ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

পুরনো নকশায় হবে শহীদ মিনার নির্মাণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২২
পুরনো নকশায় হবে শহীদ মিনার নির্মাণ ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: মাতৃভাষা রক্ষার দাবিতে প্রাণ দেওয়া শহীদদের স্মরণে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করেছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা, ১৯৫২ সালে। ১৯৫৭ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার পর সরকারিভাবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু হয়।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের পরিকল্পনার পেছনে শিল্পী হামিদুর রহমান, ভাস্কর নভেরা ও একজন বিদেশি স্থপতির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

শহীদ মিনারের নকশার দিকে তাকালে দেখা যায়, এতে রয়েছে পাঁচটি স্তম্ভ।

মাঝখানের স্তম্ভটি সবচেয়ে উঁচু, ওপরের অংশটি সামনের দিকে নোয়ানো। দুই পাশে আরও চারটি স্তম্ভ। মনে করা হয়, অতন্দ্র প্রহরী চার সন্তানকে নিয়ে মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন মা। পাঁচটি স্তম্ভের পেছনে যুক্ত হয় উদীয়মান সূর্যের প্রতীক লাল বৃত্ত।

শহীদ মিনার বর্তমান রূপ পায় আশির দশকে এসে। ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আর বাংলা ভাষা বা বাংলাদেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই দিনটি এখন জাতিসংঘ ঘোষিত ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’।  

কিন্তু এ দিবস সহ অন্যান্য জাতীয় দিবস পালন করতে গিয়ে দেশে-বিদেশে শহীদ মিনার নির্মাণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রতিকৃতি বা কাঠামো অনুসরণ করা হচ্ছে না। অথচ আমাদের জাতীয় শহীদ মিনার একটি নির্দিষ্ট ভাবনা থেকে নির্মিত হয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রথিতযশা শিল্পীরা ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যকে ধারণ করে এ শহীদ মিনার নির্মাণ করেছেন।  

ভাষাপ্রেমীরা বলছেন, মায়ের সঙ্গে ভাষার সম্পর্ক। মা ও ভাষাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শহীদ মিনারের স্থাপনার মাধ্যমে। বিভিন্ন আকৃতির শহীদ মিনার নির্মিত হওয়ায় একসময় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের বিষয়টিকে নানান ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝাতে হবে। এর ফলে আগামী প্রজন্মের সামনে মাতৃভাষার আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস বিকৃত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাবে। তাই বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মতো তাৎপর্যপূর্ণ স্তম্ভ নির্মাণে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারে সরকার।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নগরের কে সি দে সড়ক এলাকায় অবস্থিত। ১৯৬২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারটি নির্মিত হয়। এটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে আছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তবে এই মিনারটি দুই স্তম্ভ বিশিষ্ট। একটি ছোট এবং অন্যটি উঁচু।

সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের অধীনে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি নতুনভাবে তৈরির জন্য ভাঙা হয়েছে। গণপূর্ত অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, নির্মাণকাজ শেষ হবে ৯ মাসের মধ্যে। পুরনো নকশায় শহীদ মিনারটি নির্মাণ করা হবে। নকশা পরিবর্তনের সুযোগ নেই।

শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে দেখা গেছে, সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ উপলক্ষে শহীদ মিনার এলাকায় কাজ চলছে। স্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম মুসলিম ইন্সটিটিউট হল ভেঙে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে। ২৩২ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে। প্রকল্পের অধীনে মুসলিম ইন্সটিটিউট হল ও পাবলিক লাইব্রেরি ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ও আট তলা অডিটরিয়াম ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।

রাস্তার বিপরীত পাশে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অংশে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় ২৫০ জন ধারণক্ষমতার একটি গ্যালারিসহ মুক্তমঞ্চ এবং পশ্চিম পাশে নিচতলায় ক্যাফে ও দুই তলায় মিউজিয়াম তৈরি করা হবে। আর মাঝখানে থাকবে শহীদ মিনার। উভয়পাশের সংযোগ ঘটাতে রাস্তার ২১ ফুট ওপর দিয়ে হাঁটার ব্যবস্থা ও একটি প্লাজা নির্মাণ করা হবে।  

গণপূর্ত অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ জানান, গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্থাপনাটি সংস্কারের লক্ষ্যে ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। আমরা ৯ মাস সময় পেয়েছি। তাই দ্রুত কাজ চলছে। আশা করছি, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে নতুন নির্মিত শহীদ মিনার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, বিকল্প হিসেবে মিউনিসিপ্যাল স্কুল মাঠে শহীদ মিনার নির্মাণকাজ চলছে। দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেটির কাজ শেষ হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২২ 
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।