আগরতলা (ত্রিপুরা) : ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব আরকে সিং সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সরকার অনেক দিন ধরেই দাবি করে আসছিল সীমান্তে ভারতীয় সেনা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা যাতে প্রানঘাতী অস্ত্র ব্যবহার না করে।
বাংলাদেশের সেই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে বিএসএফ জওয়ানরা প্রানঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করেছে।
কিন্তু তিনি এদিন স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন, কোন অবস্থাতেই সীমান্ত চোরাচালান বরদাস্ত করা হবে না। এক্ষেত্রে কড়া হাতে তা প্রতিরোধ করা হবে।
এদিন দুপুরে আখাঊড়া সীমান্তে দাঁড়িয়ে ভারতীয় স্বরাষ্ট্র সচিব যখন এ কথা জানাচ্ছিলেন তখন তার সাথে ছিল বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব মঞ্জুর হোসেনও।
দুই দেশের স্বরাষ্ট্র সচিবরা সোমবার আসেন ত্রিপুরায়।
ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র সচিব আর কে সিং এবং বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব মঞ্জুর হোসেন এদিন দুপুরে আখাঊড়া সীমান্ত দিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করেন।
এরআগে ঢাকা থেকে একটি হেলিকপ্টারে দুই স্বরাষ্ট্র সচিব এসে নামেন আখাউড়ার ওপারে। তারপর হেঁটে দুই স্বরাষ্ট্র সচিব আখাঊড়া সীমান্ত অতিক্রম করে এপারে আসেন। এবারই প্রথম ভারত-বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিবরা একসাথে রাজ্য সফরে এলেন।
যদিও সফরকাল ছিল খুব সীমিত। মাত্র এক ঘণ্টার মতো তারা এখানে ছিলেন। সীমান্তে দুই স্বরাষ্ট্র সচিবকে স্বাগত জানান রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক সঞ্জয় সিনহা।
আখাউড়া সীমান্তে হচ্ছে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট। গত বছর মে মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পি চিদাম্বরম এই ইন্টিগ্রেটেড চেকপোষ্টরে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। আর কে সিং এবং মঞ্জুর হোসেন এদিন এর কাজ ঘুরে দেখেন।
সাংবাদিকদের আর কে সিং জানান, আগামী বছর মার্চ মাসের মধ্যেই এই ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট তৈরির কাজ শেষ হবে।
এরপর সীমান্তেই দুইজন বৈঠক করেন। সে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য সচিব কে ভি সত্যনারায়ণ, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক সঞ্জয় সিনহাসহ রাজ্য প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা।
বৈঠক শেষে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন দুই স্বরাষ্ট্র সচিব। অনুপ চেটিয়া থেকে বর্তমান ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক সবই উঠে আসে সাংবাদিকদের সাথে কথাবার্তায়।
দুই সচিবই জানান, আগের চেয়ে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক আরও বেশি ভালো হয়েছে। বাংলাদেশে আগে যে সব ভারতীয় জঙ্গি আশ্রয় নিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে কড়া ভূমিকা নিয়েছে সে দেশের সরকার।
যার কারনে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি বাংলাদেশ থেকে অন্যত্র তাদের ডেরা সড়িয়ে নিচ্ছে। দুই দেশের সম্পর্ক উত্তরোত্তর ভালো হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন।
উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেবার বিষয়ে এখনো কিছু জানায়নি বাংলাদেশ সরকার। সোমবার সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব আরকে সিং।
তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন এই সন্ত্রাসবাদী নেতাকে শিগগিরই ভারতের হাতে তুলে দেবে বাংলাদেশ সরকার। এদিন দুপুরে আখাঊড়া সীমান্তে দাঁড়িয়ে ভারতীয় স্বরাষ্ট্র সচিব যখন এ কথা জানাচ্ছিলেন তখন তার সাথে ছিল বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র সচিব মঞ্জুর হোসেনও।
মঞ্জুর হোসেন জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যে এখনো বন্দী প্রত্যর্পন চুক্তি সই হয়নি। আগামীকাল এ বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ফের কথা হবে। সেখানে বন্দী প্রত্যর্পন চুক্তির বিষয়টি পরিপূর্ণতা পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ভারতের স্বরাষ্ট্র সচিব আর কে সিং এদিন দরাজ গলায় প্রশংসা করলেন বাংলাদেশ সরকারেরে। বললেন, বাংলাদেশ সরকার ভারতীয় জঙ্গি যারা ঐ দেশে আশ্রয় নিত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে গত চার বছর ধরে।
যার কারনে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি বাংলাদেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি জানান, এখনো বাংলাদেশে অল্প কিছু ভারত বিরোধী জঙ্গি সংগঠন রয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকায় দুই দেশের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে যে বৈঠক হবে সেখানে এখনো ঘাঁটি গেঁড়ে থাকা জঙ্গি সংগঠনগুলির নাম ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে দেয়া হবে।
বাংলাদেশ সময় : ১৯৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১২
তন্ময়/সম্পাদনা : সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর [email protected]