কলকাতা : শুভ মহালয়া। পিতৃপক্ষের শেষদিন সোমবার।
এদিন খুব ভোরে গঙ্গার বুকে পিতৃ তর্পণের মাধ্যমে দেবীপক্ষকে আবাহন করেন হাজার হাজার জনতা। গঙ্গার ঘাটে ঘাটে পুণ্যকামী মানুষের ভিড়। শোক, তাপ, দুঃখ, অমঙ্গল, অন্ধকার হরণ করে শুভ, মঙ্গল, আনন্দপ্রদানকারী ও আলোর দিশারী অসুরবিনাশিনী মা`কে হিমালয় থেকে মর্ত্যে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি চূড়ান্ত হল।
আকাশবানীতে প্রতি বছরের মতো এবারও ভোর ৪টায় বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের ঐতিহাসিক কণ্ঠে পবিত্র মন্ত্রোচ্চারণ ও বেতারবাণীকে সঙ্গী করেই চিরাচরিত প্রথায় শুরু হল বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের। এখন শুধুই উৎসবের রং ছড়ানোর অপেক্ষা। অপেক্ষা মাত্র আর কয়েক দিনের।
দুর্গা পূজার বাকি আর মাত্র পাঁচ দিন। আবহাওয়ার খামখেয়ালিতে মাঝে পরপর বেশ কিছুদিন বিক্রি-বাটায় মন্দা হলেও শেষ দিকে সোমবার মহালয়ার দিন জনজোয়ারের প্লাবনের সাক্ষী হয়ে থাকলো কলকাতার সঙ্গে গোটা রাজ্যও।
উৎসবের কেনাকাটায় মানুষের ঢল। অষ্টমীর সন্ধ্যা যেন উঠে এলো নিউমার্কেটের বুকে। লাখো মানুষ একসাথে এক জায়গায় গড়িয়াহাটে, হাতিবাগানে, বেহালায় শহরের সমস্ত দোকানে বাজারে।
চারদিকে শুধু ভিড় আর ভিড়। ফুটপাথ ছাড়িয়ে তা উপচে পড়ছে রাস্তাতেও। প্রায়ই স্তব্ধ হয়ে পড়ছে যানবাহন। এই ভিড়ের মধ্যেই চলছে হাঁকাহাকি ডাকাডাকি, দরদাম।
একদিকে বেশ কয়েকটি জেনারেটরের কান ফাটানো আওয়াজ, সঙ্গে যানবাহনের ব্যাপক হর্ন। বড় বড় দোকানের সেই জেনারেটরের কালো ধোঁয়ার মধ্যেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের ডাকাডাকি করে বিক্রি-বাটা চলছে ফুটপাথের দোকানি, হকারদের।
বুক ভরে যাচ্ছে বিষাক্ত গ্যাসে। অথচ মুখে তার ছাপ পড়তে দিলে চলবে না। হাসিমুখেই ক্রেতাদের অভ্যর্থনা জানাতে হবে তাঁদের। শারদোৎসবের মুখে এ কয়েকটি দিনই সম্বল।
সারা বছর সংসার চালানোর উপকরণ হয়তো নয়, কিন্তু অল্প কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্য তো মিলবে সেরকম বিক্রি-বাটা হলে। এটুকুই বা কম কী। তাই এখন সন্ধ্যার আলো ঝলমল পরিবেশে মানুষের ব্যস্ততা, দোকানে দোকানে শেষ বেলার ভিড় দরদাম, বেশিরভাগই ছোটো দোকান বা হকারদের ঘিরেই।
তবে দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই ভিড় বাড়ছে বড় দোকানগুলিতে। কলকাতার প্রতিটি বাজারেই এই মুহূর্তে অতি পরিচিত নানা দৃশ্য। উৎসবের আগে শেষ রোববার সেই চেনা কলকাতা। একদিকে টানাটানির সংসারে কিনতে না পারা, অন্যদিকে হই হই আনন্দ। একদিকে খুশির আমেজ অন্যদিকে বিষাদ।
কিন্তু কতটা আনন্দ আর কতটাই বা বিষাদ— আন্দাজ পেতে হানা দেওয়া গেল দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাটে। ছোট দোকানের হাতছানি এড়িয়ে বড় দোকানের কাচের দরজা ঠেলে ঢুকেও আবার বেরিয়ে এলেন সোনারপুরের বাসিন্দা ছোটোখাটো এক বেসরকারী সংস্থার চাকুরে স্বরূপ মুখোপাধ্যায়।
পুরো পরিবারকে নিয়ে এসেছিলেন দরকারি জিনিস কিনবেন বলে। কিন্তু বড় দোকানের পোশাক আশাকের দামের সঙ্গে দরে পাঁচ মিনিটও পেরে উঠলেন না। বললেন, গত বছর তো তাও কিছু কিনতে পেরেছেন। এসব দোকান থেকেই কিনেছেন। কিন্তু এ বছর আর পারছেন না। তাই এবার হকারদের কাছেই অগত্যা যাওয়া।
একই কথা বেহালার সোমনাথ সরকার, ঠাকুরপুকুরের আমান শাজ্জিদ কিংবা কসবার মল্লিকা দাশগুপ্তেরও।
কলকাতার কুমারটোলিতে শেষ মুহুর্তের ব্যস্ততা। প্রতিমা চক্ষুদান হল এই দিনটিতে। আর তার সাথে সাথে প্রতিমা চলল বাঁশে ঝুলে, ট্রাকে করে নৌকায় চেপে মন্ডপে মন্ডপে।
বাংলাদেশ সময় : ১৯২৭ ঘন্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১২
আরডি/ সম্পাদনা : সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর
[email protected]