ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ মে ২০২৪, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে চাঁদা আদায়ের নেপথ্যে   

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে চাঁদা আদায়ের নেপথ্যে   

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে গণহারে চাঁদা আদায়ের ঘটনায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ টাকা আদায়ের নেপথ্যে বোর্ডের উপ পরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) তাওয়ারিক আলম রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায়ে তিনি সরাসরি যোগাযোগ করেছেন, এবং নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে তাওয়ারিক আলম এ অভিযোগ অস্বীকার করে এর জন্য গনমাধ্যমকে দায়ী করেছেন।
 

ঢাকা থেকে আসা অডিট টিমকে ‘ম্যানেজ’ করার কথা বলে চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে করা হয় এই অভিনব চাঁদাবাজি। তাদের আপ্যায়ন বাবদ বোর্ড থেকে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা তুলেছেন তাওয়ারিক আলম। পরে গত ৯ মার্চ সন্ধ্যায় বাকি টাকাগুলো ভাগবাটোয়ারা করেন তারা।  

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নিরীক্ষার জন্য শিক্ষা অডিট অধিদফতরের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. বশির আহমেদ, সাব-অর্ডিনেট অ্যাকাউন্টস (এসএএস) সুপার খান মো. মাজেদুল হক ও মোজাম্মেল হক শিক্ষা বোর্ডে যান। বশির আহমেদের নেতৃত্বে দলটি ১৩ মার্চ পর্যন্ত বোর্ডে অবস্থান করে নিরীক্ষার কাজ শেষ করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা- কর্মচারী বলেছেন, কেন এই চাঁদা আদায় করা হয় তার কিছুই জানেন না তারা। বলা হয় অডিট কমিটিকে ম্যানেজ করতে চাঁদা লাগবে। গত চার-পাঁচ বছর ধরে তারা এই চাঁদা দিয়ে আসছেন। তবে তাদের দাবী নিজেদের (সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের) অনেক কর্মকান্ড আড়াল করতে এ চাঁদাবাজি হয়েছে। সংস্থাপন, পরীক্ষা, হিসাব, বিদ্যালয়, কলেজ ও নিরীক্ষা- এই পাঁচ শাখায় স্থায়ী ২৮ জন কর্মকর্তা ও ৭৯ জন কর্মচারী রয়েছেন। অস্থায়ী কর্মকর্তা আছেন ১৫ জন। মোট কর্মরত ১০৭ জন। সবাইকে এই চাঁদায় ‘শামিল’ হতে হয়। প্রতিবছর এটি বাড়তে থাকে। এবার চাঁদার পরিমাণ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।

জানা যায়, গত বছরের অক্টোবরে ১০৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর কাছ থেকে মোট ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা হয়। সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। সুইপার থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সবাইকে এই চাঁদা দিতে হয়েছে।

চাঁদা কেন আদায় করা হচ্ছে সে ব্যাপারে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কিছু না জানলেও তাদের অভিযোগ অমূলক নয়। শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা অডিট অধিদফতরের অডিট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস অফিসার মো. বশির আহমেদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অডিট টিম চট্টগ্রাম আসেন।  

অভিযোগ আছে, ১৩ মার্চ পর্যন্ত তারা বোর্ডের বিশ্রামকক্ষেই রাতযাপন করেন। এ সময় এক প্রকার ‘জামাই আদর’ করা হয় নিরীক্ষা দলকে। প্রতিবেলার খাবার, নাশতার ব্যয় বহন করে শিক্ষা বোর্ড। এমনকি তাদের চাহিদা পূরণের জন্য চেয়ারম্যানের কক্ষের টিভিও খুলে বিশ্রাম কক্ষে লাগানো হয়। পাঁচ হাজার টাকা ব্যয়ে লাগানো হয় ‘আকাশ’ সংযোগও।

এর মধ্যে ১৩ মার্চ অডিট অধিদফতরের মহাপরিচালক মোস্তফা কামাল সেই দলের কার্যক্রম পরিদর্শনে আসেন। সঙ্গে আনেন পরিবারের ৬ সদস্যকেও। তাদের থাকা-খাওয়ার খরচ ও দুই দিন ঘোরাঘুরির জন্য গাড়ি দিয়েছে শিক্ষা বোর্ড। তাদের আপ্যায়নের জন্য হিসাব শাখা থেকে অগ্রীম ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা তোলা হয়।

তবে এত কিছুর পরেও প্রায় ১১ লাখ টাকার চাঁদাবাজিকে অন্য ভাবে দেখছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যদিও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চাপে মুখ খুলতে তারা নারাজ। তবে এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, অডিট টিমকে খুশি করতে নয়, অডিট টিমের নামে নিজেরা ফায়দা নিতেই এই চাঁদাবাজি করা হয়েছে। তাদের দাবি, সংঘবদ্ধ একটা চক্র অডিট টিমকে খুশি করার নামে নিজেরা লোপাট করছে বিশাল অংকের এই টাকা।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রামের বোর্ড সচিব ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল আলীমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংযোগ কেটে দেন।  

হিসাব ও নিরীক্ষা বিভাগের উপ-পরিচালক তাওয়ারিক আলম বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা থেকে যে অডিটের টিম এসেছে তাদের জন্য সরকারি টাকা খরচ করা হয়েছে। কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে যে টাকা উত্তোলনের কথা বলা হচ্ছে সেটা পত্রিকার কথা। আমি নিজেও তো কোনো টাকা দিইনি।  

নিরীক্ষা দলকে দেওয়ার জন্য চাঁদা তোলার বিষয়টি কারা ফাঁস করলেন, সেটি খুঁজতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা।

গত কয়েকদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বোর্ডে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পত্রিকায় যাদের বরাতে চাঁদার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের ডেকে ডেকে জবাবদিহি চান কর্মকর্তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণমাধ্যমে যাঁরা চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁদের ডেকে কথা বলেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা। কেন এ বিষয়ে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি জানতে চাওয়া হয় তাঁদের কাছে। সাবধানও করে দেওয়া হয় তাদের।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২২
বিই/ টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।