ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

‘উপমহাদেশের নারীর সম অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম সুফিয়া কামাল’

কলকাতা ব্যুরো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১২
‘উপমহাদেশের নারীর সম অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম সুফিয়া কামাল’

কলকাতা: উপমহাদেশের নারীদের সম অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত ছিলেন কবি বেগম সুফিয়া কামাল। শনিবার কলকাতার গোর্কি সদনে মহিয়সী এই নারীর জন্মশতবর্ষ পালন অনুষ্ঠানে এ মত ব্যক্ত করেন বিশিষ্টজনেরা।



এ উপলক্ষে বিকাল সাড়ে ৫টায় ‘অসাম্প্রদায়িক মানবাধিকার আন্দোলনে দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সমিতি।

সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এমপি, বেগম সুফিয়া কামালের কন্যা  সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মানবাধিকার সংগঠক সুলতানা কামাল, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার আবিদা ইসলাম, রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারের ডিরেক্টর আলেকসান্দার মজিতকা, কবি গীতেশ শর্মা ও মৈত্রী সমিতির সম্পাদক অজয় দে।

সভায় সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের নারীদের পর্দাপ্রথা থেকে বেরিয়ে আসতে বেগম সুফিয়া কামাল পথ দেখিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রতিদিন সকাল তার বাসায় গিয়ে চা খেতে খেতে বিভিন্ন পরামর্শ করতেন।

তিনি বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করছি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়তে। আমরা যদি আবার ক্ষমতায় আসি, তাহলে প্রকৃত ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। ’’

সুলতানা কামাল বলেন, মৌলবাদের শিকার সবচেয়ে বেশি হন নারীরা। তাই তারা প্রাণপনে চেষ্টা করেন এর বিরোধিতা করতে। দক্ষিণ এশিয়ায় অসাম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নারীরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন।

তিনি বলেন, বেগম সুফিয়া কামাল কোনোদিন বিদ্যালয়ে যাননি। তা সত্ত্বেও স্বশিক্ষিত হয়ে কবিতা লেখা শুরু করেন। তিনি বিধবা হয়ে কর্পদকশূন্য অবস্থায় কলকাতায় এলেন শিশু কন্যাদের নিয়ে। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন। তখন তার বয়স বিশের নিচে। কবিগুরু সেই সময় পত্রিকার সম্পাদকদের অনুরোধ করলেন তার কবিতা প্রকাশের জন্য। তিনি নজরুলের স্নেহধন্য ছিলেন। কপালে সিদুঁর দিয়ে হিন্দু মেয়েদের মতো গান্ধীজির সামনে গিয়ে চরকা কেটেছিলেন। তিনিই প্রথম বাঙালি নারী যিনি কলকাতায় বিমানে সফর করেছিলেন।

সুলতানা কামাল আরও বলেন, রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ পালনের আন্দোলন, উনসত্তরে গণ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ২ নম্বর সেকটরের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সরাসরি রাজনীতি না করেও তিনি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট আন্দোলনে নারীদের সক্রিয় করেছিলেন।

শাহরিয়ার কবির বলেন, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশে নারী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যুদ্ধাপরাধীদের সনাক্তকরণেও তিনি উল্লেখযোগ্য কাজ করেছিলেন।

গীতেশ শর্মা বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মতো ভারতে মৌলবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে না। এদেশে বুদ্ধিজীবিরা বিক্রি হন। ধর্মনিরপেক্ষতা না থাকলে নারীদের মুক্তি সম্ভব নয়। রাজনীতিতে ধর্ম থাকলে মুক্তি কোনো দিনই আসবে না। ধর্মকে মেনে ধর্মনিরপেক্ষতা হয় না। এটা আমাদের বুঝতে হবে। ’’

অমলেন্দু দে বলেন, বাংলাদেশে ধর্মীয় সাংস্কৃতিক বহুত্ববাদের লড়াইয়ে অগ্রদূত ছিলেন বেগম সুফিয়া কালাম। আসলে নারীরাই যুগে যুগে ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রকে তুলে ধরেন।

আলোচনা পর্বের শেষে সংগীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং শ্যামা রহমান।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected] 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।