ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

সিঙ্গুর মামলায় টাটাদের বিরুদ্ধে হার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের

কলকাতা ব্যুরো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১২

কলকাতা: টাটা ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিঙ্গুর মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে শুক্রবার। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে হার হয়েছে রাজ্য সরকারের।



শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় রায় ঘোষণা করা হয় কলকাতা হাইকোর্টের ২ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে। ২০১১ সালের ২ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকি চন্দ্র ঘোষ ও মৃণাল কান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। ৬ মাস ধরে সরকার এবং টাটা মটরস কর্তৃপক্ষের বক্তব্য শোনেন আদালত।

এর আগে গত ২৮ জুলাই কলকাতা হাইকোর্টের ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়ে সিঙ্গুর আইনকে বৈধ এবং সাংবিধানিক বলা হয়। সে রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে যায় টাটা মটরস। মে মাসেই এ মামলার রায় হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তবে আদালতের গ্রীষ্মকালীন ছুটি হওয়ায় পিছিয়ে যায় রায় ঘোষণার দিন।

ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দিয়ে পরিষ্কার জানিয়ে দেন, কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ সিঙ্গুর আইন সাংবিধানিক এবং বৈধ বলে রাজ্য সরকারের পক্ষে যে রায় দিয়েছিলেন তা অসাংবিধানিক ও অবৈধ আইন।

এ আইনে রাজ্য সরকার বলেছিল, টাটাদের ন্যানো গাড়ি কারখানার জন্য সাবেক বামফ্রন্ট সরকারের অধিগ্রহণ করা জমি ফেরত দেওয়া হবে কৃষকদের জনস্বার্থে। এ সিঙ্গুর আইন ২০১১কেই অসাংবিধানিক বলে রায় দেওয়া হল শুক্রবার।

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, এর বিরুদ্ধে আগামী ২ মাসের মধ্যে রাজ্য সরকার ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করতে পারে।

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ১৯ মে সিঙ্গুরে টাটাদের কারখানার জন্য জমি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন রাজ্য সরকার। জমি অধিগ্রহণের পর শুরু হয়ে যায় চেক বিলি। আর সিঙ্গুরে সরকারের এ জমি অধিগ্রহণ এবং অনিচ্ছুকদের জমি ফেরত দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেস।

২০০৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিডিও অফিসে অবস্থান বিক্ষোভরত মমতা ব্যানার্জিকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। ২০০৬ সালের ৩০ নভেম্বর বিধানসভায় ভাঙচুর চালায় তৃণমূল। ২০০৬ সালের ৫ ডিসেম্বর ধর্মতলায় অনশন শুরু করেন মমতা ব্যানার্জি। ২৬ দিন ধরে চলে অনশন।

২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গুরে উদ্ধার হয় তাপসী মালিকের লাশ। অভিযোগ ওঠে তাকে ধর্ষণ করে পুড়িয়ে হত্যা করেছে সিপিএম। তার মৃত্যুর ঘটনাকে সামনে এনে সিঙ্গুর আন্দোলন আরও জোরদার করে তৃণমূল।

২০০৮ সালের ২৪ আগস্ট টাটাদের কারখানার সামনে জাতীয় সড়কে ধরণা শুরু করেন মমতা ব্যানার্জি। ২০০৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাজ্যপালের মধ্যস্থতায় সিঙ্গুর সমঝোতার লক্ষ্যে রাজভবন চুক্তি সই হয় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও মমতা ব্যানার্জির মধ্যে।

এরপরই ২০০৮ সালের ৪ অক্টোবর টাটারা এ রাজ্য থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন।

এরপর ২০১১ সালের মে মাসে রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হয়। ২০১১ সালের ২০ মে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে সিঙ্গুরের অনিচ্ছুক কৃষকদের জমি ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ১৪ জুন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ‘সিঙ্গুর  জমি পুনর্বাসন এবং উন্নয়ন আইন’ পাস হয়। ২০ জুন এ বিলে সম্মতি দেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন।

২১ জুন সিঙ্গুরে জমিতে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ওই দিনই জমি থেকে উৎখাতের আশঙ্কা প্রকাশ করে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হয় টাটা মটরস।

২২ জুন বিচারপতি সৌমিত্র পালের এজলাসে শুনানি শুরু। ২৮ জুন স্থগিতাদেশ চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে টাটা। ২৯ জুন জমি বিলিতে স্থগিতাদেশ দিয়ে দ্রুত মামলার নিষ্পত্তির হাইকোর্টকে নির্দেশ দেন শীর্ষ আদালত।

১৪ জুলাই বিচারপতি সৌমিত্র পালের এজলাসে ফের আসে মামলাটি। ২৬ জুলাই ব্যক্তিগত কারণে মামলা শুনতে বিচারপতি পালের আপত্তির পর ২৮ জুলাই বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে সওয়াল-জবাব শেষ হয়।

২৮ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়। সে রায় যায় রাজ্য সরকারের পক্ষে।

৩১ অক্টোবর সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানান টাটারা। ২ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি পিনাকি চন্দ্র ঘোষ ও মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে টাটাদের আবেদনের শুনানি শুরু হয়।

শুক্রবার দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১২
আরডি/সম্পাদনা: বেনু সূত্রধর, নিউজরুম এডিটর ও অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।