ঢাকা: বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে বৃহস্পতিবার সকাল নিয়মমেনে ৭টা থেকে লোকসভার ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এদিন ছিল লোকসভা নির্বাচনের তৃতীয় দফার ভোট।
তবে সবার নজর ছিল ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রীর দৌঁড়ে থাকা কংগ্রেস সুপ্রিমো সোনিয়া গান্ধী পুত্র রাহুল গান্ধীর দিকে। এদিন উত্তর দিল্লিতে সোনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে হাসি-খুশি মুখে ভোট দিতে দেখা যায়। সোনিয়ার পড়নে ছিল আকাশি রঙয়ের শাড়ি আর রাহুল পড়েছিলেন সাদা পাঞ্জাবি ও কুর্তা।
এছাড়াও এদিন দিল্লি লোকসভা নির্বাচনের ৭টি আসনে হেভিওয়েট ভোটদাতাদের মধ্যে ছিলেন- উপ রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি, সদ্য সাড়া ফেলে দেওয়া দল আম আদমীর অরবিন্দ কেজরিওয়াল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিবাল, দিল্লি বিজেপি প্রধান হর্ষ বর্ধন, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অজয় মাকান ও দিল্লির কংগ্রেস প্রধান অরবিন্দার সিং লাভলী।
ভোট গ্রহণের মাত্র ২ ঘণ্টার মধ্যেই সকাল ৯টায় রেকর্ড সংখ্যক ১০ দশমিক ২ ভাগ ভোট পড়ে যায়। দিল্লি নির্বাচন কমিশনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, ভোটে এখন পর্যন্ত কোন গোলযোগের খবর পাওয়া যায়নি।
নয়াদিল্লির মর্যদাপূর্ণ আসন থেকে লড়ছেন অজয় মাকান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, কংগ্রেসের ভোটব্যাংক খ্যাত এ আসন থেকে জয়ের ব্যাপারে তিনি আশাবাদী। চারমাস আগেও এখান থেকে তিনি বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন।
দিল্লির ৭টি আসন থেকে তার দলের সব প্রার্থী জয়ী হবে বলে তিনি আশাবাদী। অজয় মাকান সাংবাদিকদের জানান, এখানে কোন মোদী হাওয়া নেই। তিনি জানান, দিল্লির আওরঙ্গজেব লেন কেন্দ্রের ৮৮ নং বুথে রাহুল গান্ধী ভোট দেন।
এদিকে আম আদমী পার্টির সুপ্রিমো অরবিন্দ কেজরিওয়াল তার বাড়ি সংলগ্ন তিলক লেন কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে বলেন, কংগ্রেস তাদের হার মেনে নিয়েছে। অপরদিকে মোদী ভাবছেন তিনি হবেন প্রধানমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার ভারতের দশটি রাজ্য এবং চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোট গ্রহণ হয়। এর মধ্যে ছিল- বিহার, ছত্তিশগড়, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, উড়িষ্যা, উত্তর প্রদেশ, আন্দামান-নিকোবর, চন্ডীগড়, লাক্ষাদ্বীপ এবং দেশের রাজধানী দিল্লি।
বিহার, ছত্তিশগড়, উড়িশা সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যে মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় ভোটগ্রহণ ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটোসাটো করা হয়েছে। নাশকতার আশঙ্কা রয়েছে এমন এলাকাগুলিতে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয় নজরদারি।
তৃতীয় দফায় ভোট হয়েছে- উত্তরপ্রদেশের হিংসা-বিধ্বস্ত মুজফফরনগরেও। দিনকয়েক আগে মোদী-ঘনিষ্ট বিজেপি নেতা অমিত শাহর বিতর্কিত প্রতিশোধ-মন্তব্য ঘিরে ফের খবরের শিরোনামে উঠে আসে মুজফফরনগর।
উত্তরপ্রদেশের এই কেন্দ্রগুলির জন্যেও বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তৃতীয় দফায় ভোটে অংশ নেন প্রায় এগারো কোটি ভোটার । ময়দানে রয়েছেন ১ হাজার ৪১৯ জন প্রার্থী।
লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি উড়িষ্যা বিধানসভা নির্বাচনেরও ভোট গ্রহণ হয়েছে। ৭০টি বিধানসভা আসনে ভোট নেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার বেশ কযেকজন সদস্য লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন।
এদিকে ভোটের দিন সাত সকালে মাওবাদী হামলায় রক্তাক্ত হয় বিহার। মৃত্যু হল ৩ সিআরপিএফ জওয়ানের। আহত আরও তিন জন। ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ দুটি জিপে করে জামুই কেন্দ্রের একটি বুথে যাচ্ছিলেন জওয়ানরা।
ভীমবাঁধ জঙ্গলে ঢোকার মুখে সওয়া লাখ বাবা মন্দিরের কাছে বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে দুই জওয়ানের মৃত্যু হয়। আহত তিনজনকে ভর্তি করানো হয়েছে মুঙ্গের সদর হাসপাতালে।
জামুই লোকসভা আসনের দিকে এবার কড়া নজর রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। এই কেন্দ্রে প্রার্থী এলজেপি প্রধান রামবিলাস পাসোয়ানের ছেলে চিরাগ পাসওয়ান। তাঁর মূল প্রতিপক্ষ বিহার বিধানসভার স্পিকার তথা জেডিইউ নেতা উদয় নারায়ণ চৌধুরী। আগেই ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছে মাওবাদীরা।
লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে বৃহস্পতিবার সব দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। এদিন দিল্লির সাতটি, উত্তরপ্রদেশের ১০টি, বিহারে ছয়টি, হরিয়ানা, উড়িষ্যা, ডিশা ও মহারাষ্ট্রে ১০টি করে, কেরালায় ২০টি, ঝাড়খণ্ডে চারটি, মধ্যপ্রদেশে নয়টি এবং ছত্তিশগড়, চণ্ডিগড়, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, লাক্ষাদ্বীপ এবং জম্মু ও কাশ্মীরের একটি করে আসনে ভোট হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১০, ২০১৪