ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন মঙ্গলবার

কলকাতা ব্যুরো | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১২
মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন মঙ্গলবার

কলকাতা: ভারতের জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর জন্মদিন মঙ্গলবার। এই দিনে ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দের ২ অক্টোবরে গুজরাটের সমুদ্র-উপকূলীয় শহরে পোরবন্দরের পৈত্রিক বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।

পিতার নাম করমচাঁদ গান্ধী, তিনি ছিলেন হিন্দু মোধ গোষ্ঠীর। করমচাঁদ গান্ধী পোরবন্দর রাজ্যের দেওয়ান ছিলেন। মায়ের নাম পুতলি বাই, তিনি ছিলেন প্রণামী বৈষ্ণব গোষ্ঠীর কন্যা। করমচাঁদের চতুর্থ স্ত্রী পুতলি বাই। উল্লেখ্য, তার আগের তিন স্ত্রী সন্তান প্রসবকালে মারা যান।

১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৩ বছর বয়সে মোহনদাস গান্ধী তাঁর বাবা-মায়ের পছন্দে ১৪ বৎসর বয়সী কস্তুর বাইকে (কস্তুবা নামেও পরিচিত) বিয়ে করেন। তাদের চার পুত্র সন্তান জন্মেছিল। তাদের নাম ছিল– হরিলাল গান্ধী (জন্ম ১৮৮৮), মনিলাল গান্ধী (জন্ম ১৮৯২), রামদাস গান্ধী (জন্ম ১৮৯৭) এবং দেবদাস গান্ধী (জন্ম ১৯০০) সালে।

১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে মোহনদাস গান্ধী প্রবেশিকা পরীক্ষায় (ম্যাট্রিকুলেশন ) পাশ করেন রাজকোট হাইস্কুল থেকে। এরপর কিছুদিন তিনি গুজরাটের ভবনগরের সামালদাস কলেজে লেখাপড়া করেন। ১৮৮৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য তিনি ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে ভর্তি হন। উল্লেখ্য, ইংল্যান্ডে যাবার আগে জৈন সন্ন্যাসী বেচার্জীর সামনে তিনি তার মায়ের কাছে শপথ করেছিলেন যে, তিনি কখনো মাংস, মদ খাবেন না এবং হিন্দু নৈতিক আদর্শ অনুসরণ করে চলবেন। এই কারণে তিনি লন্ডনের গুটি কয়েক নিরামিষভোজী খাবারের দোকানে আহার করতেন। এই সূত্রে তিনি নিরামিষভোজী সংঘে যোগ দেন এবং ওই সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি এই সংঘের একটি স্থানীয় শাখাও প্রচলন করেন। নিরামিষভোজী অনেক সদস্যই আবার থিওসোফিক্যাল সোসাইটির সদস্য ছিলেন।

উল্লেখ্য, ১৮৭৫ সালে এই সংঘ স্থাপিত হয়েছিল। এই সংঘে বৌদ্ধ এবং হিন্দু ধর্মভিত্তিক সাহিত্য পড়ানো হতো। এই সংঘের অনুপ্রেরণায় তিনি ভগবত গীতা পাঠ করেছিলেন। পরে তিনি খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, ইসলামসহ অন্যান্য ধর্ম সম্পর্কে পড়াশোনা করেন।

১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে ব্যারিস্টার হন এবং জুন মাসে ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন। ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করার জন্য, তাঁর জ্ঞাতিগোষ্ঠীর কিছু লোক, তাঁকে জাতিচ্যুতের রায় দিয়েছিলেন। এ কারণে জ্ঞাতিগোষ্ঠীর সাথে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল।

প্রথমে তিনি বোম্বাই আদলতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু লাজুক থাকার কারণে এই আদালতে বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেননি। এরপর তিনি রাজকোটে ফিরে আসেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে তিনি এক বছরের জন্য Dada Abdulla & Co. নামক একটি ভারতীয় কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার নাটালে যান। এই কোম্পানির অংশীদার আব্দুল করিম জাভেরি তাঁকে দক্ষিণ আফ্রিকায় অবস্থিত অফিসের মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনার জন্য নিয়োগ দিয়েছিলেন। এরপর প্রায় ২১ বৎসর তিনি দক্ষিণ আফ্রিকাতে কাটান।

তিনি নাটালের সুপ্রিম কোর্টে সর্বপ্রথম ভারতীয় আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। সেসময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের ভোটাধিকার ছিল না। এই অধিকার আদায়ের বিল উত্থাপিত হলে, তা আদালত বাতিল করে দেয়। এই বিষয়টির সূত্রে তিনি সে সেদেশের ভারতীয়দের অধিকার সচেতন করে তুলেছিল। ১৮৯৪ সালে তাঁর নেতত্বে নাটাল ইন্ডিয়ান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়।

দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে প্রথমেই তিনি ভারতীয় ও কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শেতাঙ্গদের বৈষম্য আচরণ লক্ষ্য করেন। ১৮৯৫ সালে কিছু ঘটনায় তাঁকে ক্রমে ক্রমে প্রতিবাদী করে তোলে। এখানে তিনি একদিন ডারবানের আদালতে ম্যাজিস্ট্রেট তার পাগড়ি সরিয়ে ফেলতে বলেন। গান্ধী তা অগ্রাহ্য করেন এবং এই কারণে আদালত কক্ষ থেকে ক্ষোভে বেরিয়ে পড়েন। পিটার ম্যারিজবার্গের একটি ট্রেনের ভ্রমণ করার সময় প্রথম শ্রেণির বৈধ টিকিট থাকা সত্ত্বেও, প্রথম শ্রেণির কামরা থেকে তৃতীয় শ্রেণির কামড়ায় যেতে বাধ্য করা হয়। স্টেজকোচে ভ্রমণের সময় এক ইউরোপীয় যাত্রীকে জায়গা না দেওয়ার জন্য করে দেয়ার জন্য, তাঁকে ফুট বোর্ডে চড়তে বলা হলে, তিনি তা অস্বীকার করেননি।

১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতে সংক্ষিপ্ত সফর করেন। এই সময় দক্ষিণ আফ্রিকায় ভারতীয়দের অধিকার নিয়ে ভারতে আন্দোলন করেন। এই কারণে ১৮৯৭ সালের জানুয়ারিতে যখন তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে আবার দক্ষিণ আফ্রিকা যান, তখন এই সময় প্রবাসী ভারতীয়দের নেতা হিসাবে সম্বর্ধনা পান।

১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে বেয়ার যুদ্ধের সময় তিনি ভারতীয়দের দ্বারা একটি অ্যাম্বুলেন্স বাহিনী গঠন করেন। এই কারণে তিনি যুদ্ধ পদক লাভ করেন। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি ভারতে ফিরে আসেন। এই সময় ট্র্যান্সভালে এশীয়দের বিরুদ্ধে আইন প্রবর্তনের বিপক্ষে আন্দোলন করেন। এই কারণে ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে প্রবাসী ভারতীয়দের দ্বারা অনুরুদ্ধ হয়ে, আবার দক্ষিণ আফ্রিকায় ফিরে যান। এবার ইনি ট্র্যান্সভালে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে জোহানেসবার্গে প্লেগ দেখা দিলে তিনি একটি চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেন। ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দে জুলু বিদ্রোহ শুরু হলে, আহতদের সেবার জন্য একটি ভারতীয় বাহিনী তৈরি করে, সেবা প্রদান করেন।

১৯০৬ সালে ট্র্যান্সভাল সরকার উপনিবেশের ভারতীয়দের নিবন্ধনে বাধ্য করানোর জন্য একটি আইন পাশ করে। ১১ সেপ্টেম্বর জোহানেসবার্গের এক সভায় তিনি সবাইকে এই আইন বর্জন করতে বলেন। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে নিষ্ক্রিয় আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। এ সময় আইন অম্যান্য করা, নিজেদের নিবন্ধন কার্ড পুড়িয়ে ফেলাসহ বিভিন্ন কারণে অনেক ভারতীয়কে বন্দী করা হয়। একই কারণে অনেক ভারতীয় হতাহত হন। শান্তিকামী ভারতীয়দের উপর এরূপ নিগীড়নমূলক আচরণের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় সাধারণ মানুষও প্রতিবাদ করা শুরু করে। সরকার ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ট্র্যান্সভাল ত্যাগ করার জন্য আদেশ জারি করে। কিন্তু তিনি এই আদেশ অগ্রাহ্য করলে, তাঁর দুই মাসের কারাদণ্ড হয়। পরে জেনারেল স্মার্টস তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে একটি আপোষ রফায় আসেন এবং তাঁর কারাদণ্ডাদেশ প্রত্যাহার করেন। এই আপোষের কারণে ক্ষুব্ধ ভারতীয় পাঠানরা তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেন। পরে স্মার্টস তাঁর আপোষ নাকচ করলে, তিনি পুনরায় নিষ্ক্রিয় আন্দোলন শুরু করেন। এই কারণে ইনি দুই মাসের সশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করেন।

১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে ডেপুটেশনে তিনি ইংল্যান্ড যান। নভেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে জাহাজে ফিরবার সময়, তাঁর জীবনাদর্শ ও রাজনৈতিক মতবাদ সম্পর্কিত বই স্বরাজ রচনা করেন।

১৯১২ খ্রিস্টাব্দের দিকে তিনি ইউরোপীয় পোশাক এবং দুধ পরিত্যাগ করেন। এই সময় থেকে তিনি শুকনো ও তাজা ফল খেয়ে জীবন ধারণের অভ্যাস করা শুরু করেন। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার ভারতীয়দের উপর মাথাপিছু ৩ পাউন্ড কর ধার্য করে। এই করারোপের প্রতিবাদে গান্ধীজী আন্দোলন শুরু করেন।

এরপর তিনি ইংল্যান্ডে যান। ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় সেখানে ভারতীয়দের দ্বারা একটি এ্যাম্বুলেন্স বাহিনী তৈরি করেছিলেন। ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ভারতে প্রত্যাবর্তন করেন। যুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের সহায়তা করার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে কাইসার-ই-হিন্দ স্বর্ণপদক প্রদান করে। এরপর ইনি ভারতে ফিরে আসেন এবং মে মাসে আহমেদাবাদ সবরমতী নদীর তীরে সত্যাগ্রহ আশ্রম স্থাপন করেন। ১৯১৫ -১৬ খ্রিষ্টাব্দে ইনি রেলপথে ভারত এবং বার্মা (বর্তমানে মায়ানমার) ভ্রমণ করেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকদের বিদেশ প্রেরণের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সাফল্য লাভ করেন। এই বৎসরেই চরকায় সুতা কেটে সেই সুতা থেকে কাপড় তৈরির ধারণা লাভ করেন।   এপ্রিল মাসে বিহারের চম্পাবরণে নীলচাষীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে গ্রেফতার হন। পরে তাঁকে মুক্তিও দেওয়া হয়। এরপর তিনি বিহার সরকার কর্তৃক রায়তদের অবস্থা অনুসন্ধান কমিটির সদস্য নিযুক্ত হন।

১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে আহমেদাবাদ বস্ত্র কারখানায় শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য শ্রমিকদের নিয়ে আম্দোলন করেন। এই আন্দোলন সহজে মিটমাট হওয়ার জন্য উপবাসসহ প্রার্থনা করেন। এরপর শস্যহানির জন্য বোম্বাই জেলার খাজনা মওকুফের জন্য সত্যাগ্রহ করেন। দিল্লীতে ভাইসরয়ের যুদ্ধ পরিষদের সভায় তিনি হিন্দিতে বক্তৃতা দেন। পরে যুদ্ধে যোগদানের জন্য লোক সংগ্রহের জন্য কয়রা জেলা ভ্রমণ করেন।

১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে রাউটাল বিল বাতিলের জন্য দরখাস্ত করেন। এপ্রিল মাসে সর্বভারতীয় সত্যগ্রহ আন্দোলন শুরু হয়, এবং হরতাল পালিত হয়। এরপর পাঞ্জাবে তাঁর প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে, তিনি পাঞ্জাবে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এই কারণে দিল্লি যাওয়ার পথে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৩ এপ্রিল তারিখে জালিয়ানওয়ালাবাগে হত্যাকাণ্ডের পর গান্ধীজী সবরমতী আশ্রমে ৩ দিনের উপবাস করেন। ১৪ই এপ্রিল তারিখে নদিয়াদে স্বীকার করেন যে, সত্যাগ্রহ করে তিনি হিমালয়তূল্য ভুল করেছেন। এই বৎসরের সেপ্টেম্বর মাসে গুজরাটি ভাষায় নবজীবন পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন।

উল্লেখ্য, এই পত্রিকাটি পরে হিন্দি ভাষাতেই প্রকাশিত হওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। অক্টোবর মাসে তাঁর সম্পাদনায় ইংরেজি পত্রিকা `ইয়ং ইন্ডিয়া` সম্পাদনা শুরু করেন। নভেম্বর মাসে দিল্লীতে নিখিল ভারত খিলাফত কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয় এবং সভার সভাপতিত্ব করেন গান্ধীজী। এই সময় মনটেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার গ্রহণ করার জন্য অমৃতসর কংগ্রেসকে পরামর্শ দেন।

১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তুরস্কের সুলতানের খিলাফত অধিকার রক্ষার জন্য ভাইসরয়ের কাছে ডেপুটেশনের নেতৃত্ব দেন। এই বৎসরে ভাইসরয়ের কাছে কাইসার-ই-হিন্দ পদক, জুলু পদক ও বুর যুদ্ধ পদক প্রত্যার্পণ করেন। ডিসেম্বর মাসে নাগপুর কংগ্রেসের অধিবেশন ঘোষণা করা হয়।

১৯২১ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাঝে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাহী দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। গুজরাটে তাঁর নেতৃত্বে কংগ্রেস স্বরাজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন সংবিধান গ্রহণ করেন। একই সাথে টোকেন ফি দিতে রাজি হওয়া যে কোন ব্যক্তির জন্য দলের সদস্যপদ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে ভাইসরয়কে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, গুজরাটের বরদৌলিতে সত্যাগ্রহ অভিযান চালনা করা হবে। কিন্তু ৫ই ফেব্রুয়ারিতে উত্তর প্রদেশের চৌরিচোরাতে জনতা ২১ জন কনস্টেবল ও একজন সাব ইন্সপেক্টরকে অগ্নিদগ্ধ করে মেরে ফেলেন। এই সহিংস ঘটনার জন্য টানা ৫ দিন উপবাস করেন। এরপর সত্যাগ্রহ আন্দোলন পরিত্যাগ করেন। ১৯২২ সালের ১০ মার্চ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় এবং ১৮ মার্চে বিচারে তাঁকে ছয় বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

১৯২৪ সালের জানুয়ারি মাসে পুনাতে তাঁর এপেনডিসাইটিসের অপারেশন করা হয় এবং ৫ ফেব্রুয়ারিতে তাঁকে মুক্তি দেয়া হয়। ১৮ সেপ্টেম্বরের হিন্দু-মুসলিমদের বোধ ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত করার জন্য ২১ দিনের উপবাস করেন। ডিসেম্বর মাসে বেলগাঁও কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে সেপ্টেম্বর মাসে নিখিল ভারত সুতাকাটা সমিতি স্থাপিত হয়। নভেম্বর মাসে আশ্রমবাসীদের একজন একটি অপকর্ম করে। এই কারণে গান্ধীজী ৭ দিন `বদলি উপবাস` করেন। এই সময়ে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ The Story of my Experiments with Truth  নামক গ্রন্থ রচনা শুরু করেন।

১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে কলকাতায় কংগ্রেস অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এই অধিবেশনে ঘোষণা করা হয়, ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের শেষ হওয়ার আগে ভারতকে ডোমিনিয়ন স্টেটাস প্রদান না করলে, কংগ্রেস আন্দোলন করবেন। কিন্তু ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে লাহোরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস অধিবেশনে পূর্ণ স্বরাজ বা পূর্ণ স্বাধীনতার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। ৩১ ডিসেম্বরে ভারতীয় পতাকার উন্মোচন কারা হয় লাহোরে।

১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি লাহোর মিলিত হয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দিনটিকে ভারতীয় স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উৎযাপন করে। ফেব্রুয়ারি মাসে নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটি গান্ধীজী আইন অমান্য আন্দোলনের একনায়ক হিসাবে নিযুক্ত হন। মার্চ মাসের শুরুতে, ভাইসরয়কে এক চিঠিতে জানান যে, কংগ্রেসের দাবি না মানলে, তিনি লবণ আইন ভঙ্গ করার আন্দোলন শুরু করবেন। ১২ মার্চ তারিখে এলাহাবাদ থেকে ৪০০ কিলোমিটার হেঁটে  ডান্ডি সমুদ্র সৈকতে  পৌছান ৬ এপ্রিলে এবং লবণ সংগ্রহ শুরু করেন। এই সময় হাজার হাজার ভারতীয় তাঁর সাথে হেঁটে সাগরের তীরের পৌছান। উল্লেখ্য এটি ছিল ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে অন্যতম সফল প্রয়াস। ৫ মে তারিখে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং বিনা বিচারে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। এর ফলে সারা দেশে বিক্ষোভ হলে, প্রায় লক্ষাধিক আন্দোলনকারীকে গ্রফতার করা হয়।

১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জানুয়ারিতে তিনি বিনা শর্তে মুক্তি লাভ করেন। এই সময় সরকার গান্ধীর সাথে সমঝোতা করার জন্য লর্ড এডওয়ার্ড আরউইনকে প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ করে।   ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে বড়লাট লর্ড আরউইনের সঙ্গে তাঁর অনেকগুলি সাক্ষাৎকার ঘটে এবং অবশেষে আরউইন-গান্ধী চুক্তি সম্পাদিত হয়। এরপর ২৯ আগস্ট তারিখে তিনি কংগ্রেসের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে ইংল্যান্ডে গোল-টেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য রওনা হন। লণ্ডনে এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়েছিল সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। ২৬ সেপ্টেম্বরে ল্যাঙ্কশায়ারের ডারওয়েনে মহিলা বস্ত্রশ্রমিকদের সাথে মিছিল করেন। অধিবেশন শেষ ৫ ডিসেম্বরে তিনি লণ্ডন ত্যাগ করেন। ২৮ ডিসেম্বরে বোম্বাই পোঁছুলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয় এবং বিনা বিচারে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সাম্প্রদায়িক ভাগ-বাঁটোয়ারা সিদ্ধান্ত অনুসারে হরিজনদের পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা রহিতকরণের জন্যা, ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর তিনি `আমরণ উপবাস` শুরু করেন। ২৬ সেপ্টেম্বর এই দাবি মেনে নিলে তিনি অনশন ভঙ্গ করেন। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজি ও হিন্দিতে সাপ্তাহিক হরিজন পত্রিকা স্থাপিত হয়। ৮ই মে থেকে তিনি আত্মশুদ্ধির জন্য ২১ দিনের উপবাস শুরু করেন। এই রাত ৯টার সময় তিনি বিনাশর্তে কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন। ভারতের জন্য অহিতকর সরকারে সকল আদেশ প্রত্যাহরের জন্য ৯ মে থেকে ৬ সপ্তাহের জন্য আইন অমান্য আন্দোলন স্থগিত করেন। ২০শে মে তারিখে উপবাস ভঙ্গ করেন। ২৬ জুলাই-তে  তিনি সত্যাগ্রহ আশ্রম তুলে দেন। ৩০ জুলাই তারিখে বোম্বাই সরকারকে জানান যে, ৩৩ জন অনুসারী নিয়ে আহমেদাবাদ থেকে রাস পর্যন্ত আইন অমান্য আন্দোলনের প্রচারণ চালাবেন। এই কারণে ৩১ জুলাই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৬ আগস্ট থেকে অনশন শুরু করলে, ২৩ আগস্টে তাঁকে বিনা শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়। ৭ নভেম্বর থেকে তিনি হরিজন উন্নয়নের কাজ শুরু করেন।

১৯৩৪ সালের গ্রীষ্মে তাকে হত্যার জন্য তিনটি ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয়। ১৭ সেপ্টেম্বরে এক ঘোষণায় তিনি জানান যে, ১ অক্টোবর হতে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে পল্লি উন্নয়ন, হরিজন সেবা এবং বুনিয়াদী হস্তশিল্পের  উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করবেন। ২৬ অক্টোবর তিনি নিখিল ভারত পল্লি-শিল্প সমিতি উদ্বোধন করেন।

১৯৪১ সালের মার্চ মাসে গান্ধী-আরউইন চুক্তি হয়। এই চুক্তি অনুসারে সকল গণঅসহযোগ আন্দোলন বন্ধের বিনিময়ে সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দেওয়া হয়। ৩০শে ডিসেম্বরে তাঁর অনুরোধে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের মে মাস থেকে শুরু হয়, `ভারত ছাড়` আন্দোলন। ৮ আগস্টে তিনি বোম্বাই-এ কংগ্রেস কমিটির অধিবেশন `ভারত ছাড়` প্রস্তাবের ব্যাখ্যা দেন। এই কারণে ৯ আগস্টে তাঁকে গ্রেফতার করে পুনার আগা খান প্রাসাদে বন্দী করে রাখা হয়।

১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারিতে তিনি ২১ দিনের উপবাস শুরু করেন। মার্চের ৩ তারিখে অনশন ভঙ্গ করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ ফেব্রুয়ারিতে গান্ধীজীর পত্নী কস্তরবাই আগাখান প্রাসাদে মারা যান। ৬ মে-তে তিনি বিনা শর্তে মুক্তি পান। সেপ্টেম্বর মাসের ৯ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার বিষয়ে মুহম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে গান্ধীজীর আলাপ-আলোচনা হয়।

১৯৪৮ সালের ২০ জানুয়ারিতে দিল্লিতে গান্ধীজীর প্রার্থনা সভায় একটি বোমা নিক্ষিপ্ত হয়। তবে এতে কেউ আহত হননি। ৩০ জানুয়ারি, দিল্লির বিরলা ভবনে (বিরলা হাউস) সান্ধ্য প্রার্থনাসভায় শান্তির বাণী প্রচারের জন্য উপস্থিত হওয়ার প্রাক্কালে নাথুরাম বিনায়ক গোডসে নামক একজন হিন্দু মৌলবাদী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।

তথ্য সূত্র: বাংলা বিশ্বকোষ, দ্বিতীয় খণ্ড

বাংলাদেশ সময়: ১২০২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১২
আরডি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।