ঢাকা, শনিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সালতামামি-২০২১

তিন ঘটনায় বছরজুড়ে আলোচনায় চবি ছাত্রলীগ

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
তিন ঘটনায় বছরজুড়ে আলোচনায় চবি ছাত্রলীগ ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: সংঘর্ষ, কমিটি ও বহিষ্কারের ঘটনায় বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগ।  

দীর্ঘ ১৬ মাস ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের শেষ ৫ মাসে অন্তত ৭ বার সংঘর্ষে জড়িয়েছে চবি ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ।

এসব ঘটনায় অন্তত ২৪ জন আহত হন।

গত ২৪ আগস্ট ক্যাম্পাস এসে প্রথমবার বিবাদে জড়ায় ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপ বিজয় ও সিএফসি।

এতে ২ জন আহত হন।  

২ সেপ্টেম্বর চবি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ সিএফসি ও সিক্সটি নাইনের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের ৫ জন আহত হন। এর মধ্যে সিএফসির ১ জন ও সিক্সটি নাইনের ৪ জন কর্মী আহত হন।

৩০ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে বিজয় গ্রুপের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৪ জন আহত হন। এ ঘটনায় বিজয় গ্রুপের অনুসারী নেতারা সংস্কৃত বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী মুজাহিদ চৌধুরীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন।

১৪ অক্টোবর রাতে সিক্সটি নাইনের এক কর্মীকে মারধরের পর রাতে সিএফসির এক কর্মীকে মারধর করে সিক্সটি নাইনের অনুসারীরা। এ ঘটনার জের ধরে ১৫ অক্টোবর শাহ আমানত ও শাহজালাল হলে ছাত্রলীগের দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এসময় উভয় পক্ষের ৪ জন আহত হন।  

এ ঘটনার জেরে ১৭ অক্টোবর চবির শাহ আমানত হলে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও বগিভিত্তিক উপগ্রুপ সিএফসির অনুসারী আল-আমিন রিমনকে কুপিয়ে আহত করে সিক্সটি নাইনের অনুসারীরা।  

১৪ ডিসেম্বর রাতে চবির শহিদ আব্দুর রব হলে ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ বাংলার মুখ ও একাকার এর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৩ ছাত্রলীগকর্মী ও এক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আহত হন।

বহিষ্কার
বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ সিএফসি ও সিক্সটি নাইনের ১২ জনকে ৬ মাস ও ১ বছর মেয়াদে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ১০ অক্টোবর মারধরের অভিযোগ, ১৪ অক্টোবর রাতে এক শিক্ষার্থীকে মারধর, ১৫ অক্টোবর সংঘর্ষ ও কুপিয়ে আহত এবং ১৭ অক্টোবর মারধরের ঘটনায় বহিষ্কার করা হয় তাদের।   

৬ মাস মেয়াদে বহিষ্কার হন অর্থনীতি ২০১১-১২ সেশনের ফরহাদ, লোকপ্রশাসন ১৪-১৫ সেশনের অহিদুজ্জামান সরকার, সমাজতত্ত্ব ১৫-১৬ সেশনের আরিফুল ইসলাম, ইতিহাস ১৫-১৬ সেশনের জুনায়েদ হোসেন জয়, পরিসংখ্যান ১৬-১৭ সেশনের আকিব জাভেদ, আইন বিভাগ ১৭-১৮ সেশনের খালেদ মাসুদ, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৮-১৯ সেশনের তানজিল হোসেন, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট ১৯-২০ সেশনের মো. নাঈম, আরবি ১৯-২০ সেশনের তৌহিদুল ইসলাম এবং বাংলা ১৯-২০ সেশনের সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়া এক বছর মেয়াদে বহিষ্কার হন, আইন বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের মির্জা কবির সাদাফ এবং রসায়ন ১৬-১৭ সেশনের আশরাফুল আলম নায়েম।

বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার
বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বহিষ্কৃতদের মধ্যে যাদের ছাত্রত্ব আছে, তারা এ সময়ে আবাসিক হলে থাকতে পারবেন না। এ ছাড়া যাদের ছাত্রত্ব নেই, তারা হল এবং ক্যাম্পাসে থাকতে পারবেন না। তবে বহিষ্কৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। বাকিরাও পেয়েছেন পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি।  

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের বিষয়ে বিভিন্ন বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যদিও এ বিষয়ে কিছুই জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্যরা।

১৫ ডিসেম্বর চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের একটি চিঠি বাংলানিউজের হাতে আসে। একইভাবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের একাধিক বিভাগে এ চিঠি দেওয়া হয়। তবে কয়েকটি বিভাগ বিষয়টি জানাতে রাজি হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে যোগাযোগ করে জানা যায়, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের চিঠি ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সময় পেয়েছে বিভাগগুলো। এখন পর্যন্ত বহিষ্কৃত  ১২ জনের মধ্যে ৭ জনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

সাংবাদিককে হুমকি
বহিষ্কার হয়েও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়ায় ৭ ডিসেম্বর মুঠোফোনে চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়ার পরিচয় দিয়ে সাংবাদিক ইফতেখায়রুল ইসলামকে হুমকি দেন শাখা ছাত্রলীগের বগি ভিত্তিক উপগ্রুপ সিএফসির অনুসারী তৌহিদুল ইসলাম। তিনি বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৭ অক্টোবর বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার হওয়া চবি ছাত্রলীগের ১২ কর্মীর একজন। ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার হন তৌহিদুল ইসলাম। হুমকির ঘটনায় ১২ ডিসেম্বর তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।  

ছাত্রলীগের কমিটি
২০১৬ সালের ১৭ জুলাই সর্বশেষ চবি শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এরপর সাড়ে ৫ বছরেও আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। দুই দফায় শাখা ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৬ ডিসেম্বর বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এ পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

১৯ মাস পর ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই চবি ছাত্রলীগের দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। এর আড়াই বছর পর গত ৯ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিভিন্ন পদের জন্য আগ্রহী নেতা-কর্মীদের জীবনবৃত্তান্ত চেয়ে বিবৃতি দেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু।

নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ২০১ পদের বিপরীতে ১ হাজার ৪০০ জন আগ্রহী প্রার্থী জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন বলে জানায় শাখা ছাত্রলীগ। তবে শাখা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো ঘোষিত হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।