ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ছেলের পেছনে তারাবির নামাজ পড়া হলো না !

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫২৪ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
ছেলের পেছনে তারাবির নামাজ পড়া হলো না ! ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: আমার ছেলে কুরআনের হাফেজ হয়েছে প্রায় ছয় মাস হচ্ছে। বাড়িতে থাকলে মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

কুরআন চর্চাটা ভালোভাবে হবে না। যার কারণে দুই মাস আগে মাদরাসা আলী বিন আবী তালিবে (রা.) মাসে ৪ হাজার টাকার খরচের বিনিময়ে ভর্তি করা হয়েছিল।
সামনে রমজান মাসে বন্দরটিলা এলাকায় একটি মসজিদ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে তারাবির নামাজ পড়ানোর জন্য কথা হয়েছে। তারা আরমানকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য কয়েকদিনের মধ্যে ডাকার কথা ছিল।

মঙ্গলবার (৮ মার্চ) দুপুরে পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর পিলখানায় মাদরাসা আলী বিন আবী তালিব (রা.) গেইটের সামনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে এসব কথা বলেন মৃত মাদরাসার ছাত্র আরমান হোসেন মাহিনের পিতা মো.আব্বাস উদ্দীন।

মো. আব্বাস কান্নাকাটির মধ্যে বলেন, আমার ছেলের জন্মের পর থেকে কুরআনের হাফেজ করা আমার স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্ন আমার পূরণ হয়েছিল। চারটি হেফজখানায় ভর্তি করে ৫ বছরে কুরআনে হাফেজ হিসেবে তৈরি করেছি। এখন আমাদের কী হবে? আমাদের আরমান ছাড়া কোনো সন্তান নেই। কারা আমাদের দেখবে? ছেলের পেছনে নামাজ পড়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না।

তিনি বলেন,সোমবার (৭ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টার দিকে আরমানকে মাদরাসায় পাচ্ছে বলে শিক্ষক কল করে জানিয়েছিল। রাতে আমাদের আত্মীয় স্বজনদের বাসা-বাড়িতে খোঁজাখুঁজি করা হয়েছিল, পাওয়া যায়নি। সকাল ৯টার দিকে মাদরাসার শিক্ষক মোবাইলে কল করে আরমানকে পাওয়া গেছে বলে জানায়। দ্রুত মাদরাসায় আসতে বলেন। মাদরাসায় আসার পথে পুলিশের গাড়ি। মাদরাসার গেইটে আরমানের মরদেহ অ্যাম্বুল্যান্সে দেখতে পাই।

মো. আব্বাস বলেন, আমার ছেলের মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত চাই। আমার ছেলে গত রোববার বাড়িতে আমার বোনকে বলেছে, এই মাদরাসা ভালো না। শিক্ষকরা প্রচুর মারধর করেন। দ্রুত এই মাদরাসা পরিবর্তন করে অন্য মাদরাসায় ভর্তি করানোর জন্য। আরমান অন্য মাদরাসায় ভর্তি করার সুযোগটা আমাকে দিল না।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, গতকাল সোমবার ৫টার পর থেকে আরমানকে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ খুঁজে পাচ্ছিল না। আরমানের পরিবারকে জানানো হয়েছিল। আজ মঙ্গলবার সকালে মাদরাসা ভবনের পাশে আরমানের মরদেহ দেখতে পায় ছাত্ররা। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করেন।

তিনি আরও বলেন, আরমানসহ কয়েকজন ছাত্র মাদরাসা ভবনের ছাদে গতকাল সোমবার বিকেল ৫টার দিকে খেলাধুলা করেছিল। ছাদ থেকে ফিরে এসেছে, সেটার ভিডিও ফুটেজে পাইনি। প্রাথমিক অবস্থায় মনে হচ্ছে, ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে।  

নগরের পাঁচলাইশ থানার পিলখানা এলাকার মাদ্রাসার ভেতর থেকে মো. আরমান হোসেন মাহিনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। আরমান একই থানার মির্জাপুল 
আব্দুল হামিদ সড়ক এলাকার আব্বাস উদ্দীন ও সাহানারা দম্পতির এক মাত্র ছেলে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১৪ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।