ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিটমহল নিয়ে গোলটেবিল

কলকাতা ব্যুরো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১২
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিটমহল নিয়ে গোলটেবিল

কলকাতা: ভারত ও বাংলাদেশের ছিটমহল বিনিময়ের সমস্যা নিয়ে শুক্রবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেন স্টাডিজ বিভাগের পক্ষ থেকে একটি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

অধ্যাপক জয়ন্ত কুমার রায়ের সভাপতিত্বে এই বৈঠকে অংশ নেন ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সহ-সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত, ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের ছিটমহল পোয়াতির কুঠির প্রবীণ বাসিন্দা মনসুর আলি মিঞা, বৈশাখী টিভির কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি লাইলী বেগম, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের কলকাতার ব্যুরো চিফ রক্তিম দাশ, ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতির বিমল প্রামাণিক।



এদিন দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, এই আলোচনা আরও আগে হলে ভালো হত। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম এই বিষয়টি গুরুত্ব ও এই ছিটমহলের আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিলেন বলে ধন্যবাদ।

তিনি বলেন, “বিনিময় নিয়ে বিগত তিনটি চুক্তির মতো এই প্রটোকল চুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে আমরা সন্দিহান। তিনবিঘা করিডোরে চুক্তির সময় আমাদের বলা হয়েছিল এবার ছিটমহল বিনিময় হবে কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি আইনশৃঙ্খলার সমস্যা দেখিয়ে। ”

তিনি আরও বলেন, “২০১০ সালে ভারতের জনগণনার সময় কোচবিহারের জেলাশাসক বলেছিলেন আমার জেলায় এই গণনা করতে গেলে বাংলাদেশ সরকারের সাহায্য লাগবে। কারণ বাংলাদেশি ছিটমহল এই জেলায় রয়েছে। তাহলে আমাদের দেশের (ভারতের) সার্বভৌমত্ব কোথায় আছে?  গোয়া, সিকিম যদি ভারতের অর্ন্তভুক্ত হতে পারে তাহলে কেন ছিটমহল বিনিময় সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের সৎ প্রচেষ্টার অভাব আছে। ”

পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি বলেন, সরকার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করুন। জানা হোক ছিটমহলের কে কোথায় যেতে চান। বাংলাদেশ অবস্থিত ভারতীয় ছিটমহলগুলোতে ৩৭ হাজার ৩২৯ জন বাস করেন। তার মধ্যে মাত্র ৭৪৩ জন ভারতে আসতে চান বিনিময়ের পরে। এটা আমাদের জরিপের তথ্য। ”

তিনি বলেন, ছিটমহলগুলো ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক পাচারের কেন্দ্র হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

কোচবিহার জেলার বাংলাদেশি ছিটমহলে ১৫ দশমিক ৮ কোটি রুপির গাঁজা নষ্ট করা হয়েছে সম্প্রতি। এটা ৫০ শতাংশ। জেলাশাসক জানিয়েছেন, বাকি ৫০ শতাংশ নষ্ট করা যায়নি।

লাইলী বেগম বলেন, “আমার কুড়িগ্রাম জেলায় ১২টি ছিটমহল রয়েছে। এরা মানবেতর জীবনযাপন করেন। পুলিশ নেই, আইনের শাসন নেই। অপরাধীদের অভয়ারণ্য। ছিটমহল নিয়ে শহরের সাংবাদিকদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয়। তারা বিষয়টি ভালো জানেন না। তাই মিডিয়ায় সঠিক সংবাদ আসে না। আমরা যারা ছিটমহলের পাশে বসবাস করি তারা জানি সমস্যাটা কতটা গভীরে।

মনসুর আলি মিঞা বলেন, “আমি আজ এখানে এসেছি তা রাষ্ট্রের ভাষায় অবৈধ। কারণ আমি খাতা-কলমে বাংলাদেশের বাসিন্দা। কিন্তু আমার বাংলাদেশের কোনো পরিচয়পত্র নেই। আমার জন্ম ব্রিটিশ ভারতে। বাংলাদেশ গিয়ে শরণার্থী হতে চাই না। আমি জন্মেছি ভারতে। ভারতেই মরতে চাই। একই ভাবে বাংলাদেশের ভেতরে ছিটের বাসিন্দারাও তাই চান। একজন মুসলিম হয়ে আমার ইচ্ছা ছিল হজে যাওয়া, সেই অধিকার আমার নেই। আমার মতো অনেকেই হজে যাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা কী মানবাধিকার হরণের মধ্যে পড়ে না?”

রক্তিম দাশ বলেন, “বাংলানিউজের পক্ষ থেকে আমরা এই মানুষগুলোর কথা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি বার বার। আজ নাগরিকত্ব না থাকার কারণে ছিটমহলের মেয়েদের বিয়ে হয় না। কোনো সন্তানসম্ভবা মা তার সন্তানের জন্ম দেওয়ার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেন না। বিভিন্ন রোগের টিকাকরণ কর্মসূচি এখানে নেওয়া হয় না। এর ফলে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যেও আমরা দুদেশ রয়েছি। ”

তিনি বলেন, এই ছিটমহল বিনিময় না হওয়ার ফলে দুদেশের সরকার যে রাজস্ব বা বিভিন্ন প্রকারের কর পাচ্ছেন না তা তো হিসাব করা হচ্ছে না। এই ব্যবস্থা সুযোগে একদল অসাধু লোক ছিটের বাইরের লোকের সাহায্যে ভয় দেখিয়ে জোর করে নামমাত্র মূল্যে ছিটমহলের নামে স্টাম্প পেপার তৈরি করে জমি বাড়ি রেজিস্ট্রি করাচ্ছে। এই খবর প্রথম বাংলানিউজে বের হওয়ার পর ছিটের নিরীহ বাসিন্দাদের বাড়িতে সন্ত্রাসীরা আগুন লাগিয়ে দেয়। ”

বিমল প্রামাণিক বলেন, “২০১১ চুক্তি আমাদের আশাবাদী করেছে। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ নিহত হওয়ার কারণে এই চুক্তি সেই সময় বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ তৎকালীন সরকার বাংলাদেশের স্বাধীনতার সময়কার আর্দশ থেকে সরে গিয়েছিল। এই ব্যবস্থা অনেকদিন চলেছে। ছিটমহলে পাকিস্তান আমলে ১৯৫১ ও ১৯৬১ জনগণনা করা হয়েছিল। ”

তিনি বলেন, ভারতীয় ছিটমহল বা বাংলাদেশের ছিটমহলে প্রকৃত বসবাসকারীরা আর নেই। বাংলাদেশি ছিটমহলে ভারতীয়রা আর ভারতীয় ছিটমহলে বাংলাদেশিরাই বর্তমানে বসবাস করেন। এটা একটা সমস্যা। আর বিনিময় হলে ১০ হাজার একর জমি বাংলাদেশকে দিয়ে দিতে হবে। ভারতের সংবিধান অনুসারে জমি নেওয়া যেতে পারে কিন্তু দেওয়া যায় না। এর জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩০, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১২
আরডি/রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।