ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ধ্বংসস্তূপ থেকে আধুনিক ডিপোতে বিএম ডিপো

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
ধ্বংসস্তূপ থেকে আধুনিক ডিপোতে বিএম ডিপো ...

চট্টগ্রাম: অগ্নিকাণ্ডে লণ্ডভণ্ড। জ্বলছে সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপো মরছে মানুষ।

কাঁদছে পুরো দেশের মানুষ। অগ্নিকাণ্ডের এতোটা ভয়াবহতা আগে আর কখনও দেখেনি চট্টলার মানুষ।
তিন মাস পেরোতেই সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা ও অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নবরূপে হাজির বিএম ডিপো। এ যেন ধ্বংসস্তূপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর অন্য দৃষ্টান্ত।

ডিপোর অগ্নিনিরাপত্তায় অত্যাধুনিক ফায়ার সিস্টেম বসানো, নতুন ভবন নির্মাণ, কন্টেইনার উঠানামায় অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ক্রয়সহ ডিপোর ভেতরে তৈরি হচ্ছে তিন লাখ গ্যালন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন পানির ট্যাংক। এছাড়াও ডিপোর আগুন নিয়ন্ত্রণে ‘ফোম ফায়ার সিস্টেম’ তৈরি করা হয়েছে। যে সিস্টেমের মাধ্যমে মাত্র ১৯ মিনিটে দুই লাখ ৮৬ হাজার স্কয়ারফিটের পুরো শেড ফোম করা যাবে। নতুন করে এই ডিপোর আধুনিকায়নে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন ডিপো কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ডিপো চালুর জন্য নয়টি লাইসেন্সও নেয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডিপোটি চালুর আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিপো ঘুরে দেখা যায়, নতুন লে-আউটের অধীনে একটি তিনতলা অফিস কক্ষ নির্মাণ করা হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে তিন লাখ গ্যালন রিজার্ভ পানির ট্যাংক বসানো হচ্ছে। চালু হচ্ছে তিনটি ফায়ার পাম্পের সমন্বয়ে ফায়ার সিস্টেম। দুর্ঘটনায় অক্ষত শেডটির পাশাপাশি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শেডটি নতুন আঙ্গিকে দ্বিতল করা হচ্ছে। খাদ্যপণ্য রাখার জন্য আলাদা শেড তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতের বিষয় মাথায় রেখে ১২ হাজার স্কয়ার ফিটের ডেঞ্জারাস গুডসের জন্য বিশেষ শেড বানানো হচ্ছে। নির্মানাধীন ফায়ার ফোম সিস্টেমটি আগুন লাগার খবরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিগন্যাল দিবে। সীমানা প্রাচীরের নিরাপত্তায় লাইন ক্রসিং ডিটেকশন সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। এই সিস্টেমে কেউ সীমানা প্রাচীর পার হতে চাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা পৌঁছে যাবে। এছাড়াও কন্টেইনার ও কার্গো ট্রাকিং সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যে সিস্টেম চালু হলে কন্টেইনার কার্গো যেখানেই থাকবে তার তথ্য থাকবে ডিপোতে সংরক্ষিত থাকবে। এমনকি কন্টেইনার মধ্যসাগরে থাকলেও এই সিস্টেমে তথ্য জানা যাবে।

দুর্ঘটনার পর পুরো ডিপোটিকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখার উদ্যোগ হিসেবে পরিচালনা টিমে পরিবর্তন, কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, ফায়ার ফাইটিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১২০ জন কর্মচারীকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অগ্নিনির্বাপণের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সেবাও চালু করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকে কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন প্রদানের পাশাপাশি নতুন করে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিপো কর্তৃপক্ষ।

বিএম কন্টেইনার ডিপোর নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মইনুল আহসান বলেন, অগ্নি দুর্ঘটনার পর নতুন লে-আউটে পুরো ডিপোটি আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। আগামীতে সার্ভিস ও কোয়ালিটির দিক থেকে এই ডিপোটি বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার মডেল ডিপো হিসেবে সামনে থাকবে। আগামী তিন বছরের একটি ভিশন নিয়ে আমরা এগুচ্ছি। যা আগামী ছয় মাসের মধ্যেই দৃশ্যমান হবে। এই ভিশন বাস্তবায়নের জন্য নিরাপত্তা, টিমওয়ার্ক, কাস্টমার ভেল্যু, বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়েই কাজ করবো।

মইনুল আহসান আরও বলেন, ডিপো চলে কাস্টমস রুলে। নিজের ইচ্ছেয় কিছু করতে পারবো না। পুরো ডিপো এলাকাটি কাস্টমস বন্ডেড এলাকা। দুর্ঘটনার পর সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে যে নিয়মগুলো ফলো করতে বলা হয়েছে সেগুলো মেনেই ডিপোটি মডেল হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছে। আমরা দুর্ঘটনা থেকে যে শিক্ষা নিয়েছি মূলত সেগুলো নিয়েই কাজ করছি। আগামী নভেম্বরে মধ্যে একটি শেড চালু করা হবে।

প্রসঙ্গত, ২৪ একর জায়গার উপর বিএম ডিপোর অবস্থান। সর্বশেষ ২০২১ সালে বিএম ডিপো রপ্তানি কন্টেইটার হ্যান্ডলিং করেছে প্রায় ৬০ হাজার টিইউএস, আমদানি করেছে ২২ হাজার টিইউএস, খালি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ৪০ হাজার।

বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ববিখ্যাত দুটি কোম্পানি এইচ অ্যান্ড এম ও মার্স্ক লাইনের শীর্ষপর্যায়ের কর্মকর্তারা বিএম ডিপো পরিদর্শনে যান। এ সময় তাঁরা পুরো ডিপোটি ঘুরে অবকাঠামো উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ করেন। পরে ডিপোটির আধুনিকায়ন কার্যক্রম দেখে প্রশংসা করেন। পরিদর্শনে আসা কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন, এইচ অ্যান্ড এম এর গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাট স্যামুয়েলসন, গ্লোবাল শিপিং ব্রজরন বুøমগ্রেন, বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান, পাবলিক এফায়ার্স, কার্লেভো এনেলি, শিপিং গুলশান আরা মুন্নি, ফ্রান্সিস গোমেজ, মায়েরস্ক এর কেসিএম কার্লোস কোয়েলার্ট পেগ, সোফিয়া পার্টোবি, কার্লেন ভ্যান ডার মার্ক, একতা কোহিলী, মানব মেহতা, অভিজিৎ পাল, রাশেদুজ্জামান রানা।

এসময় বিএম ডিপো লিমিটেডের পক্ষে নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মইনুল আহসান, সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার লে.কর্নেল মো. তৌফিকুল ইসলাম, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ নুরুল আকতার, ম্যানেজার মো. সাকিব উপস্থিত থেকে দুটি কোম্পানির দেশি-বিদেশি ডেলিগেটদের অভ্যর্থনা জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।