আগরতলা (ত্রিপুরা) : সন্ত্রাস দমনে ত্রিপুরা দৃষ্টান্ত গড়েছে। সোমবার রাজ্যে এসে এ কথাই জানালেন সিআরপিএফের মহানির্দেশক প্রণয় সহায়।
সিআরপিএফের মহানির্দেশক (ডিজি) হবার পর এ দিনই প্রথম প্রণয় সহায় রাজ্যে এলেন। মহাকরনে গিয়ে দেখা করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সাথে। তারপর সেখানে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন তিনি।
প্রণয় সহায় জানান, সন্ত্রাসবাদ দমনে সারা দেশে ত্রিপুরা ‘মডেল’। ত্রিপুরা যেভাবে সন্ত্রাসবাদ দমনে সাফল্য পেয়েছে তাকেই গোটা দেশে আজ জঙ্গি বিরোধী কর্মসূচিতে মডেল হিসাবে দেখা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ত্রিপুরার কর্মসূচিকে রোল মডেল হিসাবে গোটা দেশে ব্যবহার করছে।
প্রণয় সহায়ের এই বক্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ আগামী দু’মাস পর ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচন। অন্যদিকে জঙ্গি কার্যকলাপের তথ্যে চোখ রাখলে দেখা যাবে গত চার বছর ছিল ত্রিপুরার সব চেয়ে শান্ত সময়।
সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সবচেয়ে কম হয়েছে এই সময়ে। ফলে সিআরপিএফের মহানির্দেশকের এ দিনের এই মন্তব্য আলাদা মাইলেজ দেবে রাজ্য সরকারকে। ক্ষমতাসীন সিপিএম তাদের নির্বাচনী প্রচারে ব্যবহার করবে প্রণয় সহায়ের বক্তব্য। সন্ত্রাসবাদ দমনে সাফল্যকে রাজ্য সরকারের সাফল্য হিসাবেই দেখাবে সিপিএম।
এদিন প্রণয় সহায় বলেন, দেশের সামনে আজ বড় সমস্যা মাওবাদীরা। মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় সিআরপিএফের মোট শক্তির ৩৬ শতাংশ নিয়োজিত রয়েছ। তাছাড়া ২৮ শতাংশ সিআরপিএফ জওয়ান নিয়োজিত আছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে।
তিনি জানান, দেশের এই আধাসামরিক বাহিনীকে আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। বেশ কিছু নতুন অস্ত্র এবং প্রযুক্তি আনা হচ্ছে এই বাহিনীতে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মানববিহীন যান। যেকোন সমস্যা পীড়িত এলাকায় মাইন বা মাটিতে পুতে রাখা বিস্ফোরক খুঁজে বের করতে এই যান ব্যবহার হয়।
উল্লেখ্য, এ বছর জানুয়ারি মাসে ত্রিপুরা পুলিশ এবং টিএসআর’কে দেয়া হয় ‘প্রেসিডেন্ট’স কালার’। কোন বাহিনীকে দেয়া দেশের অন্যতম এই সর্বোচ্চ সম্মানের পোশাকি নাম ‘প্রেসিডেন্ট’স কালার’। মূলতঃ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ মোকাবিলা করে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এই বিরল সম্মান দেয়া হয়।
দেশের স্বাধীনতার পর ত্রিপুরার আগে মাত্র তিনটি রাজ্যের পুলিশ এই সম্মান পেয়েছে। সে হিসাবে গত ৬৫ বছরে ত্রিপুরা চতুর্থ রাজ্য হিসাবে পেয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট কালার’। ত্রিপুরার আগে এই সম্মান পেয়েছে পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর, এবং তামিলনাডু।
সিআরপিএফের মহানির্দেশক প্রণয় সহায় এদিন সকালে আগরতলায় আসেন। দুপুর বারোটা নাগাদ মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর হাতে শুভেচ্ছা স্মারক তুলে দেন সহায়। সি আর পি এফে যোগ দেবার আগে তিনি কাজ করেছেন ত্রিপুরা পুলিশে। রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশকের পদও সামলেছেন তিনি। ত্রিপুরায় সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যক্রমে নেতৃত্বও দিয়েছেন।
এদিকে প্রণয় সহায় যখন ত্রিপুরাকে মডেল হিসাবে বর্ণনা করছে তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগেই নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে গুলির লড়াই হয়েছে ত্রিপুরার জঙ্গিদের। ঘটনাস্থল গণ্ডাছড়া মহকুমার ভগীরথ গ্রাম। জওয়ানদের গুলিতে এক জঙ্গী আহত হয়েছে বলে খবর। অকুস্থল থেকে রক্তের দাগ দেখে এমনই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানরা।
তাদের দাবি, গুলির মুখে পালাতে বাধ্য হয়েছে জঙ্গিরা। রোববার সকালেই ঘটেছে এই ঘটনা। আর শনিবার ঐ এলাকা সফর করেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। সেখানে গিয়ে তিনি নিরাপত্তা কর্মীদের বলেছিলেন, যে শান্তি ত্রিপুরায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে।
বাংলাদেশ সময় : ১৮৪৮ ঘন্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১২
সম্পাদনা: সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর