ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ

কলকাতা ব্যুরো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা, জুন ৮, ২০১২

কলকাতা: ভারত সরকারের কাছে যখন বিশেষ আর্থিক সাহায্য চেয়ে বারবার দ্বারস্থ হচ্ছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, তখনই একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পে এ রাজ্যের জন্য বরাদ্দ টাকা কমাচ্ছে কেন্দ্র। শুধু তাই নয়, একাধীক প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।



মহাকরণ সুত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে রাজ্যের বরাদ্দ ১০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী ওই ঘটনা জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে।

চিঠিতে তিনি এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। অবশ্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হচ্ছে, ২০১১-১২ অর্থবছরে ওই প্রকল্পে বরাদ্দ টাকা রাজ্য খরচ করতে না পারার কারণেই এ সিদ্ধান্ত।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ২০১১-১২ অর্থবছরে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ৪০৮ কোটি রুপি বরাদ্দ করে। যার মধ্যে রাজ্য সরকার মাত্র ৫৭ কোটি রুপি খরচ করতে পেরেছে। শুধু তাই নয়, এ ৫৭ কোটি রুপি খরচের প্রশংসাপত্র এখনো পৌঁছায়নি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে।

এক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য, গত অর্থবছরের বরাদ্দ টাকার বড় অংশই যেহেতু খরচ হয়নি, তাই ওই প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় সাহায্য ১০ শতাংশ কমানো হয়েছে। সাধারণভাবে জাতীয় গ্রামীন স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ রুপি কেন্দ্র ও ১৫ শতাংশ রুপি রাজ্য দেয়।

কিন্তু ওই প্রকল্পে রাজ্যের ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরে এক ধাক্কায় বরাদ্দ ১০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের কর্মকর্তাদের।

গ্রামীণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো এ প্রকল্পের ওপরে নির্ভরশীল। স্বাভাবিকভাবেই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, কেন্দ্রের সাহায্যের পরিমাণ কমে গেলে গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় বড়সড় ধাক্কা লাগতে পারে।

শুধু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই নয়, একই ধরনের চিঠি এসেছে কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রণালয় থেকেও। যে চিঠিতে জানানো হয়েছে, মৎস্যচাষ ও পশুপালনের বিভিন্ন প্রকল্পে পশ্চিমবঙ্গ প্রায় ৪০ কোটি রুপি খরচে ব্যর্থ। চিঠিতে বলা হয়েছিল, এমন অবস্থা চলতে থাকলে চলতি অর্থবছরে ওই খাতে বরাদ্দ বন্ধ করবে কেন্দ্র।

ইতিমধ্যেই জঙ্গলমহলসহ পশ্চিমবঙ্গের ৬টি আদিবাসী অধ্যুষিত জেলায় স্বাস্থ্য-পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্পে আপাতত টাকা জোগাবে না কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রাজ্যকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, জুলাই থেকে প্রকল্পটিতে বরাদ্দ বন্ধ হচ্ছে।

মূলত মা ও শিশুর স্বাস্থ্যরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে ২০০৭ সালে প্রথমে জলপাইগুড়ি, পরে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম ও দক্ষিণ দিনাজপুরে এই ‘ট্রাইব্যাল হেলথ প্রজেক্ট’ শুরু হয়েছিল। অন্তঃসত্ত্বার যত্ন, তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধ-ইনজেকশন দেওয়া থেকে শুরু করে প্রসব, এবং পরে শিশুর টিকাকরণ সবই এর আওতায়।

এছাড়া বিভিন্ন মোবাইল ক্যাম্পে অন্যান্য রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থাও থাকে। সরকারি-সূত্রের মতে, ছয় জেলার প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামে বুনিয়াদী স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অনেকটাই এ প্রকল্পের ওপরে নির্ভরশীল।

তবে এ মুহূর্তে রাজ্যের ওই ৬টি জেলায় আদিবাসী স্বাস্থ্যরক্ষার বিকল্প উপায় কি হবে, তার স্পষ্ট কোনো দিশা রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা দিতে পারছেন না।

কারণ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের নির্দেশ অনুসারে রাজ্যে ট্রাইব্যাল হেলথ প্রজেক্টের যাবতীয় কাজ ৩০ জুনের মধ্যে গুটিয়ে ফেলতে হবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারও ৬টি জেলায় সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলেছে, কাজের রিপোর্ট জমা দিতে। প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থের কতোটা খরচ হয়েছে, সে হিসেব দাখিলের পাশাপাশি অব্যবহৃত টাকা অবিলম্বে ফেরত দেওয়ার নির্দেশও জারি হয়েছে।

রাজ্যের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ দফতরের কমিশনার দিলীপ ঘোষ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় নির্দেশের কথা স্বীকার করে বলেছেন, ‘উপজাতি এলাকায় স্বাস্থ্য-পরিষেবার কাজ কোনো ভাবেই থমকে যাবে না। আমাদের একাধিক প্রকল্প চলে। তার মধ্যেই উপজাতিদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রকল্পের কাজগুলোকে ঢুকিয়ে নেওয়া হবে। ’

বাংলাদেশ সময় : ১৩২০ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা : অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।