ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ভারতে পেনশন ও ইনস্যুরেন্সে ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগে অনুমতি

নয়াদিল্লি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১২

নয়াদিল্লিঃ  দ্বিতীয় দফার সংস্কারের পথে এগোলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ৷ ভর্তুকিতে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার সংখ্যা বেঁধে দেওয়া, ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং বহু পণ্যের খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি (এফডিআই)-এর  অনুমোদনের পর এবার পেনশন তহবিলেও প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে অনুমোদন দিয়েছে। বৃহম্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এ অনুমোদন দেয়।



এদিন পেনশনে ২৬ শতাংশ এফডিআইয়ের অনুমতি দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এতদিন পেনশনে এফডিআই-এর মঞ্জুরি ছিল না। পাশাপাশি  ইনস্যুরেন্স ক্ষেত্রে  বিদেশি বিনিয়োগের মাত্রা ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করার বিষয়ে অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা৷ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এবিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়৷

জানাগেছে, এরপর সংসদে সরকারকে এই দু’টি বিল পাস করাতে হবে৷ কারণ, এই দুটি বিষয়ই বিধিবদ্ধ আইন অনুসারেই পরিচালিত হয়। খুচরো পণ্যে এফডিআই-এর মতো এক্ষেত্রে প্রশাসনিকস্তরে  সিদ্ধান্ত  কার্যকর করা যায় না।

এদিনের বৈঠকে কোম্পানি আইন ২০১১-র পরিবর্তনগুলিও মঞ্জুর করেছে। ইনস্যুরেন্স ক্ষেত্র মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।

এদিকে, আর্থিক সংস্কারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সদ্য ইউপিএ সরকার ছেড়ে বেরিয়ে আসা তৃণমূল মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। দলের সাসংদ সৌগত রায় বলেছেন, তৃণমূল সংসদে এর বিরোধিতা করবে।

বামদলগুলিও মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের সমালোচনায় সরব হয়েছে। সিপিআই নেতা ডি রাজা এই সিদ্ধান্তকে বেপরোয়া আখ্যা দিয়ে বলেছেন, সরকার দক্ষিণপন্থী আর্থিক নীতি গ্রহণ করেছে। সরকারের সিদ্ধান্তকে  নির্লজ্জও বলতেও পিছপা হননি তিনি।

সমাজবাদী পার্টি(এসপি) এবং বিএসপি, বিজেডিও সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। সংসদে পেনশন ও বিমায় এফডিআই সংক্রান্ত বিল পাশ করাতে লোকসভায় ভোটাভুটির সময় উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে  সাধারন সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ইউপিএ-র এসপি, বিএসপি-র সমর্থন প্রয়োজন।

প্রণব মুখার্জি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীনই পেনশনে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ এবং বিমায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন৷ সেই প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় পাঠানো হলেও, তা পিছিয়ে যায়৷

কিন্তু পি চিদম্বরম কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হওয়ার পরই এই দু’টি বিষয়ে ছাড়পত্রের জন্য উদ্যোগী হন৷ তবে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা ছাড়পত্র দিলেও বিমা ও পেনশনে এফডিআই সংক্রান্ত দু’টি বিলই সংসদে পেশ করতে হবে এবং তা পাশ করাতে হবে৷

এর প্রতিক্রিয়ায় এদিনই ফেসবুকে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করছেন মুখ্যমন্ত্রী  মমতা ব্যানার্জ ৷

তিনি মনমোহন সিং সরকারকে হটানোর ডাক দিয়ে বলেছেন, দেশ বাঁচানোর জন্য এই সরকারের যাওয়া দরকার।

মমতা লিখেছেন, বিমা ক্ষেত্রে এফডিআইয়ের মাত্রা ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করা এবং পেনশনে এফডিআই চালু করার সিদ্ধান্তে মানুষের সারা জীবনের সঞ্চয় অসুরক্ষিত হয়ে পড়বে৷ সরকার কি দেশকে বিক্রি করে দিতে চাইছে? আমাদের একজোট হয়ে এর বিরোধিতা করতে হবে৷ জনস্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সরকারকে পার পেতে দেওয়া যাবে না৷ এই সংখ্যালঘু সরকার বারবার অনৈতিক কাজ করতে পারে না৷ অনাস্থা প্রস্তাব আনা হোক৷

তিনি লিখেছেন, আমরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ মানুষের স্বার্থে আমি সরকারের অন্যান্য সহযোগী দলগুলিকেও বেরিয়ে এসে এর বিরোধিতা করতে অনুরোধ করব৷ মানুষ আপনাদের দেখছে৷দেশকে বাঁচানোর জন্য এই সরকারের যাওয়া দরকার।

এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় সরব হয়েছে বিজেপিও। বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকর বলেন, এনডিএ আমলে বিমায় বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতা করে এখন সেই কাজটাই করল কংগ্রেস।  

তার দাবি, যে সব শ্রমিক পেনশন পান, তাঁদের অধিকার এবং পেনশনের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য। কিন্তু পেনশনে বিদেশি বিনিয়োগ হলে সেই নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে এনডিএ আমলে এই ধরনের কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বটে কিন্তু সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল। এখন যদি পেনশনে বিদেশি বিনিয়োগে ছাড় দেওয়া হয়, তা হলে সরকারকে তার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন জাভড়েকর।

অন্যদিকে জেডি(ইউ) নেতা শরদ যাদবের দাবি, একের পর এক এই ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে বিদেশি পুঁজির কাছে দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে কেন্দ্র। পেনশনে বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে, অবসরকালীন ভাতা কতটা সুরক্ষিত থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরাও।

বাংলাদেশ সময়: ০০৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১২
আরডি
সম্পাদনা: আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।