ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৯ মে ২০২৪, ১০ জিলকদ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

২০ টাকা চাঁদাবাজির মামলা আদালতে

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২১ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
২০ টাকা চাঁদাবাজির মামলা আদালতে প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম: নগরের হালিশহর থানায় দায়ের করা ২০ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় আসামি হয়েছিলেন তিন পরিবহন শ্রমিক। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান মামলাটির বাদী বাস চালক মো.জালাল।

 

জানা যায়, ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করার পর দুই মাসের তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। ২০২১ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত মামলাটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন ছিল।

 

এই আদালতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানায় এক ট্রাফিক সার্জেন্টের দায়ের করা ১৬০ টাকার চাঁদাবাজির মামলার চার্জ গঠন হয়েছিল। এছাড়া একই আদালতে এই ধরনের একাধিক মামলা রয়েছে।   

২০ টাকা চাঁদাবাজির মামলায় আসামিরা হলেন- নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার চরকাকড়া ভুফাইন্যাদের নতুন বাড়ির মো. আবু তাহের প্রকাশ তোহার ছেলে মো.সোহেল রানা সাদ্দাম (৩২), চরহাজারী হাজারিবাট এলাকার মো. সাহাব উদ্দিনের ছেলে মো.সাইফুল ইসলাম (২৮) ও কুষ্টিয়া সদর থানার চৌরহাস পঁচাপুশকানী বকুল চেয়ারম্যান বাড়ির মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে মো. মুন্না আলী (৩৪)। তারা নগরের খুলশী থানাধীন ওয়ারলেস তালতলা আহিদ মিয়ার কলোনিতে বসবাস করেন।  

আদালত সূত্রে জানা যায়, হালিশহর থানার মামলা নম্বর: ৮ (১২)২০, জি.আর ২৫১/২০ ও দায়রা ১৯৯৯/২১। ২০২০ সালের ৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে যাত্রীবাহী বাসযোগে (চট্টমেট্রো-ব-১১-৫৭৩) সোনালী ব্যাংক, বন্দর ভবন, কাস্টম শাখায় কর্মরত স্টাফদের নামিয়ে দিয়ে চার-পাঁচজন যাত্রী নিয়ে সোয়া ১০টার দিকে হালিশহর থানার এক্সেস রোডে শেভরণ ডায়াগনস্টিকের সামনে যাত্রী ওঠানোর সময় বাসের ভিতরে তিনজন প্রবেশ করেন। এ সময় এই রুটে বাস চালাতে হলে গাড়িপ্রতি ২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে বলে জানান তারা। দাবিকৃত চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে বাসে থাকা যাত্রীদের ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়। এরপর চালককে বাস থেকে নামিয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন  এবং পকেট থেকে ২০ টাকা চাঁদা জোর করে আদায় করেন। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে তিনজনকে আটক করে। চাঁদার আদায়কৃত ১০ টাকার ২টি নোটও (২০ টাকা) জব্দ করা হয়।

দুই মাস তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তৎকালীন হালিশহর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রেজাউল করিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।  

আদালত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, থানায় হাজার হাজার মামলায় গুরুত্ব না দিয়ে একটা ২০ টাকার মামলার জন্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এজন্য সময় নিয়েছেন দুই মাস। অভিযোগপত্র দিতে গিয়ে অনেক বিষয় সামনে নিয়ে এসেছেন। অথচ এর চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলা থানায় পড়ে রয়েছে বছরের পর বছর। তিনজন আসামির কাছ থেকে ২০ টাকা জব্দও করেছে পুলিশ। এই ধরনের মামলা না নিয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থানায় বসে সমাধান দিতে পারতেন। অপরদিকে মামলা চলাকালীন সময়ে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা আদালতকে বুঝিয়ে বলতে পারতেন। তাহলে মামলাটি এত দীর্ঘ সময় ঝুলে থাকতো না। মামলার ৩৮৫ ও ৩৮৬ ধারায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারের এখতিয়ার না থাকায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করা হয়েছে।  

মামলার বাদী দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ থানার সিংড়া আদর্শগ্রাম সিদ্দিক মিয়ার বাড়ির মৃত সিদ্দিকের ছেলে বাস চালক মো. জালালের সঙ্গে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা মোবাইল নম্বরে দুইদিন ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।  

এদিকে আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে পাঁচজন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন জনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে বাংলানিউজের সঙ্গে মো.রাজ্জাক নামে এক সাক্ষীর কথা হয়। তিনি এক্সেস রোডে দোকানদারি করেন। তার দাবি, ‘আমি ২০ টাকার চাঁদাবাজির মামলায় সাক্ষী দেইনি।  দীর্ঘদিন ধরে দোকানদারি করি। চাঁদাবাজির মামলায় পুলিশ বা কেউ জবানবন্দি গ্রহণ করার জন্য আসেনি। আমি জীবনে কোনদিন কোনও মামলায় সাক্ষী হইনি’।  

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তৎকালীন হালিশহর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রেজাউল করিম বাংলানিউজকে বলেন, ‘ওই থানা থেকে আমি বদলি হয়ে চলে এসেছি। এখন মামলা সম্পর্কে জানা নেই। যখন আদালতে ডাকা হবে, তখন ডকেট পর্যালোচনা করে দেখবো’।  

মামলার বাদী বাস চালক মো. জালালের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোজ্জাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি ২০ টাকার চাঁদাবাজির মামলা সম্পর্কে জানি না। এই মামলার ফাইলও আমার কাছে নেই। কোনও সহকর্মী ওকালতনামায় হয়তো আমার স্বাক্ষর নিয়েছিল’।  

আসামিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ লেয়াকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘২০ টাকার চাঁদাবাজির মামলার আসামি তিনজনই লাইনম্যান। তারা গাড়ি থেকে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে থানায় মামলা হয়। এখন তারা নিয়মিত কোর্টে হাজিরাও দিচ্ছে না। উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা যোগাযোগ করেনি’।  

মামলার বিষয়ে চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ নোমান চৌধুরী কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ বাংলানিউজকে বলেন, ২০ টাকার চাঁদাবাজির মামলার চার্জ গঠনের দিন ধার্য রয়েছে ২০ মার্চ।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
এমআই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

চট্টগ্রাম প্রতিদিন এর সর্বশেষ