ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ঘিরে উজ্জীবিত নগর যুবলীগ

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২২
ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ঘিরে উজ্জীবিত নগর যুবলীগ ...

চট্টগ্রাম: প্রায় ১০ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন।  সোমবার (৩০ মে) নগরের দি কিং অব চিটাগাং-এ সম্মেলনে নেতৃত্ব নির্বাচনে কী বার্তা দেবে যুবলীগ, তা নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।

সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন ও পুরাতনের সমন্বয়, নাকি নতুন মুখের চমক আসবে। নগরের কাজীর দেউড়ি, লালখান বাজার, ওয়াসার মোড়, প্রবর্ত্তক মোড়, চকবাজারসহ রাস্তায় তৈরি করা হয়েছে বিশাল বিশাল তোরণ।

বিভিন্ন সড়ক সহ অলিতে-গলিতে নানান রঙ্গের ফেস্টুন, ব্যানার, পোস্টারে ভরে গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজ নিজ নেতাদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন কর্মীরা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থীর চেয়ে কর্মী-সমর্থকদের মাঝে হিসাব-নিকাশ চলছে বেশি। সব মিলিয়ে সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে।

এদিকে তারিখ ঘোষণার পর থেকে শীর্ষ পদ নিজেদের দখলে রাখতে নেতারা যে যার মতো তদবির করে যাচ্ছেন। শেষ মুহুর্তে এসে কেউ কেউ ঘুরছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে। আবার কেউবা ধরনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের কাছে। দলটির কেন্দ্রীয় সূত্র জানায়, যোগ্যতায় যারা এগিয়ে থাকবেন-তারা শীর্ষ পদ পাবেন। সেক্ষেত্রে সাংগঠনিক দক্ষতা এবং দলের প্রতি নিবেদিতরাই পদে আসবেন। বিতর্কিতরা কোনোভাবেই যেন পদে আসতে না পারে, সে বিষয়ে সজাগ রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।  

৯ বছর সাড়ে দশ মাস আগে ২০১৩ সালের ৯ জুলাই ৯০ দিনের জন্য নগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ১০১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু ও যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদসহ কমিটির একাধিক সদস্য এখন যুবলীগে থাকতে চান না। যুগ্ম আহ্বায়ক ৫ জনের মধ্যে দিদারুল আলম দিদার ও মাহবুবুল হক সুমন ছাড়া অন্য তিনজনও আর যুবলীগ করতে আগ্রহী নন। তারা সকলে নগর আওয়ামী লীগের কমিটিতে পদপ্রত্যাশী।  

এর মধ্যে সম্মেলন করে নিয়মিত কমিটি করার কথা বলা হলেও গত ৯ বছরেও কমিটি হয়নি। নগরের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে কমিটি আছে মাত্র চারটিতে- উত্তর পতেঙ্গা, পতেঙ্গা, পাঠানটুলি ও শুলকবহর। সাংগঠনিক ১৬ থানায় কোনও কমিটি হয়নি। সংগঠনের নীতি নির্ধারক মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা কমিটির বিষয়ে তৎপর না হওয়ার কারণে দীর্ঘ সময় ধরে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে নগর যুবলীগ। আহ্বায়ক কমিটি ছাড়াও সাবেক কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা পদ-পদবী ছাড়াই নগর যুবলীগের ব্যানারে কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

কেন্দ্রীয় যুবলীগ সূত্রে জানা যায়, গত ২৬ মার্চ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সাংগঠনিক কমিটির জন্য সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে আগ্রহীদের জীবনবৃত্তান্ত জমা দিতে বলা হয়। এতে সভাপতি পদের জন্য ৩৫ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ৭২ জনের আবেদন জমা পড়ে। এসব আবেদন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই শেষ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এছাড়াও গত ১০ মে আওয়ামী যুবলীগের দফতর সম্পাদক মো. মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা শাখার সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া অন্য পদ-প্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। ১৪-১৬ মে পর্যন্ত জীবনবৃত্তান্ত জমা নেওয়া হয়েছে।  

সভাপতি পদে আলোচনায় আছেন নগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সিডিএর বোর্ড মেম্বার এম আর আজিম, নগর ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির সাবেক সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য দিদারুল আলম দিদার, বিজিএমইএ এর সহ সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও নগর ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির সাবেক সদস্য দেবাশীষ পাল দেবু, নগর ছাত্রলীগের স্টিয়ারিং কমিটির সাবেক সদস্য ও ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, ওমর গনি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য সুরনজিৎ বড়ুয়া লাবু, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, নগর যুবলীগের বর্তমান কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য নুরুল আনোয়ার, দিদারুল আলম চৌধুরী ও যুবলীগ নেতা হেলাল উদ্দিন।

সাধারণ সম্পাদক পদে ওমর গনি এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান তারেক, ওমরগনি এমইএস কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ও পাহাড়তলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওয়াসিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও চবি’র সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমন, নগর যুবলীগের সদস্য সনৎ বড়ুয়া, এমইএস কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আজিম রনি, মো. সালাউদ্দিন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সম্পাদক আশিকুন্নবী চৌধুরী, পলিটেকনিক ছাত্রলীগের সাবেক জিএস প্রকৌশলী আবু মো. মহিউদ্দিন, চবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপু, সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুজন, সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি রাজীব হাসান রাজন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ইয়াছির আরাফাত ও কমার্স কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুমন চৌধুরী।

সম্মেলন সফল করতে গঠন করা হয়েছে ৯টি উপ-কমিটি। প্রস্তুতি কমিটিতে নগর যুবলীগের কার্যকরী কমিটির ৯৫ জন সদস্যকে রাখা হয়েছে। উপ-কমিটির মধ্যে রয়েছে: প্রচার-প্রকাশনা উপ কমিটি, শৃঙ্খলা উপ কমিটি, আপ্যায়ন উপ কমিটি, মঞ্চ সাজসজ্জা উপ কমিটি, অর্থ উপ কমিটি, সাংস্কৃতিক উপ কমিটি ও অভ্যর্থনা উপ কমিটি। প্রস্তুতি কমিটিতে নগর যুবলীগের কার্যকরী কমিটির নেতা ও সব সাংগঠনিক ইউনিট ও পৌরসভার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়কদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

সম্মেলনের বিষয়ে নগর যুবলীগের আহ্বায়ক মহিউদ্দীন বাচ্চু বাংলানিউজকে বলেন, সম্মেলনের জন্য উপ কমিটিগুলো কাজ করছে। তাদের কাজ প্রায় শেষের দিকে, সম্মেলনের জন্য আমরা প্রস্তুত। গঠনতন্ত্র অনুসারে কাউন্সিলরদের ভোটে  সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হওয়ার কথা, যদি সেটা না হয় কেন্দ্রীয় নেতারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন।

চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম বলেন, বিতর্কিতদের যুবলীগে স্থান হবে না। প্রধানমন্ত্রীর দুর্দিনের কর্মীরা যদি রাজনীতি থেকে ছিটকেও পড়ে লাইনচ্যুত হয়, তাদের পুনরায় লাইনে আনা হবে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে দুর্দিনের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের স্থান দেওয়া হয়েছে। সারাদেশে এরকম কমিটি গঠন করা হবে।  

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, সম্মেলনের জন্য আমাদের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। যারা ছাত্রলীগ করেছে, তাদের কাজের মূল্যায়ন করা হবে। নতুন-পুরনো মিলিয়েই কমিটি হবে। যার যার যোগ্যতা অনুসারে পদ পাবে। দ্বিতীয় অধিবেশনে সিদ্ধান্ত হবে, কারা আসবে নতুন কমিটিতে। পুরনো যারা যুবলীগ করেছেন, তারাও থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, মে ২৭, ২০২২
এমআই/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।