চট্টগ্রাম: এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। যাকে সবাই চট্টলবীর হিসেবেই চিনে।
নগরের বিভিন্ন অলিগলিতে ইফতার সামগ্রী কিনতে যখন রোজাদাদের ছুটাছুটি । তখন নগরের জিইসি মোড়ের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস মসজিদের চিত্র ভিন্ন। মসজিদ সংলগ্ন মাঠ জুড়ে সারি সারি লাইনে বসে মাগরিবের আজানের অপেক্ষা করছেন হাজারো মানুষ। মসজিদের মিম্বরে মাহে রমজানের গুনাহের কাফফারা সম্পর্কে বয়ান দিচ্ছিলেন মাওলানা আবুল হাসনাত আল কাদেরী।
করোনার মহামারির কারণে দুই বছর বন্ধ ছিল এ কার্যক্রম। কিন্তু ইফতার সামগ্রী বিতরণ থেমে ছিল না। তখন ঘরে খাবার তৈরী করে ট্রাক দিয়ে অসহায় মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিয়েছেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব না থাকায় আবারও শুরু হয়েছে সে আয়োজন।
এতে খুশি রোজাদাররাও। ষাটোর্ধ্ব রমজান আলী। পেশায় রিকশা চালক। সারাদিন রোজা রেখে তপ্ত গরমে রিকশা চালিয়েছেন তিনি। টাকার অভাব তার। রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তার সিংহভাগ পাঠিয়ে দেন বাড়িতে। তাই সকাল থেকে নগরের বিভিন্ন স্থানে রিকশা চালিয়ে জিইসিতেই চলে আসেন তিনি। একপাশে রিকশা রেখে আছরের নামাজ পড়ে ইফতারের জন্য প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদেই বসে হুজুরের বয়ান শুনেন। ইফতার শেষে রিকশা নিয়ে আবারও বেড়িয়ে পড়েন রমজান।
শুধু রমজান আলীই নন, রয়েছেন জিইসি মোড়ের ফল ব্যবসায়ী লিয়াকত উল্লাহও। সারাদিন ফল বিক্রিতে ব্যস্ত সময় পার করেন তিনি। ইফতারের সময় হলে দোকান গুটিয়ে চলে চান এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের আয়োজিত ইফতারে। রমজান আর লিয়াকত উল্লাহ ছাড়াও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ইফতার আয়োজনে শামিল হন নগরের হাজারো মানুষ।
তারা বলছেন, সারাদিন রিকশা চালিয়ে মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের ইফতারে চলে আসি। ভিন্ন কিছু, ভিন্ন আমেজ থাকে এখানে। ধনি গরিবের কোন ভেদাভেদ নেই। সবাই একই কাতারে বসে ইফতার করেন। এছাড়াও ইসলাম, রোজা, নামাজ সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখতে ও জানতে পারি।
প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মাদ মঈনুদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমি এবং আমার সহকারী ইমাম ছাড়াও প্রতিদিন একজন বড় আলেম আছর নামাজের পর থেকে ইফতারের আগ পর্যন্ত ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দিক দির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। এসময় দেশ ও জাতির কল্যাণে দোয়া পরিচালনা করা হয়। আড়াই থেকে তিন হাজার মানুষের আয়োজন। কোনদিন বেশি হয়। আবার কোন দিন কম হয়।
প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার মানুষের আয়োজন হয় এখানে। চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ বাবুর্চি মোহাম্মদ হোসাইনের রান্না করা ইফতার সামগ্রী এখানে পরিবেশন করা হয়।
এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন বাংলানিউজকে বলেন, আমার আব্বা মরহুম এটিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সবসময় সবাইকে নিয়ে ইফতার করাতেন। তিনি থাকাকালীন প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর হাজারো মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ইফতার করতেন। তার অবর্তমানে আমরা এ কর্মযজ্ঞ চালিয়ে নিচ্ছি। এখানে প্রতিদিন আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার বিভিন্ন স্তরের মানুষ ইফতার করেন। ইফতারের আগে প্রতিদিন একেকজন আলেম ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি আরও বলেন, করোনায় বন্ধ ছিল আমাদের আয়োজন। কিন্তু সে ইফতার সামগ্রী আমরা রাস্তায় রাস্তায় ট্রাকে করে গরীব অসহায় মানুষদের দিয়েছি। কারও জন্য বাধা নেই, যে কেউ এসে ইফতার করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, ০৫ এপ্রিল, ২০২২
বিই/টিসি