ঢাকা: সঙ্গ ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে কংগ্রেসকে বেকায়দায় ফেলেছেন মমতা। ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ এলায়েন্সে (ইউপিএ) দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক হয়ে থাকা তার দল তৃণমূল কংগ্রেসের এক পূর্ণমন্ত্রী ও ছয় প্রতিমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করছেন আগামী শুক্রবার।
এর ফলে আসন সংখ্যার হিসেবে এখনই সরকারের পতন হয়তো হচ্ছে না, তবে বাইরে থেকে ইউপিএ সরকারকে সমর্থন জোগানো উত্তর প্রদেশের দুই বড় দল মুলায়ম সিং যাদবের সমাজবাদী পার্টি ও মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টি ভোল পাল্টালে দারুণ গ্যাঁড়াকলে পড়বে কংগ্রেস।
এ পরিস্থিতি সামলাতে তাই এরই মধ্যে রান্নার জন্য পরিবারপিছু ভর্তুকির গ্যাস সিলিন্ডার সংখ্যা ৬ থেকে বাড়িয়ে ৯টি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস।
তবে ছোট ব্যবসায় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, বর্ধিত ডিজেলের দাম তিন/চার টাকা কমানো বা সারের দাম কমানোর মতো দাবিগুলো নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোন পরিবর্তিত ভাবনার কথা এখন পর্যন্ত শোনা যায়নি।
উপরন্তু, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তার পরিকল্পিত অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে অনঢ় রয়েছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা সম্ভব নয় বলে এখনও আভাস দিচ্ছে তার সরকার।
এ পরিস্থিতিতে ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল তৃণমূল আগামী শুক্রবার সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনঢ় রয়েছে। ওই দিন বিকেলে তৃণমূল সংগ্রেসের একজন মন্ত্রী ও ছয় প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে।
যদি তাই হয় তাহলে ইউপিএ নেতা কংগ্রেসের জন্য মোটেই সুখকর হবে না সেটা। যদিও লোকসভায় ১৯ এমপি নিয়ে তৃণমূল সরে যাওয়ার পরও প্রয়োজনের চেয়ে ৩৫ এমপি বেশি থাকবে ইউপিএতে, কিন্তু মায়াবতীর বহুজন সমাজবাদী পার্টিসহ অন্যান্য আঞ্চলিক দলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়বে ইউপিএ। সেক্ষেত্রে আগাম নির্বাচনের আশঙ্কা জিইয়ে রেখেই এগুতে হবে তাদের।
কেননা ৫৪৩ সদস্য বিশিষ্ট ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় ইউপিএর সদস্য সংখ্যা এখন ২৭৬। বাইরে থেকে সমর্থন দেওয়া সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজবাদী পার্টি, জেডি (এস) ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল মিলে ইউপিএর সদস্য ৩২৬। প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার জন্য সরকারের দরকার ২৭২ ভোট।
তাই লোকসভার আগাম নির্বাচনের কথা চিন্তা করে মুলায়ম সিং যাদব তার সমাজবাদী পার্টি বা মায়াবতী তার বহুজন সমাজবাদী পার্টি নিয়ে ইউপিএ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করলে মুশকিলে পড়বে কংগ্রেস। লোকসভায় যথাক্রমে ২২ ও ২১ জন করে এমপি রয়েছে এ দুই দলের।
কংগ্রেস ও তার মিত্ররা মিলে এখন ৩২৯ আসনের প্রতিনিধিত্ব করছে লোকসভায়। তৃণমূল বেরিয়ে গেলে এ সংখ্যা নেমে আসে ৩১০। মমতা ও মুলায়ম বেরিয়ে গেলে হয় ২৭৪। আর তাদের সঙ্গে মায়াবতী যোগ হলে ২৫৫টিতে নেমে যায় ইউপিএর আসন সংখ্যা।
সব দিক বিবেচনায় তাই এখনও তৃণমূলকে সঙ্গে রাখতে চাইছে কংগ্রেস। এজন্য খোদ কংগ্রেস সভাপতি ও ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী মাঠে নামছেন বলেও আভাস দিচ্ছে দিল্লি।
কেননা যে কোন মূল্যে আগাম নির্বাচন পরিহার করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। একই সঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্সকেও (এনডিএ) কোন সুযোগ দিতে চায় না তারা। পরবর্তী নির্বাচনে মমতা বা বর্তমানে ইউপিএ জোটে থাকা কেউ বিজেপির সঙ্গে যাতে গাঁটছড়া না বাঁধতে পারে সে দিকেও নজর রাখতে হচ্ছে তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১২
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর