চট্টগ্রাম: পাবজি গেম, পর্নোগ্রাফি এবং বিভিন্ন নিষিদ্ধ ওয়েবসাইট আসক্তির জেরে মা-বাবার সঙ্গে অভিমান করে ১৫ বছরের কিশোর নগরের বাসা ছেড়ে পালানোর ৫ মাস পর উদ্ধার করেছে র্যাব-৭।
শনিবার (৭ মে) বিকেলে র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন র্যাব-৭ এর অধিনায়ক এমএ ইউসুফ বলেন, কিশোর গত ১০ ডিসেম্বর দুপুরে মোবাইলে ফ্রি-ফায়ার গেমস খেলছিল।
ঘটনার দিনই কিশোর নগরের অলংকার এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে চাকরি নেয় জানিয়ে র্যাব-৭ এর অধিনায়ক এম এ ইউসুফ বলেন, সেখানে ১ মাস ২২ দিন চাকরি করার পর সে পরবর্তীতে চান্দগাঁও নতুন থানার মোড় এলাকার আরেকটি রেস্টুরেন্টে চাকরি নেয়। সেখানে সে কাজ করতে থাকে। কাজের একপর্যায়ে ওখানকার এক স্টাফের সঙ্গে কথায় ক্ষুব্ধ হয়ে চাকরি ছেড়ে দিয়ে সে পুনরায় চান্দগাঁও নতুন থানার মোড় নিউ চান্দগাঁও রেস্ট হাউজে চাকরি নেয়। সেখানে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে উদ্ধার হওয়া পর্যন্ত চাকরিরত ছিল।
কিশোর নিখোঁজ থাককালীন সব জায়গায় তার আসল নাম পরিবর্তন করে নয়ন দে নামে পরিচয় দেয় এবং সে ইচ্ছে করেই মা- বাবা তার অবস্থানের কথা বলেনি।
তিনি জানান, কিশোরের প্রাপ্তবয়স্কদের একটা গ্রুপের সঙ্গে চলাফেরা ছিল। এই গ্রুপে কিশোরকে অপহরণ মামলার তিন আসামি হান্নান, লিও দাস, ও জয় নাম রয়েছে। হান্নান ইউরোপের পোল্যান্ড থাকে এবং জয় থাকে কাতারে। মূলত এরা বিশেষ করে যখন দেশে ছুটিতে থাকে তখন এ উচ্ছৃঙ্খল ও বিকৃত রুচির গ্রুপের কার্যক্রম বেড়ে যায়। নিখোঁজের সময় হান্নান ও জয় ছুটিতে ছিল। এ গ্রুপের সদস্যরা পরস্পর এডাল্ট ভিডিও শেয়ার করত ও ইন্টারনেট পর্নোগ্রফিতে আসক্ত ছিল। পাবজি খেলার পাশাপাশি কিশোর এসবে আসক্ত হয়ে পড়ে। সে গোপনে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় একাধিক অ্যাকাউন্ট চালাত ও বেনামি ৫ থেকে ৬টি সিম ব্যবহার করত। পড়াশুনা প্রায় ছেড়ে দিযে সে সারাদিন এসব নিয়ে পড়ে থাকত বলে মা-বাবা কড়া শাসন শুরু করলে সে তার গ্রুপের অন্য এডাল্ট দের মতো স্বাধীনতার খোঁজে বাড়ি হতে বের হয়ে যায়। তার হদিস কেউ যেন না পায় এজন্য সে তার ব্যবহৃত মোবাইলটিও রেখে যায়। কিন্তু পরে নয়ন দে নামে এক ছদ্মনামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খোলে। আত্মগোপন থাকাকালীন সে নিজেকে নয়ন দে নামে পরিচয় দেয় এবং বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন রকম ঠিকানা দিয়ে অবস্থান করে।
নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে কিশোরকে মা-বাবা সম্ভাব্য সব জায়গায় ছেলেকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে গত ১১ ডিসেম্বর নগরের চকবাজার থানায় মা বাদী হয়ে একটি নিখোঁজ সংক্রান্ত জিডি করেন। কিশোরের মায়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে চকবাজার থানায় ৩ জনকে আসামি করে একটি মামলা হয়। শুক্রবার (৬ মে) রাত সাড়ে ১০ দিকে নগরের চান্দগাঁও থানার নিউ চান্দঁগাও থানা মোড় অভিযান চালিয়ে কিশোরের মায়ের শনাক্ত মতে উদ্ধার করা হয়। কিশোরকে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, ০৭ মে, ২০২২
এমআই/টিসি