ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মমতাকে দোষারোপ

তিস্তাচুক্তি করতেই হবে: জয়রাম

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১২
তিস্তাচুক্তি করতেই হবে: জয়রাম

ঢাকা: দ্রুত বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তাচুক্তি সম্পন্ন করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সে প্রতিশ্রুতি রাখতে হবে। নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিষয়ক একটি আলোচনাসভায় জয়রাম এসব কথা বলেন। এসময় তিস্তা চুক্তি নিয়ে নাম উল্লেখ না করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আঞ্চলিক দলগুলি ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সঙ্গতিহীন ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করছে। পররাষ্ট্রনীতিকে কয়েদ করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। বিষয়টি ভয়াবহ। ”
jayramfirhad-Hakim
জয়রাম আরও বলেন, “যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আমরা চাইছি যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টির (তিস্তা চুক্তি) সমাধান হোক। বাংলাদেশকে তিস্তা চুক্তি রূপায়ণ নিয়ে কথা দেওয়া রয়েছে। সেই প্রতিশ্রুতি আমাদের রাখতে হবে। ”

দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নে বাংলাদেশ যা করেছে তার প্রতিদান দেওয়া দরকার বলেও মত দেন জয়রাম রমেশ।  

কেন্দ্রিয় সরকারের থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের দু’সপ্তাহ পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রীর এই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়লেন। অবশ্য ওই আলোচনা সভায় জয়রামের মন্তব্যের সঙ্গে একমত হয়নি পশ্চিমবঙ্গের পুর ও নগোরন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “হাসিনাকে বাংলাদেশে জেতানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তিস্তা চুক্তি করতে হবে, আবার ওবামাকে জেতাতে গিয়ে এফডিআই-কে সমর্থন করতে হবে এটা হতে পারে না। এই মানসিকতা থেকেই স্পষ্ট, বিদেশি শক্তির হাতে দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে এই সরকার। ”

তিস্তা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে মতবিরোধ চলছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এবারই প্রথম সরাসরি কিছু বক্তব্য এলো।

ধারনা করা হচ্ছে, মমতা সরে যাওয়ার পর বাংলাদেশ নীতির প্রশ্নে কংগ্রেস আরও আগ্রহী হতে চলেছে, আজ অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে জয়রাম রমেশের বক্তব্যে।  

এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রান্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট আয়োজিত এই আলোচনায় বক্তা ছিলেন তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীও। জয়রামের বক্তব্যের পর দীনেশ তার প্রতিবাদ করে বলেন, “তিস্তা চুক্তি জাতীয় বিষয়। তাতে আঞ্চলিক সিলমোহর দেওয়া ঠিক নয়। ” উত্তরে জয়রাম বলেন, “তিস্তা-চুক্তিকে টেনে আঞ্চলিক বিষয় হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। ”

জয়রাম এসময় আরও বলেন, “উলফা-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গি সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ যেভাবে আমাদের সাহায্য করেছে, তার প্রতিদান না দেওয়াটা অকৃতজ্ঞতা। ”

এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গহর রিজভি। তিনি বলেন, “ভারত যদি তিস্তা এবং সীমান্ত চুক্তি রূপায়ণ করতে পারে, তা হলে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ বদলে যাবে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কও এক লাফে অনেকটা এগিয়ে যাবে। ”

উল্লেখ্য ২০১১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরেই তিস্তা-চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যয়ের আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত তা করা সম্ভব হয়নি। মমতাকে রাজি করানোর জন্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে একাধিক বার দূত পাঠানো হলেও শেষ পর্যন্ত বরফ গলেনি।

গোড়া থেকেই মমতা বলে আসছেন, যে ভাবে চুক্তির খসড়া তৈরি হয়েছে, তা রূপায়িত হলে রাজ্যকে অনেক বেশি পানি দিয়ে দিতে হবে বাংলাদেশকে। তার মতে এতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে উত্তরবঙ্গ। পরে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মমতা নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে একটি রিপোর্ট তৈরি করারও নির্দেশ দেন। তবে সে রিপোর্ট তৈরির কাজ এখনও শেষ হয়নি।

এদিকে, তিস্তা চুক্তিকে পরবর্তী নির্বাচনে একটি বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তিস্তা এবং সীমান্ত চুক্তি করতে না পারায় সরকারের উদ্বেগও রয়েছে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে টালবাহানার ফলে বাংলাদেশের ভারত-বিরোধী গোষ্ঠীর হাতই শক্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। সম্প্রতি ভারত সফরকালে পররাষ্ট্র দীপু মণিও বলেছেন, “তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশে এক চূড়ান্ত আশা তৈরি হয়েছে। ভারত যদি তা পূরণ করতে না পারে, তা হলে আমাদের সম্পর্ক খুব বড় রকমের ধাক্কা খাবে। ”

বাংলাদেশ সময় ১০৫১ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১২
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।