ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মেডিক্যালের চোখে দেখলেও নিজের চোখে দেখেন না তারা

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২২
মেডিক্যালের চোখে দেখলেও নিজের চোখে দেখেন না তারা ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: জন্মান্ধ হয়েও করেছেন পড়াশোনা। একে একে পার হয়েছেন প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি।

এরপর স্বপ্ন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। সবকিছু ঠিক থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যালের পক্ষ থেকে মিলেনি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর স্বীকৃতি।
এরপর শুরু হয় নিজেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী প্রমাণের চেষ্টা। যে বিড়ম্বনায় আগে কখনও পড়েননি তারা।

বলছিলাম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০২০-২১ সেশনের তিন ভর্তি পরীক্ষার্থী মো. সোহেল রানা, উৎস সিদ্দিকী এবং মো. কাজিম উদ্দিনের কথা। এই তিনজনই জন্ম থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। চোখের আলো না থাকলেও মনের জোরে এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। কিন্তু ২০২১ সালের ৫ নভেম্বর চবির ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর কেটে গেছে প্রায় ৭ মাস। অথচ মেডিক্যালের স্বীকৃতি না পাওয়ায় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এখনও ঝুলে আছে তিন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর ভর্তি।  

প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও যখন ভর্তির সুযোগ মিলছিল না, তখন আত্মহত্যার বিকল্প নেই বলেও জানিয়েছিলেন তিন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর একজন।  

ভুক্তভোগী তিন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী

সোহেল রানা। চট্টগ্রাম সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের আওতায় থেকে নগরের বঙ্গবন্ধু বাংলা বিদ্যাপীঠ থেকে জেএসসি, নগরের রহমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তার বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সোনাদিয়া গ্রামে।

উৎস সিদ্দিকী। টাঙ্গাইলের সম্মিলিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কার্যক্রমের আওতায় থেকে স্বামী বিবেকানন্দ স্কুল থেকে জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায়।

মো. কাজিম উদ্দিন। গাইবান্ধা সম্মিলিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় থেকে জেএসসি, এসএসসি ও রাজশাহী সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। তার বাড়ি গাইবান্ধা জেলার গাইবান্ধা সদরে।

তিনজনই জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পূর্বের একাডেমিক তথ্য অনুযায়ী স্বীকৃত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল থেকে তারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী স্বীকৃতি পাননি।

এদিকে তিন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর দাবিতে সোমবার (২৩ মে) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে এ বিষয়ে প্রশাসনকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া সংশ্লিষ্ট পোস্টার দেখা যায়। মানববন্ধনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সংগঠন- প্রতিবন্ধী ছাত্রসমাজের নেতাকর্মীরা, থার্ড আই এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

ভুক্তভোগী সোহেল রানা বাংলানিউজকে বলেন, আমি জন্ম থেকেই অন্ধ। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সংক্রান্ত সরকারি সনদও আছে আমার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল টিম আমাকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। তাদের ভুলের জন্য আমি প্রতিবন্ধী কোটায় ভর্তি হতে পারছি না। এভাবে আমাদের ক্যারিয়ারের একটি বছর নষ্ট হওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী। দীর্ঘদিন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। তারা কখনও সরাসরি নিষেধ করেছেন, আবার কখনও আশ্বাস দিয়ে নিশ্চিন্তে বসে আছেন। কর্তৃপক্ষের এমন আচরণে আমরা হয়রানির শিকার। আমরা নিজেদের ন্যায্য অধিকার চাই।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা ‘থার্ড আই’ এর প্রধান মাসরুর ইশরাক বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল টিমের ভুলের কারণে এ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও ভর্তি হতে পারছে না। যা রীতিমতো তাদের প্রতি অন্যায়। প্রশাসন বিষয়গুলো বুঝতে পেরেও কোনও পদক্ষেপ নেয়নি এখনও। এতে আমরা হতাশ হয়েছি। যার প্রতিবাদে আমরা মানববন্ধন করেছি। বিষয়টি সঠিক সুরাহার জোর দাবি জানাই।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. আবু তৈয়ব বাংলানিউজকে বলেন, নিশ্চয়ই নিয়মানুযায়ী তাদের চেকআপ করা হয়েছিল। এরপরও তাদের যদি কোনও আপত্তি থাকে, তাহলে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবেদন করতে পারেন। কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের পুনরায় মেডিক্যাল চেকআপ করতে বলেন, আমরা করবো। ভুল তো হতেই পারে। কিন্তু সবকিছুর একটা নিয়ম আছে। আমরা নিয়মের বাইরে গিয়ে তো কিছু করতে পারি না।

চবি প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ওরা তিনজনই আমাদের কাছে এসেছে। ওদের কাগজপত্র জমা নিয়েছি আমরা। ভর্তি কমিটির সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ করলেই বুঝতে পারবো ওদেরকে এখন ভর্তি করানো যাবে কি-না। তবে সবকিছু আরও ভালোভাবে না জেনে এখনই ওদের ভর্তির বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২২
এমএ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad