ইসলাম, ইতিহাস ১৫-১৬ সেশনের জুনায়েদ হোসেন জয়, পরিসংখ্যান ১৬-১৭ সেশনের আকিব জাভেদ, আইন বিভাগ ১৭-১৮ সেশনের খালেদ মাসুদ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ১৮-১৯ সেশনের তানজিল হোসেন, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ১৯-২০ সেশনের মো. নাঈম, আরবি ১৯-২০ সেশনের তৌহিদুল ইসলাম এবং বাংলা ১৯-২০ সেশনের সাইফুল ইসলাম।
এছাড়া এক বছর বহিষ্কার হন: আইন বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের মির্জা কবির সাদাফ এবং রসায়ন ১৬-১৭ সেশনের আশরাফুল আলম নায়েম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্য ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, বহিষ্কারাদেশ কখন, কিভাবে প্রত্যাহার করেছে আমি কিছুই জানি না। এমনকি এ বিষয়ে হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটিতেও কোনও আলোচনা হয়নি। সভায় আলোচনা ছাড়া বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের কোনও নিয়ম আছে কি-না আমার জানা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
এমএ/এসি/টিসি